Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বায়োমেট্রিকে ভোগান্তির শঙ্কা

আঙুলের ছাপ তৃতীয় পক্ষের হাতে যাওয়ার ভয় সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক কঠোর নির্দেশনার পরও নিবন্ধনে অর্থ আদায়

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪০ পিএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : রাষ্ট্রীয় ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন শুরু করেছে সরকার। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের এই প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য দেয়া হলেও গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। বিশেষ করে সরকারের মাধ্যমে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে করায় আঙুলের ছাপের অপব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অনেকেই। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে বিতর্ক। এতে ভীত হয়ে কেউ কেউ সিম নিবন্ধন না করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছেন। এদিকে যারা সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন তাদেরও শিকার হতে হচ্ছে নানা ভোগান্তির। সিম নিবন্ধনে কোনো টাকা আদায় না করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কঠোর নির্দেশনা, এমনকি প্রয়োজনে জরিমানা করার কথা বললেও বাস্তবে তা কাজে আসছে না। সারাদেশেই রেটেইলাররা বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এছাড়া অসংখ্য গ্রাহক নিবন্ধন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোন অপারেটরদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র থেকে তিন-চারবারও ফিরেও এসেছেন।
নিরাপত্তার কথা বলে গতবছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সকল সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। বিটিআরসি’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেড় কোটির বেশি গ্রাহক বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাকি ১১ কোটি গ্রাহককে তাদের সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। মোবাইল অপারেটরদের কাছে আঙুলের ছাপ কেন দিতে হবে Ñ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রশ্ন তুলে অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, আঙুলের ছাপ অনলাইনে যাচাই করা হচ্ছে, কোথাও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর বিরোধিতা করছেন অনেকে। আরিফুজ্জামান তুহিন নামে একজন গ্রাহক এই বিরোধিতা করে লিখেছেন, আমাদের এখানে আঙুলের ছাপ বাইরে চলে যেতে পারে। আমি কোনোভাবেই চাইব না যে আমার আঙুলের ছাপ আমি একটি বেসরকারি কোম্পানির কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বা তার ডিভাইসে দেব, কারণ এই আঙুলের ছাপ নানাভাবেই ব্যবহার করা হতে পারে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে একমাত্র পাকিস্তানে সিম নিবন্ধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এই পদ্ধতিতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তুহিন লিখেছেন, ক্রমাগত তালেবান হামলা ঠেকানোর জন্য ও জঙ্গিদের পাকড়াও করার জন্য পাকিস্তানে এটি দরকার হয়েছিল। বাংলাদেশেও কি একই কারণে?
গালিব নামের একজন গ্রামীণফোন গ্রাহক বলেন, মানুষের আঙুলের ছাপ, চোখের রেটিনা এবং ডিএনএ’র মতো তথ্য একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ। এর মধ্যে আঙুলের ছাপ একটি বেসরকারি কোম্পানির কাছে চলে যাওয়া কি নিরাপদ? তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো এটিও যদি সরকারের পক্ষ থেকে করা হতো তাহলে মানুষের মধ্যে কোনো ভীতি কাজ করত না।
বায়োমেট্রিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক করা কয়েকজন অন্য দেশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেছেন, ভারতে সিম পাওয়া কঠিন বিষয়। কিন্তু যদি পাসপোর্টের ফটোকপি দেয়া হয় তাহলে সিম দেবে। সিঙ্গাপুরে পাসপোর্টের একটি স্ক্যান কপি দিলে সঙ্গে সঙ্গে সিম দেবে। ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে সিম কেনার ক্ষেত্রে অনলাইনে একটি ফরম পূরণ করলেই সিম দেয়া হয়। তারা বলেন, বাংলাদেশের সব পক্ষের ওপর নিরঙ্কুশ নজরদারির জন্যই এই ব্যবস্থা। এই বিতর্কের বিষয়ে বাংলালিংকের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমাদ বলেন, যে তথ্যগুলো আসে সব তথ্যই এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত এটা ভেরিফাই করা না হচ্ছে। ভেরিফাই হওয়ার পরে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী এগুলো হয় সংরক্ষণ করা হবে, অথবা এটা পরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ডিলিট করা হবে। তথ্য সংরক্ষণ না করে ভেরিফাই করা সম্ভব নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জাকারিয়া স্বপন নামে একজন প্রযুক্তিবিদ বলেন, এ তথ্য রাষ্ট্র ছাড়া কারো কাছে থাকাই নিরাপদ নয়। রাষ্ট্র শুধু এটা প্রটেক্ট করতে পারে বা স্টোর করতে পারে। ওই ডেটাবেজ থেকে যদি কেউ পেয়ে যায় তাহলে তো ডেফিনিটলি ক্রাইম। আঙুলের ছাপ তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গেলে নানারকম অপব্যবহার হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করেন। জাকারিয়া বলেন, এর ফলে আমার যত যায়গায় ডিজিটাল ইনফরমেশন আছে স্টোর করা আছে সব অ্যাকাউন্ট চাইলে সে নিয়ে নিতে পারে।
আবার সিম নিবন্ধনের পক্ষেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। রজিবুল হাসান নামের একজন গ্রাহক বলেন, মোবাইল ব্যবহার করে বাংলাদেশে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আর একজনের নামে অন্যজনের সিম নিবন্ধন থাকায় প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত হচ্ছে না। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে অপরাধ অনেকটা কমে যাবে। মোবাইল ফোন অপারেটর রবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নিবন্ধনের সময় কেবল জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে এটি মিলিয়ে নেন। এরপর ওই তথ্য তাদের কাছে সংরক্ষিত থাকে না। তাই গ্রাহকদের আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রিটেইলার পর্যায়ে এটা সংরক্ষণের কোনো সুযোগ নেই। তবে অপারেটর লেভেলে এটা সম্ভব হতে পারে যদি আলাদা করে কেউ করে। অপারেটরদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা এটা সংরক্ষণ না করে।
গ্রাহক ভোগান্তি : বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। নিবন্ধন করতে গিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের। সম্পূর্ণ বিনা খরচে নিবন্ধন করানোর নির্দেশ দেয়া হলেও এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে রিটেইলাররা ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি নিবন্ধনের জন্য অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর মতিঝিলের গ্রামীণফোন সেন্টারে নিবন্ধন করতে গিয়ে গালিব নামের এক গ্রাহকের কাছ থেকে ১০টি আঙুলেই ছাপ নেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এছাড়া যমুনা ফিউচার পার্ক সেন্টারে গত সপ্তাহে সোহাগ নামের একজন গ্রাহক নিবন্ধন করতে গেলে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে একাধিক বার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সরওয়ার আলম নামের একজন গ্রাহক মতিঝিলের বাংলালিংক কাস্টমার সেন্টারে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও নিবন্ধন করাতে পারেননি। সিম নিবন্ধনে সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই রিটেইলাররা টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গতকালও নেত্রকোনা ও ঠাকুরগাঁওয়ের একাধিক রিটেইলার টাকা আদায় করছেন বলে বিভিন্ন অপারেটরের গ্রাহকরা অভিযোগ করেন। যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, কারো কাছ থেকে নিবন্ধনের জন্য টাকা আদায় করা যাবে না। অর্থ আদায় করলে সংশ্লিষ্ট রিটেইলারের রিটেইলারশিপ বাতিল এবং জরিমানা করা হবে বলেও জানান। গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবির পক্ষ থেকে টাকা আদায় না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • MD BASHAR ১ মার্চ, ২০১৬, ৭:২২ এএম says : 0
    নিরবাচনের কারন দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পএ সংশোধন off করে দিয়েছে ,কিশোরগনজ জেলা নিরবাচন অফিস ।ঐ অফিসে কমরত অফিস সহকারি ,কবির হোসেন সবাইকে একই জবাব দেন নিরবাচনের আগে কিছুই করতে পারব না আপনারা যা ইছছা করেন।এখন আমাদের সরকারের কাছে দাবী জানাতে চাই বাংলাদেশের সব জেলায় যদি কাজ করতে পারে তাহলে এই অফিস করতে পারবে না কেন।ঐ জেলায় কি কোন সরকারি চাকুরিজীবি কি নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Nahid Chowdhury ১ মার্চ, ২০১৬, ১:০৭ পিএম says : 0
    জরিমানা শুধু উনাদের মুখেই শুনি ! কার্যকর হতে দেখি নাই । আমাদের এলাকাতেও নিবন্ধনে চার্জ নেয়া হয় । ১২১ এ জানিয়েও কোন ফল পেলাম না ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmud Hasan ১ মার্চ, ২০১৬, ১:০৯ পিএম says : 0
    এ বিষয়টা আমার কাছেও বিপদ বিপদ মনে হচ্ছে.সুতরাং আমি এর পক্ষে নই.
    Total Reply(0) Reply
  • Masud ১ মার্চ, ২০১৬, ১:০৯ পিএম says : 0
    সত্যিই এ বিষয়টা নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ খুব টেনশনে আছি
    Total Reply(0) Reply
  • Balai Acharjee ১ মার্চ, ২০১৬, ১:৪০ পিএম says : 0
    স্যার আমার আদাব নিবেন। আসলেই আমরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সিম নিবন্ধন করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছি। আমি নিজেও চার পা঳চদিন গ্রামীণ ফোন সেন্টার কেয়ারে লাইন ধরেও নিবন্ধন করার কোন সুযোগ না পেয়ে অবশেষে প্রাইভেটভাবে সিম নিবন্ধন করার জন্য যাই। কিন্তু সেখানে গেলে ওরা বলে নেট নাই, এখন সময় নাই ইত্যাদি িইত্যাদি বলে এরিয়ে দেন। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে সিম নিবন্ধন করানো থেকে সরে এসেছি। যদি আমার পুরাতন সিম বন্ধ হয় তাহলে কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করিব। আমার সিম সাবেক নিবন্ধীত করা আছে।েএখন দেখতে চাই আমার সিম কিভাবে বন্ধ হয়। যদি সিম বন্ধ হয়েই যায় তাহলে মোবাইলই ব্যবহার করব না। স্যার, আমার লেখায় ভুলত্রুটি হয়ে থাকতে পারে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।
    Total Reply(0) Reply
  • দোলন, খান খানা পুর, রাজবাড়ী ১ মার্চ, ২০১৬, ৬:৪৪ পিএম says : 0
    রিটেইলাররা গ্রামে-গন্জে প্রায় জায়গাতে ১০ টাকা করে প্রতিটি নিবন্ধনের জন্য অর্থ আদায় তো করছেই আর গ্রাহক ভোগান্তিও চরমে। জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে নিবন্ধন করে যদি কোন লাভ না হয়, তাহলে জাতীয় পরিচয়পত্রকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। তাই গ্রাহকরা এ ধরণের পদক্ষেপকে দূরঅভিসন্ধিমূলক, একটা ব্যাবসায়িক ধান্ধা বা তামাশা বলে গণ্য করছে। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলকে অনুরোধ করছি এমন পদক্ষেপ নিন যাতে গ্রাহকে ভোগান্তি পোহাতে না হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বায়োমেট্রিকে ভোগান্তির শঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ