Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে

ড. ইউনূস মাহফুজ আনাম ও মতিউর রহমানকে উদ্দেশ্য করে সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৯ এএম, ১ মার্চ, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তারা বসে আছে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করতে। তাদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। তারা আশায় আছে অসাংবিধানিক পন্থায় কেউ আসবে। কিন্তু বাংলাদেশে আল্লাহর রহমতে তা হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না।
দশম সংসদের নবম অধিবেশনে গতকাল সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো তৎপর রয়েছে। তাদের ইচ্ছা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে যদি অগতান্ত্রিক কিছু আনা যায়, তবে তাদের কপাল খুলবে। এজন্যই তারা ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু বাংলাদেশে আর তা হবে না।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এখনো বসে আছে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করতে। কোনো রকমে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অসাংবিধানিক সরকার এলে তাদের কপাল খুলবে, সেই ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। তাদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি।
নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন। উনার দেওয়া তালিকা নিয়ে একজন সম্পাদক লোক জোগাতে নেমেছিল, কিন্তু কেউ আসেনি।
ড. ইউনূসকে ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ভদ্রলোককে আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা করতে দিয়েছিলাম। ব্যাংকের এমডি পদ আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। আইন লঙ্ঘন করলেন, মামলায় হারলেন, আর সব দোষ শেখ হাসিনার। এমডি পদ হারানোর ক্ষোভ পড়ল গিয়ে পদ্মা সেতুর ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। এখনো সেই প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। একটি এমডি পদ হারানোর ক্ষোভের আগুনে জ্বললো আমাদের বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার পেয়েও একটি এমডির পদ ছাড়তে পারেন না। ওখানে কী মধু আছে? এত বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তবে মর্যাদাটা কোথায় থাকল? অনেকে ভেবেছিল, বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে বাংলাদেশ চলতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। এ আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের এই অগ্রগতি রুখতে পারবে না।
মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনামকে ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জে. আমিন ও ব্রিগেডিয়ার বারীর স্টাফ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে তার পত্রিকা যতকিছু লিখেছে সেগুলো নাকি ডিজিএফআই সাপ্লাই দিয়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে লেখা থাকে নির্ভীক সাংবাদিকতা। আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে। এই দুটো পত্রিকা হয় ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে, নতুবা মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে জড়িত ছিল। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকলে অসত্য সংবাদ ছাপাবে কেন? ব্রিগেডিয়ার আমিন ও বারীর চোখের আলো হয়ে ছিল ওই দুটি পত্রিকা। তাদের কাজই হলো দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, রাজনীতি করতে চাইলে, ক্ষমতায় যেতে চাইলে তারা রাস্তায় নামুক, জনগণের কাছে যাক। রাজনীতি করার এত শখ, ক্ষমতায় যাওয়ার এত শখ থাকলে মানুষের ভোট নিয়ে আসুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটো পত্রিকায় ২০টি বছর ধরেই আমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। ভালো কিছু লিখলেও শেষের দিকে আমাকে খোঁচা দেবে। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাস হারাব। তবে পড়ব কেন?
এক-এগারোর ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত আসে। আমি তো সরকারে ছিলাম না, বিরোধী দলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেফতার করা হলো। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ডিজিএফআইয়ের ব্রিগেডিয়ার বারী ও আমিনের হাত থেকে ওই সময় কেউ-ই রেহাই পায়নি। ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্যতা ছিল তা কি প্রথম আলোর মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামরা দিতে পারবেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। সেই ভুলের খেসারত দেশের জনগণ দেবে না। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদেরই দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তারা দাঁড়াতে পারছে না। কারণ দেশের মানুষ জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি জঙ্গি দল। বিএনপি-জামায়াত জোট একটি জঙ্গি সংগঠন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এরা এখনও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। যেই হত্যা, খুন, অস্ত্র, বোমাসহ ধরা পড়ছে তাদের সবার গোড়া খুঁজলে দেখা যাচ্ছে আগে হয় ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রদল করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে রক্ষা করছেন।
শিশু হত্যাকারীদের যে দেশের আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে সেই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সামান্য কারণে শিশু হত্যা করে তারা সমাজের ঘৃণ্য জীব। এর আগে কয়েকজন শিশু হত্যাকারীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- হয়েছে। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ জানাব, শিশু হত্যাকারীদের যেন তারা সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়। যাতে ভবিষ্যতে কেউ শিশু হত্যার সাহস না পায়। পাড়া-মহল্লায় শিশু নির্যাতন বন্ধে দেশের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই শিশু হত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতো ছোট ছোট শিশুদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর জীঘাংসা কেন? এসব খুনীরা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট জীব, এদের প্রতি আমি ঘৃণা জানাই।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের প্রতি অনুরোধ জানাব, শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনীরা কেউ পালিয়ে থাকলে তাদের ধরিয়ে দিন, সরকার তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে। সম্প্রতি গ্যাসের বিস্ফোরণে পুরো একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে রয়েছেন একটি মাত্র দিয়াশলাইয়ের কাঠি খরচ হওয়ার ভয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে রাখেন। একটি কাঠির চেয়ে জীবনের মূল্যে বেশি না। আর যেখানে গ্যাসের চুলা জ্বলবে সেখানের জানালার দরজা খুলে রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে। তাই যাদের একটি বাড়ি দরকার, তারা ২-৩টা গাড়ি কিনছে। এসব কারণেই যানজট বাড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ আমরা গড়বো, উন্নত করবো, আমরাই পারব Ñ এটা মনে রেখেই সবাইকে চলতে হবে। আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা পারবো না কেন? আমরা কেন পরমুখাপেক্ষী হব? আমরা সবাই মিলে কাজ করলে দেশ দরিদ্র থাকার কথা না। কতটুকু দেশকে দিতে পারলাম, দেশের জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম, এটাই আমার রাজনীতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ কথা বলতে পছন্দ করি। এখন ৩২টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছি। আর এসব টিভিতে সমানভাবে কথা বলে যাচ্ছেন, আবার বলছেন কথা বলার স্বাধীনতা নেই! সত্য-মিথ্যা দিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে সবাই কথা বলেই যাচ্ছেন। কাউকে তো বাধা দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করি না। সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। মিডিয়ার জন্য আমি যত সুযোগ দিয়েছি, অতীতে কেউ দেয়নি। কিন্তু আমিই সবচেয়ে বেশি ভিকটিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। স্বাধীনতা রয়েছে বলেই টেলিভিশনে টকশোতে সত্য-মিথ্যার মাধুরি মিশিয়ে কথা বলতে পারেন। এতো কথা বলেন কাউকে কোনদিন বাধা দেওয়া হয় না। কিন্তু সেইসব টকশোতেই বলা হয় দেশে নাকি কথা বলার স্বাধীনতা নেই।
বাংলাদেশের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর কারাদ- Ñমন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন
আমাদের বিশেষ সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে কোনো বিমানের অনুপ্রবেশে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ- ও ২ কোটি টাকা অর্থদ-ের বিধান রেখে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া বিপজ্জনকভাবে বিমান চালালে পাইলটের জেল-জরিমানা বাড়ানো, দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি বা তার পরিবারকে সহায়তা করাসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল আইনে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, নতুন আইনে বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) প্রযোজ্য নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। ওই নীতিমালার পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রস্তাবিত আইনে বেশ কিছু শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে বিমান নিয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদ- এবং ন্যূনতম দুই কোটি টাকা অর্থদ-ে দ-িত হবেন। কোনো পাইলট বা দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি বিপজ্জনকভাবে বিমান চালালে পাঁচ বছরের কারাদ- এবং এক কোটি টাকা অর্থদ-ে দ-িত হবেন। পাইলটের কারণে অন্য কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে এই শাস্তি পেতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু দেওয়ানি শাস্তি রয়েছে, যেগুলো বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৬০ সালের দ্য সিভিল অ্যাভিয়েশন অধ্যাদেশ প্রণয়নের পর বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিমান খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং অধ্যাদেশটি যুগোপযোগী করতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, খসড়া আইনে ফ্লাইটে নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এটা আগে ছিল না। বেসামরিক বিমান হিসেবে রাষ্ট্রীয় বিমানের ব্যবহার, বেসামরিক বিমান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বেআইনি আচরণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদান, বেসামরিক বিমান পরিবহনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তা নিয়ন্ত্রণের বিধানগুলো নতুন আইনে নিয়ে আসা হয়েছে।
এছাড়া শিকাগো কনভেনশনের পরিশিষ্ট এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অন্যান্য আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসারে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সেবার জন্য আবশ্যক সুরক্ষার মান নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে খসড়ায়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যেকোনো এয়ারলাইন্স ও অপারেটর এবং অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি এয়ারলাইন্সে বিমান পরিদর্শন করতে পারে সে জন্য বিমান পরিদর্শনের অধিকারসহ দু’টি ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
খসড়া আইনে বিদেশি রাষ্ট্র থেকে কোনো বিমান লিজের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হলে অথবা বাংলাদেশ হতে কোনো বিমান লিজের মাধ্যমে অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের বিমান সংস্থা ব্যবহার করলে ওই বিমানের নিরাপত্তা ও দায়-দায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে বলেন শফিউল আলম।
পেশাগত সনদ পাবেন ধাত্রীরাও
নার্সিং পেশার পাশাপাশি ধাত্রীবিদ্যায় (মিডওয়াইফারি) ডিগ্রিধারীদেরও পেশাগত সনদ দেবে সরকার।এ লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ২০১৬’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, সামরিক শাসনামলে প্রণীত ‘বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিনেন্স ১৯৮৩’ রহিত করে কিছু সংশোধনীসহ এ আইন করা হচ্ছে।নতুন আইনে নার্সিংয়ের সঙ্গে ধাত্রীবিদ্যা (মিডওয়াইফারি) যুক্ত করা হচ্ছে জানিয়ে শফিউল বলেন, এ আইন পাস হলে ২৪ সদস্যের কাউন্সিল গঠন করা হবে। নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যায় যারা ডিগ্রি নেবেন এই কাউন্সিল তাদের স্বীকৃতি দেবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) মতো এটা কাজ করবে। বিদেশ থেকে যারা নার্সিং ও ধাত্রীবিদ্যায় ডিগ্রি পাবেন, এ কাউন্সিল তাদেরও স্বীকৃতি দিতে পারবে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, নার্স, ধাত্রী ছাড়াও তাদের সহযোগীদের সরকারের কাছে নিবন্ধন করতে হবে।
এই আইনে নিবন্ধন ছাড়া নার্সিং বা ধাত্রী বা সহযোগী কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভুয়া পরিচয় দিয়ে কেউ এ কাজ করতে পারবে না। স্বীকৃতি ছাড়া নিজেকে নার্স, ধাত্রী বা সহযোগী হিসেবে পরিচয় দিলে তিন বছর কারদ-, এক লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
নীতিমালাবহির্ভূত কাজ করলে নিবন্ধন বাতিল করে নিবন্ধন তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে সরকারের কাছে আপিল করতে পারবেন। এছাড়া ভুয়া পদবি ব্যবহার করলে এক বছরের কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (চতুর্থ সংশোধন) আইন অনুমোদন
সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্র প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে। দরপত্রে প্রাক্কলনের ১০ শতাংশ কমবেশি গ্রহণযোগ্য সীমা ধরে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এ সীমা পার হলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে। ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাফতরিক প্রাক্কলিক মূল্য থেকে বেশি হারে কম বা বেশি দরপত্র মূল্য দেখানোর প্রবণতা রোধে আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। এ জন্য কোন দরদাতা দরপত্রের দাফতরিক প্রাক্কলনের ১০ ভাগ কম বা বেশি মূল্য দরপত্রে উল্লেখ করতে পারবে। এর বেশি করলে দরপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
সীমিত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় অভ্যন্তরীণ ক্রয়ের সীমা ২ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে বলেও জানান শফিউল আলম।
সংশোধিত খসড়া আইনের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাবের উপর গুরুত্ব প্রদানে ঢালাওভাবে ৯০ ঃ ১০ অনুপাত প্রয়োগের নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এক্ষেত্রে কখনও কখনও অনুপাতে কমবেশি করা হয়, এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়। ওয়েটেজটা যদি বেশি কারিগরির দিকে দেয় তবে আর্থিক ক্ষতি হয়। এটা যাতে ব্যালেন্স করা হয়, এজন্য নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রস্তা করা হয়েছে।
আরো দুটি থানা ও একটি পৌরসভা গঠন
নতুন করে আরো দুটি থানা ও একটি পৌরসভা গঠন করেছে সরকার। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নরসিংদী জেলার মাধবদী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রকে থানায় উন্নীতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে নিকার। আগে এ তদন্ত কেন্দ্র নরসিংদী সদর থানায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি বলেন, এছাড়া পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার মহিপুর তদন্ত কেন্দ্র থানায় উন্নীতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। কুয়াকাটা এলাকা নিয়ে নতুন এ থানাটি গঠিত হবে।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরে পৌরসভা স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদনের কথা জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, সেখানে ২০১৪ থেকে পৌরসভা আছে। এখন সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ