পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : বাংলাদেশে প্রভাব বলয় বিস্তারে এশিয়ার দুই পরাশক্তি গণচীন এবং ভারতের মধ্যে অনেক দিন থেকেই ঠা-া লড়াই চলছে। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য এ ক্ষেত্রে ভারত স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা এগিয়ে আছে। কিন্তু গণচীনের ভৌগলিক বিশালতা, সর্বাধিক জনসংখ্যার কারণে এবং ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশের নৈকট্যের কারণে চীন কূটনৈতিক ভাবে প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন বিশে^র দ্বিতীয় অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসাবে উত্থিত হওয়ার পর চীন ট্র্যাক-২ ডিপ্লোম্যাসির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে চীন মেগা প্রজেক্টগুলির অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, এ ব্যাপারে গণচীন ভারতের কাছে দুটি ক্ষেত্রে মার খেয়েছে। একটি হলো, সুন্দর বনের অদূরে নির্মিতব্য রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। অপরটি পটুয়াখালী জেলার পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ।
ভারতের রামপাল জয়
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে প্রকাশ, চীনকে পরাস্ত করে খুলনায় কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বড় একটি কাজ পাচ্ছে ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড (বিএইচইএল)। ১৬০ কোটি ডলারের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি শিঘ্রই স্বাক্ষরিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খুলনায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা চলছিল ভারত ও চীনের মধ্যে। সেই লড়াইয়ে চীনকে পরাস্ত করেছে ভারতের বিএইচইএল।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে সাম্প্রতিক সময়ে সফলতা দেখিয়েছে চীন। এর মাধ্যমে তারা এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের একটি প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে তারা খুলনায় এই প্রকল্পের কাজ পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারত তাদেরকে সফল হতে দেয় নি। ভারত বিশ্বাস করে, চীন ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় যে ‘মুক্তোর মালা’ গড়ে তুলছে বাংলাদেশ তার অংশ। এই মুক্তোর মালা পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দর থেকে আফ্রিকার জিবুতি পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইরান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে চীনের হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেডের।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৮,৫৬০ কোটি টাকা। টেকনিক্যাল কারণে গণচীন এই প্রকল্প হারিয়েছে বলে বলা হয়েছে।
সোনাদিয়াও চীনের হাত ছাড়া
অপর একটি খবরে প্রকাশ, কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প অতি সন্তর্পণে হিমঘরে চলে গেছে বলে অত্যন্ত উচ্চ মহল থেকে জানা গেছে। তার বদলে এখন পটুয়াখালী জেলার পায়রায় দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সোনাদিয়া সমুদ্র বন্দর পরিকল্পনা পরিত্যাক্ত হওয়ার ফলে গণচীন বাংলাদেশে এমন একটি প্রকল্প হারালো যেটি বাণিজ্যিকভাবে বিশাল এবং রণ কৌশলগত ভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল গণচীনের। পক্ষান্তরে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রাথমিক কাজ অর্থাৎ সম্ভাব্যতা রিপোর্ট প্রণয়ন ও আনুষঙ্গিক কাজ ভারত পেয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে চীন একদিকে রামপাল হারালো এবং অন্যদিকে সোনাদিয়াও হারালো। বিকল্প হিসাবে পায়রা বন্দরের কাজ থেকেও বঞ্চিত হলো। বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছাড়াও সোনাদিয়ার যেমন ছিল সামরিক গুরুত্ব তেমনি পায়রা বন্দরেরও সামরিক গুরুত্ব ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে। মনে হচ্ছে যে, ভারত মহাসাগরের এই অঞ্চল অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের কৃষ্ণ জল রাশির রাজনীতিতে ভারত চীনকে আউট স্মার্ট করছে।
বর্তমান সরকারের প্রতি
ভারতের পূর্ণ সমর্থন
বিগত সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় লোক সভায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতায় জয় লাভের পর একটি মহল, এমনকি বিরোধী শিবিরেরও একটি অংশ, এই মর্মে বিভ্রান্ত হয়েছিল যে, নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনে জিতলে বর্তমান সরকারের প্রতি বিগত কংগ্রেস সরকার যে সমর্থন দিয়েছিল সেই সমর্থন আর থাকবে না। নরেন্দ্র মোদির সরকার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা না করলেও কংগ্রেসের মতো সর্বাত্মক সমর্থন দেবেনা। কিন্তু এই ধারনা ধীরে ধীরে ভ্রান্ত প্রমাণিত হচ্ছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ২ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। এই ২ বছরে মোদি সরকার ধীরে ধীরে বর্তমান সরকারের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। এর সর্বশেষ প্রকাশ ঘটেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মন্তব্যে।
গত ৪ই ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব ধরনের সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত সন্ত্রাস দমন ও উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাবে নয়াদিল্লি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে এ তথ্য। এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ভারত সফররত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এ সময় সুষমা এ মনোভাব ব্যক্ত করেন। সন্ত্রাসবিরোধী সেমিনারে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে ভারতে যান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সাক্ষাত্ কালে শেখ মুজিবের অসমাপ্ত জীবনীর হিন্দি অনুবাদ করা হচ্ছে বলে শাহরিয়ার আলমকে অবহিত করেন সুষমা স্বরাজ। শাহরিয়ার আলম বলেন, গত বছর জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে যে সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে, তা বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ।
সব পেয়েছে ভারত
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশ এক তরফা ভাবে ভারতে সব কিছুই দিয়ে দিচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে যা কিছু চেয়েছিল তার মধ্যে নিন্মোক্ত ইস্যুসমুহ ছিল প্রধান।
১. ভারতের এক স্থান থেকে অপর স্থানে পণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের ভূ-খন্ডকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার। এই ব্যবহারকে ট্রানজিট না বলে করিডোর বলে আখ্যায়িত করাই হবে যথাযথ।
২. অনুরূপ ভাবে ভারতের এক স্থান থেকে অন্য স্থান অথবা পণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য ভারতকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দান।
৩. উত্তর পূর্ব ভারতের সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের জন্য বাংলাদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা।
৪. ভারতের পছন্দমতো স্থানে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ। এই ৪টি সুবিধাই ভারত পেয়েছে।
এখন উত্তর পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্য অনেক শান্ত। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন স্তিমিত। ভারতীয় পত্র-পত্রিকার মতানুসারেই বিগত ৬০ বছরে ভারত যে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি শেখ হাসিনা সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই সেই সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে ভারত।
সবশেষে গভীর সমুদ্র বন্দর
ভারতকে এক তরফা সুযোগ সুবিধা দানের সর্বশেষ ঘটনাটি হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্প পরিত্যাগ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পায়রায় ভারতের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ।
গত ৮ ই ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দি টাইমস অব ইন্ডিয়া’ একটি রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করেছে যে, বাংলা-ভারত সম্পর্ক ক্রমান্বয়েই উন্নতির দিকে যাচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ৩টি স্থানে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে পেপার ওয়ার্ক করে যাচ্ছে ৩টি দেশ। এগুলো হলো, কক্সবাজারের মাতার বাড়িতে জাপান, কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গণচীন এবং পায়রায় ভারত। টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট মোতাবেক গণচীন পাকিস্তানে নির্মাণ করেছে গোয়াদর, শ্রীলঙ্কায় হাম্বানতোলা এবং বাংলাদেশে সোনাদিয়া। এর মধ্যে গোয়াদর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, হাম্বানতোলা নির্মাণাধীন এবং সোনাদিয়া সঙ্গোপনে পরিত্যাক্ত। এর ফলে ভারত মহাসাগরে ভারতকে ঘিরে ফেলার চীনের যে পরিকল্পনা এগিয়ে যাচ্ছিল, বাংলাদেশে এসে সেটি বানচাল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পায়রা বন্দরটি ভারতীয় সমুুদ্র উপকূলের অনেক কাছে। যদি সোনাদিয়া বন্দর নির্মিত হতো তাহলে গণচীন ভারতের আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অনেক কাছাকাছি চলে আসতো।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, শ্রীলঙ্কায় নির্বাচনে রাজা পাকশের পরাজয়ের পর এই এলাকায় গণচীনের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়। এখন সোনাদিয়া বাতিল হওয়ার ফলে গণচীন এই অঞ্চলে আরেকটি মার খেল। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, কলকাতার ডায়মন্ড হারবার যেমন তীব্র জাহাজ জটে অকার্যকর হয়ে গেছে সেই একই ভাগ্য হয়তো পায়রাও বরণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন যে, সোনাদিয়া বা মাতার বাড়িতে যদি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হতো তাহলে এখানে উত্তর পূর্ব ভারত বিশেষ করে মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় সড়ক ও রেলের বিরাট অবকাঠামো নির্মিত হতো। এর ফলে বাংলাদেশেও কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু ভারতকে খুশি করতে গিয়ে বাংলাদেশ নিজের স্বার্থ বিপন্ন করল কিনা সেটিই আগামী দিনের বিবেচ্য বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।