পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : দেশের ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’-খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যুগোপযোগী উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বহুল প্রতীক্ষিত আউটার রিং-রোড নামে এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে চট্টগ্রাম মহানগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের চালচিত্র, এমনটি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আউটার রিং-রোডের চলমান নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে গত এক মাস যাবৎ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। বড়সড় যন্ত্রপাতি দিয়ে মাটি ভরাটসহ সুপরিসর সড়ক অবকাঠামো বিনির্মাণের কাজ চলছে জোরদার গতিতে।
চট্টগ্রাম শহর রক্ষায় দীর্ঘদিনের দাবি, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটনের প্রেক্ষাপটে স্মরণকালের সবচেয়ে বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে আউটার রিং-রোড। ১৭শ’ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ মেগা প্রকল্পটিতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ৭৫২ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৮২ কোটি টাকা এবং সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে ৮৬৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হচ্ছে। আউটার রিং-রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আগামী ২০১৭ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের টার্গেট রাখা হয়েছে।
নগরীর সর্বদক্ষিণ-পশ্চিমে পতেঙ্গা থেকে উত্তর-পশ্চিমে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোডটি শহর রক্ষায় একটি কার্যকর বাঁধের ভূমিকা পালন করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট উঁচু করে আউটার রিং-রোডটি নির্মিত হচ্ছে। দেশীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিঃ (এসইএল) ও ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেএনআর লিঃ যৌথভাবে প্রকল্পের কার্যাদেশ পায়। আউটার রিং-রোড নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পর্বের আগেই শুরু হয়। পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা স্টেডিয়াম পয়েন্ট পর্যন্ত ১৭.১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট প্রস্থ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৫.২ কিলোমিটার কোস্টাল রোড এবং ২.১৫ কিলোমিটার ফিডার সড়ক। বর্তমান বেড়িবাঁধকে আরও ১০ ফুট উঁচু করে সড়কটি নির্মিত হচ্ছে। এর জন্য সাগর উপকূল থেকে পর্যাপ্ত মাটি তোলার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সিডিএ’র চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এর বিনিময়ে সিডিএ চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত অপর একটি মেগা প্রকল্প বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহনের ব্যাপারে অনাপত্তি প্রদান করেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বর্তমান জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখেরও বেশি। এরমধ্যে নগরীর পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তে বিশেষত উপকূলসংলগ্ন এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। তাছাড়া সেখানে রয়েছে দেশের প্রধান জ্বালানি তেল স্থাপনাসমূহ, চট্টগ্রাম বন্দরের একাংশ, শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নৌ ও বিমান ঘাঁটি, দু’টি ইপিজেড, ভারী শিল্প, কল-কারখানা, সাইলো ইত্যাদি। সেখানকার উপকূলীয় ২০ লাখ জনগোষ্ঠিসহ এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটন খাত সম্প্রসারণ, উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে চট্টগ্রামের বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রকল্প আউটার রিং-রোডের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে হালিশহর, ফৌজদাহাট, সাগরিকা, পতেঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় উপশহর সৃজনের সুযোগ তৈরি হবে। প্রসার ঘটবে পর্যটন সম্ভাবনারও। বর্তমান বেড়ি বাঁধটিকে আরও ১০ ফুট উঁচু করে আউটার রিং-রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ও সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রকল্পে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন পতেঙ্গা থেকে বাঁধ ও সড়কটিকে এনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টোল রোডের সাথেই যুক্ত করে দেয়া হবে। ফৌজদারহাট ওভারব্রিজের পাশে টোল রোড গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যুক্ত করা হবে।
বন্দরনগরীর বাইরে থেকে আগত যানবাহনগুলোও টোল রোড ধরে এই সড়ক দিয়ে নগরীর বাইরে কোস্টাল রোডে গিয়ে উঠতে পারবে। যা পরবর্তীকালে প্রস্তাবিত কর্ণফুলী টানেলের সাথে পুরোদমে সংযুক্ত হবে। এতে করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অভিমুখী যে কোন যানবাহন মহানগরীতে প্রবেশ না করেই টোল রোড, কোস্টাল রোড ও কর্ণফুলী টানেল দিয়ে চলে যেতে পারবে। যা অনেকটা এক্সপ্রেস ওয়ের মতোই ভূমিকা পালন করবে। কোস্টাল রোড ও ফিডার রোড ছাড়াও আউটার রিং-রোড প্রকল্পটিতে একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ, ৩টি ইন্টারচেইঞ্চ ব্রিজ, ৬টি কালভার্ট ও ১১টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান বেড়িবাঁধকে আরও অন্তত ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু করে কোস্টাল রোডের ১৫.২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
আউটার রিং-রোড প্রকল্পের শহর রক্ষা বাঁধ ও সড়ক নির্মাণের পর বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-ের সূচনার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত প্রধানত উপকূলবর্তী এলাকাটি দীর্ঘকাল ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত রয়ে গেছে। নগরীর উপকূলীয় এ এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। পতেঙ্গা-হালিশহর-কাট্টলী উপকূলীয় এলাকায় বেড়ি বাঁধ রয়েছে। তবে সেই বাঁধ খুবাই নাজুকদশায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় যখন ঘনিয়ে আসে তখন এই সুবিশাল এলাকার মানুষ চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় দিন গুজরান করেন। আউটার রিং-রোড এ ক্ষেত্রে একটি কার্যকর বেড়িবাঁধ, বিস্তীর্ণ এলাকায় দুর্যোগকালীন প্রতিরক্ষা ঢাল হিসেবে কাজ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।