Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

শেষ হলো লেখক-পাঠকদের আড্ডা

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শেষ হলো পাঠক-লেখকদের আড্ডা। ভাঙলো বইপ্রেমীদের মিলনমেলা। আবারো শুরু হলো এগারো মাসের অপেক্ষা। বাংলা একাডেমীর প্রাচীন বট আর বর্ধমান হাউসের চারপাশ আজ থেকে শুরু হবে শুধু অন্ধকার। খাঁ খাঁ করবে জনমানুষের শূন্যতায়। কারণ শেষ হয়ে গেল বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের সবচেয়ে বৃহত্তর আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
আজ থেকে আবারও আগের চেহারায় ফিরবে বাংলা একাডেমী। আর কানে ভেসে আসবে না নতুন বই আর মোড়ক উন্মোচনের খবর। থাকবে না লেখক আর পাঠকের আড্ডা। আর কেউ স্টলে স্টলে খুঁজবে না নতুন বই। টানা এক মাসের মেলা শেষ করে গতকাল শনিবার ঘরে ফিরে গেলেন লেখক-প্রকাশকরা। তবে শেষ মুহূর্তের ভালোলাগা আর আনন্দের নির্যাস নিতে ভোলেননি কেউই। আর দর্শনার্থীরা অনান্য দিনের মতোই শেষ দিনেও আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে সময় কাটিয়েছেন।
সব মিলিয়ে লেখক, পাঠক, প্রকাশক আর দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল গতকালের একাডেমি প্রাঙ্গণ। অনেকেই আবার শেষ দিনের স্মৃতিটুকু ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছেন। গতকাল মেলার শেষদিন উপলক্ষে বিভিন্ন স্টলে ছিল বিশেষ ছাড়। অনেক পাঠকই এসেছেন শেষ দিনের এই বিশেষ ছাড় গ্রহণ করতে। গতকাল গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর প্রতিবেদন উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয়ে এবারে নতুন বই এসেছে ৩৪৪৪টি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৮ টাকার বই বিক্রি করেছে। গতকালের বিক্রিসহ একাডেমীর মোট বিক্রি হবে আনুমানিক ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আজ ২৯ ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য বিক্রয় যুক্ত করলে এই মেলায় সর্বমোট বিক্রয়ের পরিমাণ (বাংলা একাডেমিসহ) ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে গতবছরের তুলনায় এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা কম। বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, গতবারের বইমেলায় যেখানে ৩ হাজার ৭০০টি নতুন বই এসেছিল, সেখানে এবার প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৪৪। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ২৫৬টি বই কম এসেছে।
প্রতিবারই কবিতার বইয়ের সংখ্যা থাকে বেশি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে কবিতার বই প্রকাশের দিক দিয়ে গতবারের চেয়ে এগিয়ে এবারের বইমেলা। গতবছর নতুন কবিতার বইয়ের সংখ্যা ছিল ৮৭৭টি। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩৯টি। অর্থাৎ গতবারের চাইতে এবার ৬২টি কবিতার বই বেশি প্রকাশ হয়েছে। তবে নতুন উপন্যাস কমেছে এবছর। এ বছর গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে ৫০৩টি, প্রবন্ধ ১৯৭টি, ছড়া ১২২টি, গবেষণা ৪৫টি, শিশুতোষ ১৬২টি, জীবনী ৮১টি, ভ্রমণকাহিনী ৫৪টি, বিজ্ঞান ৫৩টি, ইতিহাস ৪৮টি, মুক্তিযুদ্ধ ১০১টি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ৪৫টি, ধর্মীয় ৩২টি, নাটক ১২টি, কম্পিউটার ৯টি, অনুবাদের বই ২৫টি, রাজনীতি ১৫টি, চিকিৎসা ২৫টি, রম্য ১৮টি, রচনাবলি ১২টি, অভিধান ৬টি এবং অন্যান্য বিষয়ের বই এসেছে ৪২১টি।
এবারের বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই দ্বিগুণ প্রকাশিত হয়েছে। গতবার যেখানে ৫৩টি মুক্তিযুদ্ধের নতুন বই এসেছিল, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১টিতে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান:
সন্ধ্যা ৬টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। বক্তব্য প্রদান করেন ইভেন্ট সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইভেন্ট টাচ ইন্টারন্যাশনালের সিইও মেজর (অব.) মাইনুল হাসান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম আকতারী মমতাজ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
শুভেচ্ছা ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা সব দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার, লেখক-বুদ্ধিজীবী, প্রকাশক, পাঠক এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণ যেভাবে গ্রন্থমেলাকে সফল করে তুলেছেন তা ভবিষ্যতে আরো সুন্দর ও নতুন আঙ্গিকে গ্রন্থমেলা বিন্যাসে আমাদের প্রেরণা দেবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমরা আজ পৃথিবীর দীর্ঘতম গ্রন্থমেলার সমাপন ঘটাতে যাচ্ছি। এত দীর্ঘ গ্রন্থোৎসবের আয়োজন আমাদের জন্য বিপুল গৌরবের ব্যাপার। এই গ্রন্থমেলা কেবল বিকিকিনির মেলা নয় বরং চেতনার অভূতপূর্ব মিলনোৎসবও বটে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় অবদানের জন্য ফরাসি গবেষক ও অনুবাদক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য ও প্রবাসী বাঙালি কথাশিল্পী মন্জু ইসলামকে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ্ পুরস্কার-২০১৫ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়। ফ্রাঁস ভট্টাচার্য অনুপস্থিত থাকায় তাঁর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন রামেন্দু মজুমদার। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকার চেক, পুষ্পস্তবক, সনদ এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য মাওলা ব্রাদার্স-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৬, ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য ভূমেন্দ্র গুহ সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশের মূলানগ পাঠ-ভূমিকা ও কবিতা গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশনস্ লিমিটেড, বুলবুল আহমেদ সম্পাদিত ইঁফফযরংঃ ঐবৎরঃধমব ড়ভ ইধহমষধফবংয গ্রন্থের জন্য নিমফিয়া পাবলিকেশন ও শেখ তাসলিমা মুন রচিত আমি একটি বাজপাখিকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম গ্রন্থের জন্য পাঠসূত্র-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৬, ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৬ এবং ২০১৬ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সময় প্রকাশন, মধ্যমা পাবলিকেশন ও জ্যার্নিম্যান বুকস্কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৬ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সকল প্রকাশককে ২৫ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিসরের দিক থেকে ছিল এ যাবৎকালের বৃহত্তম মেলা। এই মেলায় বিপুল মানুষের সমাগম দেখে অনুধাবন করা যাচ্ছে মুদ্রিত বইয়ের আবেদন কখনো শেষ হবার নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেষ হলো লেখক-পাঠকদের আড্ডা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ