পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : স্বস্তির ইজিবাইক এখন নগরবাসীর যন্ত্রণার কারণ। বছর সাতেক আগেও নগরীতে চলাচলের অন্যতম মাধ্যম ছিল প্যাডেল রিক্সা। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে রাস্তায় আবির্ভাব ঘটে ইজিবাইক নামের ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা। এগুলো আমদানি হয় চীন থেকে। সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্বল্প ভাড়ায় যাতায়াতের কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এটি।
নগরবাসী বেশ স্বস্তি অনুভব করে। মালিকদের আয়ও ভাল হতে থাকে। এমনটি দেখে উৎসাহী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকে পড়ে এটাকে ভাল আয়ের মাধ্যম মনে করে। প্রতিদিন আয় হয় বলে। শুরু হয়ে যায় এই ইজিবাইক নামক বাহনটি রাস্তায় নামানো। দশ বিশ করতে করতে সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় হাজার হাজার। এমন মানুষ আছে যে কখনো সাইকেলের প্যাডেল ধরেনি। সেও ইজিবাইকের চালক হয়ে যায়। শুরুর দিকে ইজিবাইক চলাচল নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি সিটি কর্পোরেশন, বিআরট্এি কর্তৃপক্ষ। সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সিটি কর্তৃপক্ষ একটি আয়ের উৎস হয়ে দেখা দেয়। লাইসেন্স থেকে ভাল রাজস্ব পেতে থাকে। রাস্তার তুলনায় বাইকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয় বিড়ন্বনা। দেখা দেয় যানজট। রিক্সা ইজিবাইক আর মানুষের চলে টক্কর। বিদ্যুৎ বিভাগ কপাল কুচকায়।
ইজিবাইকের ব্যাটারী চার্জের জন্য বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে ওঠে চার্জের গ্যারেজ। ইজিবাইক আমদানির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে তৈরী হতে থাকে। নগদ ও কিস্তিতে বিক্রি চলে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার, মনিচত্বর, লক্ষ্মীপুর, তালাইমারী, গোরহাঙ্গার মোড়, কোটচত্ত্বর, কাশিয়াডাঙ্গা, বিনোদপুর, কাটাখালিসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা নামায় যানজট তীব্র আকার ধারন করে। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকা আর যাত্রীর চেয়ে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চালকরা গাড়ি নিয়ে রাজপথ থেকে গলিপথে পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করতে থাকে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ হিমশিম খায়। লাঠি হাতে তাড়া করে ফিরে এসব বাহনকে। ট্রাফিকের লাঠির বাড়িতে অনেক ইজিবাইকের পেছনে লাইট ভেঙ্গেছে। চ্যাকা-ব্যাকা হয়ে গেছে। এরিমধ্যে অন্য সংগঠনের মত ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এর নামে মোড়ে মোড়ে শুরু হয় চাঁদাবাজি। মোটা অংকের তহবিল আসে। আর এর ভাগও চলে যায় বিভিন্ন স্থানে। ফলে সবকিছু হয়ে যায় নিয়ন্ত্রণহীন। এক পর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স নেবারও প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে সিটি কর্তৃপক্ষের হিসাবের সাথে বাস্তবের মিল নেই।
ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার পাশাপাশি গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত যোগ হয়। ব্যাটারী চালিত রিক্সা। সাধারণ রিক্সার সাথে মটর লাগিয়ে বানানো হয় দ্রুতগতির বাহন। প্যাডেলে নয় যন্ত্র ঠেলে নিয়ে যায় রিক্সাকে। গতি আরো বাড়ানোর জন্য কোন কোনটায় লাগানো হয় ম্যাগনেট। এক দুই করতে করতে ঝাঁকে ঝাঁকে নামতে থাকে ব্যাটারী চালিত রিক্সা। এদের দাপটে কোণঠাসা হয় পায়ে চালিত রিক্সা। পায়ে ঠেলা রিক্সায় যন্ত্র লাগিয়ে গতি বাড়ানোর ফলে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। বেড়ে যায় দু’ঘর্টনা। ইজিবাইক আর ব্যাটারী চালিত রিক্সা দুর্ঘটনায় আহত নিহতের সংখ্যা কম নয়। ওড়না চাকায় পেঁচিয়ে ইজিবাইকে আর নিয়ন্ত্রণ হারানো ব্যাটারী রিক্সা দুর্ঘটনায় নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান পুলিশ কমিশনার রাজশাহীতে যোগ দেবার পর ব্যাটারী চালিত রিক্সা বন্ধের উদ্যোগ নেন। সময় বেঁধে দেন। প্রতিবাদে এর মালিক শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘেরাও করে। তাদের নেতৃবৃন্দ আশস্ত করেন বিষয়টা দেখবেন। এরপর পরই গড়ে ওঠে ব্যাটারী চালিত রিক্সা শ্রমিকলীগ। পিছু হটে পুলিশ প্রশাসন। ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশন হাজার পাঁচেক রিক্সার লাইসেন্স দিয়ে দেয়। শুরু হয় সংগঠনের নামে চাঁদা আদায়। প্রথমে রিক্সা গতি কমানোর নামে আদায় শুরু হয় একশো পয়ষট্টি টাকা। সংগঠনের সদস্য হোক আর না হোক প্রতিমাসে আদায় করা হতে থাকে মাসিক দশ টাকা করে। অবস্থা ভয়াবহ দেখে সিটি কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সমিতির আশীর্বাদে এসব রিক্সার সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্তৃপক্ষ গত বছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাধারণ সভায় এসব যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু না মানায় সম্প্রতি সিটি কর্তৃপক্ষ এসব রিক্সা থেকে ব্যাটারী খোলার অভিযানে নামে। গোটা দশেক খোলার পর খবর যায় সমিতি কার্যালয়ে। নগর ভবনের সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ। যানজট ছড়িয়ে পড়ে নগরজুড়ে। পরে দশদিন সময় বেঁধে দিয়ে খুলে নেয়া ব্যাটারীগুলো ফেরত দেয়া হয়।
ব্যাটারী চালিত রিক্সা শ্রমিক লীগের নেতারা বলেন সিটি কর্পোরেশন যেহেতু লাইসেন্স দিয়েছে। তাই বন্ধ করার অধিকার তাদের নেই। প্রয়োজনে তারা আইনী লড়াই ছাড়াও আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবেন। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযামুল আযীম বলেন যারা লাইসেন্স দিতে পারে নাগরিক প্রয়োজনে তারা তা বাতিলও করতে পারে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন কোনভাবে চালাতে দেয়া যায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন যখন লাইসেন্স দেয়া হয় তখন ঝুঁকির বিষয়টা এভাবে আসেনি। দু’জন অভিজ্ঞজন বলেন প্রযুক্তির ব্যবহার ভাল। তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। যতটুকু ধারন ক্ষমতা ছিল ততটুকু বিচার বিশ্লেষণ করে নামানো যেত। কিন্তু এখনতো কোন নিয়মনীতি নেই। আসামী ছেড়ে দিয়ে এখন তেড়ে ধরারমত অবস্থা। শুরুতে এর বিড়ন্বনা নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন প্রত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এখন যা হবার তাই হচ্ছে। এখনতো সর্বত্র রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এদের উপরও তাদের আশীর্বাদ রয়েছে। দেখা যাক সিটি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ কতটা সফল হয়। আর তো মাত্র কটাদিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।