পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবু হেনা মুক্তি : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য কলারোয়া, ভোমরা, ঝাউডাঙ্গা, ভাতশালা, টাকি, শ্যামনগর, হিঙ্গলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় অস্ত্র পাচার করে আনা হচ্ছে। বাড়ছে খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকা-। গত দু’মাসে শুধু খুলনায় ৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
আর জানুয়ারি মাসে ঘটেছে ৫টি হত্যাকা-। অথচ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটিও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। বরং সংগঠিত হচ্ছে ফেরারি সন্ত্রাসীরা। তৃতীয়-চতুর্থ সারির চরমপন্থি নেতারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজেরা অতি কৌশলে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে। রাজনৈতিক কানেকশনের অপেক্ষায় রয়েছে এসকল সন্ত্রাসী। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বিভিন্ন কৌশলে ফের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। গত রোববার নগরীর লবণচোরা মাথাভাঙ্গাসংলগ্ন পুঁটিমারা এলাকা থেকে শহিদুল ইসলাম খান (২০) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। একই দিনে রূপসা নৈহাটী ইউনিয়নের বিএনপি’র সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোল্লা সাইফুর রহমানের নির্বাচনী সভা চলাকালে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে এবং ৫-৬ জন আহত হয়। গতকাল আশাশুনিতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুষ্কৃতকারীরা। নির্বাচনকে ঘিরে পূর্বশত্রুতার জের হিসেবে ডুমুরিয়ার খরশ-া গ্রামের প্রতিপক্ষের আগুনে ভস্মীভূত হয় জনৈক আব্দুল গফ্ফার মোল্লার বসতবাড়ি। সম্প্রতি পটুখালী সীমান্তে পুলিশ একটি পিস্তল, গুলি, ম্যাগজিন ও ২৫ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে। এছাড়া সাতক্ষীরায় অবৈধ পথে ভারত যাওয়ার সময় বিজিবি সদস্যরা ৬ ব্যক্তিকে আটক করে। বাগেরহাটে চিতলমারীতে গত শুক্রবার সকালে সতেন্দ্রনাথ মল্লিক (৫২) নামক চিংড়ি ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্রাঘাতে হত্যা করা হয়। সে এবার একজন ইউপি মেম্বারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল।
সূত্রমতে, গত বছর আন্দোলন সংগ্রামের সময় এসব সীমান্ত দিয়ে ব্যাপক হারে ককটেল, গোলা-বারুদ ও অস্ত্র ঢোকে। এই অস্ত্র নিয়ে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চরমপন্থীরা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি জঙ্গিপ্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলে পরিচিত সাতক্ষীরায় ফের নাশকতার আশংকা করছে গোয়েন্দারা। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, চরমপন্থী, জঙ্গী কানেকটেড ক্যাডার ও দীর্ঘ দিন ঘাপটি মেরে থাকা বর্নচোরা সমাজ বিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। তারা রাজনৈতিক সেল্টারের অন্বেষণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সন্ত্রাসীরা নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে নানাভাবে লবিং শুরু করেছে নির্বাচনের প্রভাবশালী প্রার্থী ও ক্ষমতাসীনদের সাথে। সন্ত্রাসী কর্মকা- রুখতে ও জঙ্গিদের উত্থানের বিষয়ে যদিও বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তথাপি নাশকতার আশংকা মোটেই উড়িয়ে দিতে পারছে না এ অঞ্চলের সুধী সমাজ।
সূত্রমতে, উপকূলীয় অঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদগুলো নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পরে গ্রামগঞ্জে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থীরা নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। এরমধ্যে অসাধু রাজনীতিবিদ নিজেরা বা তাদের দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য সন্ত্রাসী মাস্তানদের দলে টানছে। সন্ত্রাসীদের খুশি করে ভোট সংগ্রহ করার জন্য টাকা পয়সা দেওয়া হচ্ছে। আর নেতাদের ইঙ্গিতে অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। আর সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য তালা, কেশবপুর, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, আশাশুনি, বটিয়াঘাটা, ফুলতলাসহ বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে সন্ত্রাসী অধূষিত এলাকায় প্রচুর অস্ত্রের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এই চাহিদার বেশিরভাগ অস্ত্র কলারোয়া এবং সাতক্ষীরার বিভিন্ন সীমান্ত ও ঘাট দিয়ে পাচার হয়ে আসছে। যশোরের শার্শা উপজেলায় দেশের আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর বেনাপোল আর সাতক্ষীরা সদরে বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর, ভোমরা স্থল বন্দর থাকার কারণে কড়া প্রশাসনিক নজরদারি এড়াতে মধ্যবর্তী কলারোয়া সীমান্ত অস্ত্র চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। সূত্রমতে, সীমান্তের কতিপয় ঘাটমালিকের সহায়তায় সন্ত্রাসীরা ভারত থেকে অস্ত্র নিয়ে আসছে। ঘাটমালিকদের পাহারাদার নিয়োজিত চোরাচালানি পণ্য পাচার রূট ও বিনা পাসপোর্টে দু‘দেশের মধ্যে যাতায়াতের রূটগুলো দিয়ে বেশিরভাগ অস্ত্র পাচার হয়ে আসছে। এরমধ্যে কেড়াগাছি, গাড়াখালি ও উত্তর ভাদিয়ালীর দুইজন ঘাটমালিক মোটা টাকার বিনিময়ে অস্ত্র গোলাবারুদ পাচারে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ঘাটগুলোতে সন্ত্রাসীরা সাধারণ চোরাচালানির বেশে ভারতীয় পণ্যের বস্তায় ভরে অস্ত্র পাচার করে আনে। আর ধুড় নামে বিনা পাসপোর্টে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াতের রূটে লাগেজপত্র তল্লাসী হয় না বলে সন্ত্রাসীরা বিনা পাসপোর্টের যাত্রী বেশে লাগেজের ভেতরে লুকিয়ে অস্ত্র পাচার করে আনছে। চুক্তি থাকায় ভারত থেকে আনা চোরাচালানী পণ্যের বস্তা বা বিনা পাসপোর্টে আগতদের লাগেজ পত্র কেউ খুলে দেখে না বলে এই সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র পাচার খুবই সহজ। এজন্য যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা এই রুট দিয়ে অস্ত্র পাচার করে আনে। কলারোয়া সীমান্ত নদীর তীর ঘেষে কেড়াগাছি, ভাদিয়ালী, চান্দা, বড়ালীগুলোর ওপারে সীমান্ত ভারতের আমুদিয়া, তারালী, হাকিমপুর, দরকান্দা, পদ্মবিল, আশশিকড়ী গ্রামগুলো অবস্থিত। একেবারে নদীর তীরবর্তী নো-ম্যানন্স ল্যা- এলাকায় উভয় দেশের জনপদগুলো গড়ে উঠেছে। ফলে ভারতীয় গ্রামগুলোর বেশ কিছু অংশ কাটাতারের বাইরে অবস্থিত। তাই রাতে কাঁটাতারের বেড়ার গেট বন্ধ থাকার কারণে ভারতের অভ্যন্তরে যাওয়া দুঃসাধ্য হলেও ভারতীয়রা সহজে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। এজন্য নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সহজে গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিশে নিজেদের লুকিয়ে ফেলা সহজ বলে অন্যান্য সীমান্তের তুলনায় এই সীমান্ত সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ। আবার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের এই গ্রামগুলোর সঙ্গে পাকা সড়ক যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। একেবারে সীমান্তের নদীর ধার পর্যন্ত মাইক্রো, প্রাইভেট নিয়ে যাওয়া যায় তাই সাধারণ পণ্য বা সাধারণ মানুষ আসার জন্য অসাধু সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে চুক্তি করে কৌশলে মাইক্রো, প্রাইভেট এনে অস্ত্র পাচার করে আনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এজন্য সম্প্রতি সন্ধ্যার প্রাক্কলে কলারোয়া সীমান্তে মাইক্রো, প্রাইভেটের আনাগোন বৃদ্ধি পেয়েছে। সহজে অস্ত্র পাওয়ার কারণে ইতিমধ্যে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুনরায় সংগঠিত হয়ে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিজেদের প্রভূত্ব বিস্তারের জন্য আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদে নিজেদের পক্ষের লোক নির্বাচনে অস্ত্রবাজি করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র যাওয়ার কারণে ছিনতাই ডাকাতি, খুন-খারাবি বৃদ্ধি পেয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।