দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মাওলানা মুহাম্মদ রেজাউল করিম
ভূমিকা : ভোগে নয় ত্যাগেই জীবনের প্রকৃত স্বাদ লাভ করা যায়। পৃথিবীর সমস্ত ধন-সম্পদের চাবিকাঠি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর নিকট গচ্ছিত থাকার পরও সমস্ত ভোগ-বিলাসিতা ও আড়ম্ভরতা পরিত্যাগ করে তিনি পরম স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের জন্য ইবাদত বন্দেগী ও আরাধনায় মত্ত ছিলেন। মহানবীর পদাংক অনুসরণে সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, তাবঈ তাবেঈন ও আউলিয়ায়ে কেরাম নশ্বর পৃথিবীর যাবতীয় মোহ পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও রাসূলের প্রেমে বিভোর হয়ে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে রয়েছেন। বিশিষ্ট তাপস, সাধক, দরবেশ ও রাজ সিংহাসন ত্যাগকারী বলখের বাদশা হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম এমন একজন জগৎখ্যাত অলি ও উচ্চস্তরের ফানাফিল্লাহ ব্যক্তিত্ব।
জন্ম : আফগানিস্তানের উত্তরে বলখ শহরে এ মহান সাধক ৭১৮ খ্রী. জন্ম গ্রহণ করেন। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। তার মাতা- পিতা দু’জনই ছিলেন মহান অলি।
বংশ পরিচয় : তাঁর পিতার নাম হযরত আদহাম (রহ.) এবং মাতা শাহজাদী হযরত গুল-ই জান্নাত (রহ.)।
বলখ রাজ: আফগানিস্তানের উত্তরে বলখ নামক একটি সমৃদ্ধশালী রাজ্য ছিল। আজ হতে প্রায় তেরশ বছর পূর্বে এ রাজ্য পরিচালনা করতেন একজন খোদাভীরু ও প্রজাবৎসল রাজা। তার স্ত্রীও ছিল ধর্ম পরায়না। এ রাজ্যেই হযরত আদহাম (রহ.) আল্লাহ ও রাসূলের প্রেমে বিভোর হয়ে গভীর অরণ্যে কঠোর রিয়াযত ও সাধনায় মত্ত ছিলেন। বনের পশুরা তাকে সম্মান ও সেবা করতো। তিনি প্রিয় নবীজীর পূর্ণ অনুসারী ছিলেন। একদা এ সাধকের প্রতি ডাক পড়লো নবীজীর অন্যতম সুন্নত বিবাহ করার ব্যাপারে।
পূর্বাভাষ : হযরত আদহাম (রহ.) স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হলেন যে, “এক রাজকন্যার সাথে তার বিবাহের বন্দোবস্ত হয়েছে; তিনি যেনো আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন”। তিনি বুঝতে পারলেন, অবিবাহিত জীবনে নেক কাজের যা সাওয়াব পাওয়া যায় বিবাহিত জীবনে কৃত নেকীর সাওয়াব তার দ্বিগুণ পাওয়া যায়। স্বপ্নাদিষ্ট রাজকন্যা ছিল বলখের তৎকালীন বাদশার একমাত্র কন্যা হযরত গুল-ই জান্নাত (রহ.)।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া : স্বপ্নাদিষ্ট হবার পর তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমন পরিস্থিতিতে একদিন বলখ নৃপতির রাজকন্যা গুল-ই জান্নাত তার নিয়ম অনুযায়ী প্রাসাদের অদূরে অবস্থিত বাগানে বেড়াতে বের হয়ে ফিরছিলেন। ঐ রাস্তা দিয়ে সাধক হযরত আদহাম (রহ.) বন হতে সংগৃহীত কাঠের বোঝা নিয়ে আসছিলেন। তিনি যখন শুনলেন এ রাস্তা দিয়ে রাজকন্যা আগমণ করবেন এবং রাস্তা সাময়িকভাবে বন্ধ; তখন তিনি উৎসুক হয়ে রাজকন্যার হাওদা (পালকি) দেখার জন্য রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। ঝটিকা বাতাস তাঁর (রাজকন্যার) হাওদার পর্দা উড়িয়ে দিলে খোদাভীরু ও ধর্ম পরায়না রাজকন্যা হযরত আদহাম (রহ.)-এর কপালে বিচ্ছুরিত আল্লাহর দ্যুতি-জ্যোতির প্রতি দৃষ্টি দেন। অন্যদিকে হযরত আদহাম (রহ.) এ ধর্ম পরায়না মহিলার দিকে নজর দেন। কিন্তু নিজের অবস্থান চিন্তা করে, রাজকন্যা পছন্দ হলেও তার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া কঠিন ভেবে স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন।
শাহী দরবারে : ঐ রাতে তিনি স্বপ্নে বলখের বাদশাহর কন্যা গুল-ই জান্নাতের সাথে বিবাহের বিষয়ে পুনরায় আদিষ্ট হলেন। এমতাবস্থায় তিনি নিয়ম অনুসারে বন হতে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে সামান্য খেজুর ও রুটি ক্রয় করে বাকি টাকা মানুষের মাঝে দান করে শাহী দরবারে উপস্থিত হলেন। অনুমতি পেয়ে সরাসরি বাদশাহর নিকট পৌঁছে গেলেন। বাদশাহ হাদিয়া দিতে চাইলে তিনি তা নিতে অস্বীকার করে বলেন “আমি জানি আপনি কাউকে আপনার দরবার হতে খালি হাতে ফেরত দেন না। আমিও কারো নিকট কোন সাহায্য চাই না। তবে, আজ একটা আর্জি নিয়ে আপনার দরবারে এসেছি। আশা করি আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না”। রাজা বললেন, ‘আপনার আরজি পেশ করুন। হযরত আদহাম (রহ.) বললেন, “আমি আপনার রাজকন্যাকে বিয়ে করে রাসূলপাকের সুন্নত পালন করতে চাই”। এ কথা শুনে বলখ নৃপতি বিবাহের বিষয়ে ভেবে চিন্তে পরে জবাব দিবেন বলে দরবেশকে বিদায় দেন।
ধূর্ত উজির রাজা পড়ে গেলেন মহাচিন্তায়। একমাত্র রাজকন্যা। তার বিয়ে স্বভাবতই কোন রাজপুত্রের সাথে হওয়াই স্বাভাবিক। অন্যদিকে দরবেশ অলিকে রাজা সম্মান করেন। সব ভেবে তিনি উজিরের সাথে পরামর্শ করলেন। উজির বলল, ‘জাহাপনা আপনি চিন্তামুক্ত থাকুন। আমি দরবেশকে এমন সুন্দর জবাব দেবো যে, তিনি আর কখনো রাজ দরবারের আশেপাশেও আসবেন না। “কিন্তু ওয়াদা অনুযায়ী হযরত আদহাম (রহ.) পুনরায় রাজ দরবারে উপস্থিত হলেন। উজির বহু বাহানা ও ছলনার আশ্রয় নিয়ে হযরত আদহাম (রহ.)-এর সাথে শাহজাদীর বিয়ের জন্য মুক্তার শর্তারোপ করে বলেন, ‘শাহজাদীর মুক্তা আছে, আপনাকে চারটি মুক্তা দিতে হবে, অন্যথায় বিয়ে সম্ভব নয় বলে তাকে বিদায় দেন। অন্যদিকে শাহজাদী কোনো ফকির-দরবেশের সাথে বিয়ের প্রস্তাব পেলে মুক্তার শর্ত শিথিল করবে বলে জানিয়ে দিলেন। ধূর্ত উজির শাহজাদীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো ফকির-দরবেশের প্রস্তাব নয় বলে জানায়। বললেন শুধুমাত্র একজন মানুষকে দেখানোর জন্য শাহজাদীর নিকট রক্ষিত মুক্তটা প্রয়োজন। এদিকে ধূর্ত উজির দরবেশকে মুক্তা দেখিয়ে এ বলে ধমক দিলেন যে, “মুক্তা ছাড়া রাজ দরবারের পাশেও আসবেন না’।
নদীর পাড়ে মুক্তা : হযরত আদহাম (রহ.) নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে মুক্তার সন্ধানে বের হয়ে নদীর পাশে গিয়ে নামায পড়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন, “হে আল্লাহ! যদি রাজকন্যার সাথে আমার বিয়েতে তোমার ইচ্ছে থাকে, তাহলে আমাকে তার ব্যবস্থা করে দিন। নতুবা আমার মন থেকে রাজ কন্যার বিয়ের ধারণা ও কল্পনা দূর করে দিন। এরপর তিনি নদীর দিকে তাকালে দেখতে পেলেন নদীর তীরে কতগুলো মুক্তা ভেসে উঠেছে। তিনি আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে আস্তানায় এসে বারটি মুক্তা রেখে বাকি মুক্তা মাটির নীচে পুঁতে রাখলেন। ঐ বারটি মুক্তা নিয়ে রাজ দরবারে এসে উজিরের সাথে সাক্ষাত করলে; প্রতারক উজির তা ভেজাল বলে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে উল্টো হযরত আদহাম (রহ.) কে জেলে পুরে নির্যাতনের নির্দেশ দিলেন। হযরত আদহাম (রহ.) নির্যাতনের বন্দিদশা হতে কৌশলে স্বীয় আস্তানায় এসে পুনরায় ইবাদতে মশগুল হলেন।
বিবাহ : এদিকে রাজকন্যা একদিন বেড়াতে বাগানে এলে বিষধর সাপ তাকে কামড় দেয়। রাজ দরবারে তুলকালাম কাÐ। রাজ্যের ওঝা, বৈদ্যের ঝাড়ফুঁক, হেকিম কবিরাজের তদবির সবকিছু ব্যর্থ। রাজকন্যা অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। অজ্ঞান হবার পূর্বে পিতা-মাতাকে বললেন, ‘রাজ দরবারে আল্লাহর কোন নিরাপরাধ বান্দার ওপর জুলুম করা হয়েছে; তাই এ ‘বিপদ’।’ চিকিৎকরা রাজকন্যাকে মৃত ঘোষণা করলে যথারীতি শাহী কবরস্থানে মৃত দেহ ফেলে রাখা হয়। এদিকে হযরত আদহাম (রহ.)। রাজ কন্যার খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে সে দিন রাতে রাজকন্যাকে তুলে এনে লাশের চতুপার্শে¦ তিনি আগুন জ্বালালেন। অন্যদিকে কিছু সিরিয় বণিক ঐ পথে যেতেই লাশ দেখে তথায় আসলে হযরত আদহাম (রহ.) পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন। বণিকদের মাঝে একজন অভিজ্ঞ কবিরাজ ছিলেন। সে রাজকন্যার কপালে হাত দিয়েই অনুভব করলেন যে, লাশের প্রাণ আছে। তখন সে অভিজ্ঞতানুযায়ী চিকিৎসা করে রাজকন্যাকে সুস্থ করলে রাজকন্যা অবাক হয়ে এখানে কিভাবে এলেন জানতে চাইলে হযরত আদহাম (রহ.) সামনে উপস্থিত হয়ে সব ঘটনা খুলে বললেন। রাজকন্যাকে বণিকদল রাজ দরবারে পৌঁছে দিতে চাইলে তিনি বললেন, ‘আমার পিতা-মাতা যেহেতু আমাকে মৃত ঘোষণা করে দাফন করে ফেলেছে; আমি আর সেখানে যাব না এবং এ দরবেশ যেহেতু আমার জন্য এতো মহানুভবতা দেখিয়েছেন তাই আমি তাঁকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করে তার সাথে থেকে যাবো।’ হযরত আদহাম (রহ.) তাঁর অলৌকিক স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং বণিকদল তাদের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করে বিদায় নিলেন।
হযরত ইব্রাহিমের জন্ম লাভ : দীর্ঘ দিনের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গিয়ে হযরত আদহাম (রহ.) আল্লাহর এক মহান আবিদ ও সাধকে পরিণত হলেন। তাঁর স্ত্রী গুল-ই জান্নাত অত্যন্ত মহীয়সী ও দ্বীনদার। এ দু মহাত্মার দাম্পত্য জীবন সুন্দরভাবে কাটছে। দু’বছর পর গুল-ই জান্নাত অন্তঃসত্ত¡া হলেন। তিনি স্বপ্নযোগে তাঁর এ অনাগত সন্তানের বিষয়ে অলৌকিক স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। যেমন (১) তার ঘরের কোণে চাঁদ উঠেছে (২) বলখের বাদশার সিংহাসনে তার সন্তান বসে আছে (৩) ঘোড়ার পিটে এক বাদশা (৪) এবং রাজ পুত্র তাঁর হাত ধরে রাজ প্রাসাদে ঢুকছে ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত ৭১৮ খ্রি. গুল-ই জান্নাতের ঘর আলোকিত করে হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) জন্ম নিলেন।
হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহামের বাল্যকাল ও শিক্ষাদীক্ষা : মাতা-পিতা আদরের সন্তানকে প্রাথমিক শিক্ষা ও পবিত্র কোরআন মাজিদ শিক্ষা দিলেন। এ পর্যায়ে আস্তানার অদূরে এক ওস্তাদের নিকট থেকে হযরত ইবরাহীম কোরআন, হাদিস, ফিক্হ ও বৈষয়িক জ্ঞান আহরণ করতে লাগলেন।
বলখ নৃপতির সাথে সাক্ষাত : হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রহ.) যে ওস্তাদের ঘরে পবিত্র কোরআন শিক্ষা করতেন তার পাশ দিয়ে বলখ নৃপতি যাবার সময় ইবরাহীমের অনিন্দ সুন্দর প্রোজ্বল চেহারার প্রতি দৃষ্টি পড়লে তিনি লক্ষ্য করলেন, ‘ইবরাহীমের চেহারা তাঁর কন্যা গুল-ই জান্নাতের সাথে হুবহুমিল। তিনি এটা দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হলেন এবং ওস্তাদকে বুঝিয়ে ইবরাহীমকে রাজ দরবারে নিয়ে গেলেন। এ দিকে হযরত আদহাম (রহ.) নিজ সন্তানকে আনতে গিয়ে রাজ দরবারে উপস্থিত হলে রাজা ও রাণীর সাথে পরিচয় হয় এবং পুরো ঘটনা খুলে বললে তারা রাজকন্যা গুল-ই জান্নাত এখনো জীবিত আছেন এবং ইবরাহীম গুল-ই জানাতের সন্তান এটা জানতে পেরে খুশির অন্ত নেই। শেষ পর্যন্ত রাজকন্যা, তার স্বামী আদহাম (রহ.) ও নাতি ইবরাহীমকে রাজ প্রাসাদে নিয়ে আসলেন বাদশা।
রাজপ্রাসাদ ত্যাগ : শ্বশুরের অনুরোধে কয়েকদিন রাজপ্রাসাদে অবস্থান করলেও হযরত আদহাম (রহ.) বলখ নৃপতিকে বুঝিয়ে পুনরায় বনবাসী হবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। অন্যদিকে বলখ নৃপতি পুরো সিংহাসনের ভার হযরত আদহাম (রহ.)-এর হাতে অর্পণ করতে চাইলেন। কিন্তু দরবেশ আদহাম (রহ.) বললেন, ‘আল্লাহ আমাকে এ কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি, আমাকে বিদায় দিন’। এ বলে তিনি বিদায় নিলেন।
পিতার পদাংক অনুসরণ : এ দিকে বলখের বাদশা রাজকন্যা ও দৌহিত্র ইব্রাহিমকে পেয়ে অত্যন্ত খুশি এবং দৌহিত্রের সাথে রাজ্য পরিচালনার বিষয়ে পরামর্শ করতে লাগলের। হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহামের যোগ্যতা, সততা ও অসাধারণত্ব লক্ষ্য করে বলখ নৃপতি তাঁর রাজ্যের ভার দৌহিত্র ইবরাহীমের ওপর অর্পণ করলেন। হযরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম সিংহাসনে বসেই পুরো রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। এভাবে বারো বছর রাজ্য পরিচালনা করেন। কিছুদিন পর তাঁর নানাজি ইন্তিকাল করেন এবং পিতা ও বিদায় নেন। এতে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মা গুল-ই জান্নাত ছেলেকে এক রূপসীও মহীয়সী মহিলার সাথে বিবাহ দিলেন। এক সন্তানও জন্ম নিল। কিন্তু ইবরাহীম ইবনে আদহাম পিতার পদাংক অনুসরণ করতে লাগলেন। একদা তিনি রাত্রিবেলা স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাতে ছিলেন। হঠাৎ রাজ প্রাসাদের ছাদের ওপর কারো আওয়াজ শুনে ডাক দিলে জবাব আসলো, “একজন বালক তার হারানো উট তালাশ করছে। তিনি এটাকে বোকামী বললে, প্রত্যুত্তরে আওয়াজ এলো ‘ছাদের উপর উট পাওয়া না গেলে, তবে রাজপ্রাসাদে শুয়ে আল্লাহকে পাওয়া কঠিন’। এ কথা শুনে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং ক্রমান্বয়ে পিতার ন্যায় সংসার ত্যাগ করে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত তিনি রাজ সিংহাসন ত্যাগ করে দীর্ঘ রিয়াজাত, মুশাহাদা, মুরাকাবার মাধ্যমে বেলায়তের উচ্চ আসনে আসীন হলেন। তিনি হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর শাগরিদ, হানাফী মাজহাবের অনুসারী ও সুফী ছিলেন। আল্লাহর এ মহান অলি নিরুদ্দেশ হবার পর একবার খানায়ে কাবায় পরিবার-পরিজনের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদের মমত্ববোধ হৃদয়ে স্থান পাবার পূর্বেই আওয়াজ এলো, আল্লাহর প্রেমে বিভোর ব্যক্তির হৃদয়ে দুনিয়ার প্রেমস্থান পাবার সুযোগ নেই। এ কথা শুনেই তিনি বিদায় নেন এবং দীর্ঘদিন আল্লাহর প্রেমে মগ্ন থেকে ১৬০ অথবা ১৬১ হিজরী তথা ৭৮১ খ্রি. ইন্তেকাল করেন। আল্লাহপাক আমাদেরকে এ মহান অলির জীবন হতে শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দান করুন - আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।