Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চ আদালতে থেমিস মূর্তি ইসলামী মূল্যবোধেরই অবমাননা

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহফুজ আল মাদানী : থেমিস। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ইনি ছিলেন প্রাকৃতিক নিয়ম-কানুন নিয়ন্ত্রণকারিণী দেবী। ইনি ইউরেনাসের ঔরসে গেইয়ার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বংশগত বিচারে ইনি বারোজন টাইটানের একজন। টাইটান ইংরেজি শব্দ। যাকে প্রাচীন গ্রিক ভাষায় তিতান বলা হয়। বারোজন টাইটান বা তিতান হলেন- অকেয়ানোস, তেথুস, হুপেরিয়ন, থেইয়া, কয়উস, ফয়বে, ক্রোনুস, রেয়া, নেমোসাইনে, থেমিস, ক্রিউস ও ইয়াপেতুস।
আমরা বাংলাদেশী। বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন পতাকা পতপত করে আজো বাংলাদেশের সকল জাতীয়, সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে উড়ছে স্বগৌরবে। আমরা গর্বিত। আমাদের রয়েছে স্বাধীনচেতা মন, রয়েছে নিজস্ব জাতীয়তাবোধ। আমাদের রয়েছে সাহসী এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আমাদের চেতনায় আজো দেশীয় মমত্ববোধ সর্বদা জাগ্রত। দেশীয় চেতনায় আজো বাংলার দামাল ছেলেরা উচ্ছ¡সিত। আপামর জনতা আজো দেশকে, দেশের চেতনাকে হৃদয় গহীনে গেঁথে রেখেছে নীরবে, নিভৃতে। আমরা কোনো দেশের, কোনো জাতির বা কোনো গোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক নয়। আমরা গোলামি করি না কোনো দেশের, কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় সুপ্রিমকোর্ট। যা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। যারা কথায় কথায় দেশের জাতীয়তাবোধ নিয়ে কথা বলেন তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রইল এই কোর্ট প্রাঙ্গণে বিজাতীয় দেশের মূর্তি বা ভাস্কর্য আমাদের দেশের জাতীয়তাবোধকে কি প্রশ্নবিদ্ধ করে না? তাহলে কি আমরা আমাদের জাতীয় চেতনাকে হারাতে বসেছি? কার স্বার্থে এই মূর্তি? নাকি বাংলাদেশের জনগণের সাথে জাতীয়তাবোধ নিয়ে খামখেয়ালী? আমাদের পূর্বসূরীরা রক্তের বিনিময়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন নিজস্ব জাতীয়তাবোধ ও স্বকীয়তা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। আজ সেই জাতীয়তাবোধ বিপন্ন হওয়ার পথে। যদি আমাদের জাতীয়তাবোধকে বিপন্ন করার পাঁয়তারা করা হয়, তাহলে বসে থাকবে না বাংলার সাহসী সূর্যসন্তানেরা।
আমরা মুসলমান। দেশের শতকরা নব্বইভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যাদের ধর্মীয় অনুভ‚তি রয়েছে অনেক গভীরে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। দেশের প্রতি মমত্ববোধ রয়েছে হৃদয় গহীনে। ধর্ম ও দেশের অপমানে কখনো বসে থাকার কথা নয়। ইসলাম ধর্ম এসেছে পৃথিবীতে শান্তির বার্তা নিয়ে। এসেছে একত্ববাদের বাণী সর্বত্র পৌঁছে দিতে। শিরক তথা মূর্তি পূজা বাদ দিয়ে এক আল্লাহর বন্দেগীর শিক্ষা দিতে। আল্লাহর প্রেরিত সব নবী-রাসূল একই মিশন নিয়ে এ ধরাধামে এসেছিলেন। মূর্তিকে সম্মান নয়, উৎখাত করতে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কা’বা ঘরের অভ্যন্তরে ৩৬০ মূর্তিকে এক এক করে ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। মুসলমান জাতি মূর্তির পূজা অর্চনা করতে নয়, দেবীকে সম্মান দিতে নয়, দেবীর কাছে ন্যায়বিচার চাইতে নয়, তা ভেঙে ফেলার দায়িত্ব ও কর্তব্যের মাধ্যমে জীবন বিলিয়ে দিতে এসেছে। তাই, আজ কোর্ট প্রাঙ্গণে মূর্তি ভেঙে ফেলার দাবি বাংলাদেশের কোটি কোটি জনতার, আপামর জনসাধারণের। এ দাবি কোন ব্যক্তি, জাতি গোষ্ঠী বা দলের নয়।
ভাস্কর্য। পাথর, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। যিনি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন তাকে ভাস্কর বলা হয়। মূর্তি বা ভাস্কর্যের মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। প্রায় সমার্থক। আমাদের সমাজে এক ধরনের বুদ্ধিজীবী (?) রয়েছেন তাদের কাছে থেমিসদেরকে মূর্তি মনে হয় না। এগুলোর মাধ্যমে জাতীয় চেতনা ভূলণ্ঠিত হয় না, ধর্মীয় চেতনায় আঘাত আনে না। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয় না। তাদের মতে এটা ভাস্কর্য। কিন্তু কাকে খুশি করার জন্য এই থেমিস মূর্তিকে বঙ্গীয়করণ?
সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক পুরাণের দেবী থেমিস। এক হাতে দাড়িপাল্লা অন্য হাতে খোলা তলোয়ার। চোখ বাঁধা। যার দ্বারা এটাই বোঝানো তিনি পক্ষপাতমুক্ত। আল্লাহর আইনের চেয়ে কার আইন রয়েছে নিরপেক্ষ? এই বিষয়টা না বাঙালী চেতনাবোধের অন্তর্ভুক্ত, না ইসলামী মূল্যবোধের অনুক‚লে। যা আমাদের চেতনাবোধকে জাগ্রত করে না, যা আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রেরণা দেয় না। তাহলে সেটা আমাদের সংস্কৃতিতে নিয়ে আসার অর্থ কি? আমাদেরকে মূর্তি পূজারী নাকি ঐ টাইটানদের অনুকরণে আমাদেরকে ইসলামের বদলে খ্রিস্টীয় ধর্ম শিখানো হচ্ছে? বিবেকবানগণের বুঝতে বাকি নেই যে, আমাদেরকে পার্শ¦বর্তী দেশের মূর্তির প্রতি সম্মান শিক্ষা(?) দেয়ার জন্য ওদের মূর্তিকে সরাসরি না এনে টাইটান মূর্তির মাধ্যমে লাল সংকেত দেয়া হয়েছে। এটা সহজতর কোনো বিষয় নয়। পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। যা মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং নিদর্শনের অন্যতম। এই ঈদগাহ ময়দানের পাশাপাশি থেমিস কে দঁাঁড় করানো বাংলাদেশের সমস্ত মুসলমানদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের নামান্তর। মুসলিম সমাজ তথা ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি নীরব চপেটাঘাত।
আলেম তথা মুসলিম সমাজ তথা গোটা দেশবাসী বসে থাকবে না। ইসলামী মূল্যবোধকে ধুলিসাৎ করার পাঁয়তারা রুখে দাঁড়াবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমরাই কেবল তাঁকে ভয় করে’ (সূরা ফাতির : ২৮)। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আলিমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী’। নবী-রাসূলগণের মিশন ভিশন ছিল আল্লাহর একত্ববাদের দিকে মানুষকে আহŸান করার পাশাপাশি শিরক তথা মূর্তিকে ভেঙে চুরমার করে দেয়া। আজ আমাদের একান্ত করণীয় হলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করা। আমরাও আশাবাদী, সরকার এবিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করবেন। কেননা, এদেশ শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ।
ষ লেখক : এম ফিল গবেষক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট



 

Show all comments
  • মামুন ২৯ মার্চ, ২০১৭, ২:২০ এএম says : 1
    দ্রুত এই মূর্তি অপসারণ করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • পলাশ ২৯ মার্চ, ২০১৭, ২:২১ এএম says : 0
    এ ব্যাপােরে সরকার যে কেন নিরব সেটাই আমার বুঝে আসে না।
    Total Reply(0) Reply
  • লুৎফুর রহমান ২৯ মার্চ, ২০১৭, ৮:৪০ এএম says : 0
    এই মুর্তি অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharraf Hossain ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 1
    যদি প্রশ্ন করি উচ্চ আদালতের সামনে এই মুর্তিটা সথাপনের ফলে কি লাভ হল দেশের? কি উত্তর দিবেন কর্তৃপক্ষ?
    Total Reply(0) Reply
  • Akash ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১:০১ পিএম says : 0
    আমিও এক মত, মূর্তি ন্যায়বিচারের প্রতিক হতে পারেনা -- মূর্তি হচ্ছে শিরকের প্রতিক অামরা ইসলামিক ভাস্কয চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Harunur Rosid ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১:০২ পিএম says : 0
    আমিও এক মত,
    Total Reply(0) Reply
  • আরিফুর রহমান ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১:০২ পিএম says : 0
    চাই না এই মুর্তি, এখানে কুরআনের ভাস্কর্য চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mizanur Rahman ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 0
    অামরা ইসলামিক ভাস্কয চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • ৩০ মার্চ, ২০১৭, ৭:২৮ এএম says : 0
    মুর্তি যে কোন উপায়ে তো সরানে হবেই।যদি এই সরকার না সরাই তাহলে আমরা মনে করব সরকার আমাদের কে মুর্তি পুজারী বানানোর জন্য চেষ্টা করছে।সুতারাং আমরা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুজ্জামান ৩১ মার্চ, ২০১৭, ৮:৩২ এএম says : 0
    সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি "অবিলম্বে এই মুর্তি সরানো হক অন্য তাই আমরা প্রস্তুত আছি সরাতে "
    Total Reply(0) Reply
  • ৩১ মার্চ, ২০১৭, ৭:৫২ পিএম says : 0
    আমরা মুসলমান আমরা মুর্তি পূজারী হতে পারিনা ।সরকার আমাদের মুর্তি পুজারী বানাতে পারেন। অতএব উচ্চ আদালতে মুর্তি দেখতে চাইনা।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহজালাল ১ এপ্রিল, ২০১৭, ৯:২৮ এএম says : 0
    আমার সোনার বাংলা চাই কোরানের আইন
    Total Reply(0) Reply
  • ২ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:৫৮ পিএম says : 0
    আমি যদি বলি উচ্চ আদালতের সামনে মূর্তি স্থাপনে আমার দেশের কি লাভ হল তাহলে কি জবাব দিবে উচ্চ আদালত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন