Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষা খাতে অপচয় বন্ধ করুন

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস : শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতিই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা নামক মৌলিক চাহিদা থেকে বহু মানুষই শুধুমাত্র সরকারের সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই বর্তমান সরকার শিক্ষাকে মানুষের দোরগোরায় পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি সময় উপযোগী শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছে। যেখানে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা স্তর ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর ৯ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আর তার পরবর্তী শ্রেণিসমূহ উচ্চ শিক্ষা স্তরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়সমূহ স্থাপনের দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভক্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নামে এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ চালু করা হয়েছে, যেখানে দুজন পূর্ণ মর্যাদার সচিব নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে ভেঙে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নামে পৃথক বিভাগ করা হবে। তারপরও কি শিক্ষা খাতের শৃঙ্খলা ও অপচয় কমানো সম্ভব হবে?
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রাথমিক অবস্থায় ১৬০০০ টাকা স্কেলপ্রাপ্ত হন, আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রাথমিক পর্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১০২০০ টাকা ও প্রশিক্ষণবিহীন ৯৭০০ টাকা স্কেলপ্রাপ্ত হন। দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে যদি প্রাথমিক স্তর সরিয়ে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত করা যায় তবে সরকারের প্রচুর আর্থিক অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তর (৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি) এ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হলে বিদ্যালয় ভেদে মাসিক ৬০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন গুণতে হয় এবং পরীক্ষার সময় বিদ্যালয় ভেদে ২০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পরীক্ষা ফি হিসাবে বিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়, যা অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর জন্য কষ্ঠসাধ্য হয়ে পড়ে।
পক্ষান্তরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীকে কোনো মাসিক বেতন দিতে হয় না এবং পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকার বেশি হয় না। তাই যদি শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে প্রাথমিক স্তর (৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি) চালু করা হয় তবে দেশের সকল শিশুকে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিদ্যালয় ঝরে পড়া শতভাগ কমানো সম্ভব হবে। তাই দেশের সকল নি¤œ মাধ্যমিক (প্রাথমিক স্তর) বিদ্যালয়সমূহকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করা প্রয়োজন এবং সেখানে কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির মাধ্যমে পদায়ন করে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনাকরণ ও পদ খালি থাকা সাপেক্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানকরণ। এ ছাড়া যতদিন পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানোর জন্য উপর্যুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হবে, তার পূর্ব পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান, ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা এই পাঁচ বিষয়ে খÐকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়েনের শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে, কোনোক্রমেই উপজেলার বাহির থেকে খÐকালীন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান না করা ভালো।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মানী হিসেবে ১০০০০ টাকা প্রদান এবং অবসরপ্রাপ্ত খÐকালীন শিক্ষকদের বয়স সর্বোচ্চ ৭০ বছর করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রাথমিক স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কর্মমুখী শিক্ষা বিষয় পাঠদানের জন্য একজন করে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে এবং প্রি-প্রাথমিক শ্রেণিতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের চারুকলা ও কারুকলায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চারু ও কারুকলা শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা যেতে পারে। অবশিষ্ট মাধ্যমিক শাখা নবম থেকে দশম শ্রেণির জন্য একটি নতুন জনবল কাঠামো সৃষ্টি করা যেতে পারে, যেখানে প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান, শারীরিক শিক্ষা, ধর্ম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সহকারী লাইব্রেরিয়ান, অফিস সহকারী ১ জন করে, অফিস সহায়ক দুজন করে মোট ১১টি পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
এ ছাড়া ভোকেশনাল শাখার ন্যায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪০ জন করে শিক্ষার্থীর ভর্তির কোটা সৃষ্টি করে প্রতিটি বিভাগের জন্য ২ জন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। বিজ্ঞান শাখায় ২ জন শিক্ষকের একজন ভৌত বিজ্ঞান ও আরেকজন জীবন বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২ জন শিক্ষকের একজন হিসাববিজ্ঞান ও আরেকজন ব্যবস্থাপনা, মানবিক বিভাগের একজন অবশ্যই ভ‚গোল ও আরেকজন যে কোনো বিষয় এর পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে, কোনোক্রমেই একই বিষয়ে পাসকৃত দুজন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। সংযুক্ত ভোকেশনাল শাখার শিক্ষকদের যেমন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর হতে আলাদা এমপিও শিটে বেতন-ভাতাদি প্রদান করা হয়, তাদের ন্যায় বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োজিত শিক্ষকদের জন্য মাধ্যমিক ও নি¤œ মাধ্যমিক শাখায় ২টি আলাদা এমপিও শিট প্রস্তুত করা প্রয়োজন। নি¤œ মাধ্যমিক (প্রাথমিক)-এর এমপিও শিটের বেতন-ভাতাদি ভোকেশনাল শাখার ন্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও মাধ্যমিকের এমপিও শিটের বেতন-ভাতাদি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বহন করবে। নি¤œ মাধ্যমিক এমপিও শিটে (পূর্বের নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্যাটার্ন অনুযায়ী) সহকারী প্রধান শিক্ষক, সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত ও বিজ্ঞান, ধর্মীয়, কৃষি, শারীরিক শিক্ষা, শ্রেণি শাখা এবং মাধ্যমিক এমপিও শিটে প্রধান শিক্ষক, বাংলা, ইংরেজি, হিসাববিজ্ঞান, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সহকারী লাইব্রেরিয়ান, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ২ জন, থাকবে, যে শ্রেণির বিপরীতে শাখা শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল ওই স্তরের এমপিও শিটে শাখা শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মাধ্যমিক স্তরে যদি শিক্ষক স্বল্পতা থাকে তবে নি¤œ মাধ্যমিক থেকে শিক্ষক নিয়ে মাধ্যমিক স্তরে নেওয়া যেতে পারে।
নি¤œ মাধ্যমিক স্তরের এমপিও শিট ধরে প্রাথমিক স্তর হিসেবে জাতীয়করণ করে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা যেতে পারে, যদি কোনো শিক্ষক প্রাথমিক স্তরে জাতীয়করণ হতে ইচ্ছুক না হয় তবে তাকে মাধ্যমিক স্তরে রাখা যেতে পারে। অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে অন্য বিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই উপজেলার বাইরে না হলেই ভালো হয়। এর ফলে সরকার আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবে। শিক্ষা খাতের আর্থিক অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।
ষ লেখক : ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন