Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনার অধীনে আরেকটি নির্বাচন?

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ রেজাউর রহমান : গত আট বছরে দেশে গণতন্ত্রের নামে যেভাবে শাসন ব্যবস্থার বিকাশ ঘটেছে, গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, গণ-স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, প্রতিবাদ ও ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগকে সংকুচিত করা হয়েছে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের দ্বারা নগ্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ ও বিশ্বব্যাপী আলোচিত হত্যাকাÐের বিচার করার কোনো পরোয়া না করে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতিকে স্থায়ী রূপ দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশের ৪৫ বছরের ইতিহাসে এরকম কখনই ঘটেনি। এসবই আবার ঘটানো সম্ভব হয়েছে সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক দলের নিষ্ক্রিয়তা, সঠিক সময়ে যথোপযুক্ত বিরোধী আন্দোলনের সঠিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের চ‚ড়ান্ত ব্যর্থতা, জাতীয় সংসদ অধিবেশন বর্জন, সাধারণ নির্বাচন বর্জন ইত্যাদি বহুমুখী উপসর্গজনিত কারণে। বস্তুত ২০০৯ সাল থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন না করে, জনস্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কার্যকর কোনো কর্মসূচি সংগঠনে ব্যর্থ হয়ে সরকারি দলকে সুযোগ করে দিয়েছে অপশাসন চালিয়ে যাওয়ার। ফলে দেশের জনগণের ওপর চাপ বাড়ছে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের, মুদ্রাস্ফীতির, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির। উন্নয়নের সুফল জনগণের সকল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। এই দায়িত্ব পালনের প্রতি অন্ধ থেকে সরকারি নীতি দেশের ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়িয়ে তুলছে।
রাজনীতির ক্ষেত্রে সরকার কোনো দলকেই প্রতিবাদ করতে দিচ্ছে না। জাতীয় সংসদে বসানো হয়েছে এক গৃহপালিত বিরোধী দলকে, যাদের তিনজন আবার সরকারের মন্ত্রী। এভাবেই দেশের ১৬ কোটি জনগণকে গণতন্ত্রের সবক দেয়া হচ্ছে। আগামী সাধারণ নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজন ছিল একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়া হলে দেখা যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সুশীল সমাজের অন্যতম প্রতিনিধি সুশানের জন্য নাগরিক সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ অন্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। বিএনপি যেভাবে নতুন নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সে রকম কঠোর সমালোচনা না করলেও সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও বদিউল আলম মজুমদারও নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়ায় তাদের অসন্তুষ্টিই প্রকাশ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ সালের শেষদিকে অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনই করবে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজ। ২২ মাস পরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কর্মসূচি থাকলেও এখন থেকেই নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে জানা যায়। সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো হচ্ছে : (১) ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, (২) নতুন রাজনৈতিক দলগুলো যারা এখনও নিবন্ধিত নয়, তারা আবেদন করলে নিবন্ধন দেয়া বা না দেয়া, (৩) সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নিবন্ধন করা, (৪) সংসদীয় আসনগুলোর প্রয়োজনবোধে সীমানা পুনর্বিন্যাস করা, (৫) চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও মুদ্রণ, (৬) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ। এসব প্রক্রিয়ার মাঝে রয়েছে বিভিন্ন উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজ। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের শেষদিকে হবে তফসিল ঘোষণা। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে দেশব্যাপী একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ৩০০ আসনের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন এক কাজ।
স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি দলের কর্মকর্তা, কর্মীবাহিনী ও সমর্থকগণ যদি সুষ্ঠু নির্বাচন চান, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যদি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সহযোগিতা করেন, একমাত্র তা হলেই সম্ভব হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান। তারপর রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা। যে ব্যাপক ও পাইকারিভাবে গত কয়েক বছরে করা হয়েছে দলীয়করণÑ তার ফলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও শতভাগ নিরপেক্ষ নাও থাকতে পারেন। এতকিছুর পরেও যদি অনুষ্ঠিত হয় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তারপর যেগুলো ঘটবে বলে ধারণা করা যায়, সেগুলো হচ্ছে নির্বাচনে পরাজিত দল বা জোট কর্তৃক নির্বাচনে ব্যাপক ও সূ² কারচুপির অভিযোগ।
পরাজিত দলটির কারচুপির অভিযোগের পরেও ধরে নেয়া যাক, হবে বিজয়ী দলটি কর্তৃক ক্ষমতা গ্রহণ ও মন্ত্রিসভা গঠন। আর এ জন্য বাংলাদেশে কোনো দিনই ঘটবে না নির্বাচনে পরাজিত দল কর্তৃক বিজয়ী দল বা দলের নেতাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন। শুরু হবে নতুন সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদের শাসন। এই পাঁচ বছরে জাতীয় সংসদে নিজেদের ভূমিকা কখনই পালন করবে না বিরোধী দলÑ বরং তারা করবে সংসদ বর্জন। জাতীয় সংসদ যদি বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে পরিণত হয় এক নিষ্প্রাণ ও একতরফা কর্মকাÐের স্থান, তাহলে নির্বাচন কমিশন গঠন করার কষ্টকর প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ৩০০ আসনে দেশব্যাপী নির্বাচন করার ব্যয়বহুল ও বিশাল কর্মকাÐ পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে পড়ে। এরপরেও এটাই ঘটে এ দেশে। “সর্বদাই আমরা রাজা আমাদেরি রাজত্বে” এ দৃষ্টিভঙ্গিরই ব্যাপক প্রসার লাভ ঘটেছে। এখানে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে আগ্রহী নয় কোনো বৃহৎ রাজনৈতিক দল।
নির্বাচনকালীন ক্ষমতায় থাকবে কোন ধরনের সরকারÑ এ বিতর্ক চলছে এখন রাজনীতির অঙ্গনে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে দেয়ার যে সংস্কৃতি এদেশে প্রবর্তন করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, এখন তার মন্ত্রিসভা ও দলীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও তা সংক্রমিত হয়েছে বিএনপি নেতাদের মাঝেও। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কয়েক দিন আগে মন্তব্য করেছেনÑ ‘যদি কেয়ামত পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়, বিএনপি তা করবে তবু বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না’। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন আগামী সাধারণ নির্বাচন বর্জন করবে না বিএনপি। কারণ পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে নির্বাচন কমিশনবিএনপির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সাধারণ নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, শেখ হাসিনার অধীনে নয়।’ নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলা আছে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাত-পা বাঁধা থাকবে। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকেবে। (দৈনিক ইনকিলাব : ৪ মার্চ ২০১৭) সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যেভাবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই এ বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনারও অবকাশ নেই। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।
বিএনপি ও অন্যান্য সরকারবিরোধী দল বিশেষ করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাম রাজনৈতিক দলসমূহসহ সকল দলই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে আসতে চাইবে না। কিন্তু সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও গঠিত হওয়ার কোনো বিধান নেই। আর এটা কোনোমতেই আশা করা যায় না যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের দ্বারা সংশোধিত সংবিধান কোনো আন্দোলন বা নাগরিক সমাজের দাবির মুখে পুনরায় সংশোধনের উদ্যোগ নেবে। সরকারি দল প্রতিটি সক্রিয় বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যেভাবে অগণিত মামলা দিয়ে রেখেছে এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের তহবিল আত্মসাৎ করার মামলা চালু রেখেছে, তার ফলে বিএনপির পক্ষে দেশব্যাপী কোনো জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো সম্ভাবনা বা আশঙ্কা নেই বলেই তারা মনে করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি প্রহসনমূলক ওই নির্বাচনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের জন্য খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় যেভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, তা কোনো মতেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কোনো সংজ্ঞাতেই পড়ে না। গুলশান কার্যালয়ের ফটক থেকে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া দেশব্যাপী এক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করলে অনেক স্থানে শুরু হয় গণপরিবহন, সাধারণ জনগণ ও সরকারি বিভিন্ন স্থাপনার ওপর পেট্রলবোমার ব্যবহার, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাÐ। প্রথম পেট্রলবোমা বিস্ফোরণের পরপরই যদি বিএনপি নেত্রী তার অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিতেন, তাহলে সেটাই হতো ভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার পরিচায়ক। কিন্তু জনগণের কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত সহিংসতা চলতে থাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শতাধিক নিরীহ নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে, আহত হন আরও অনেকে। সরকার এসবের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে হাজার হাজার বিএনপি কর্মীকে মামলায় জড়িত করে এমনকি নেতাদেরকেও হুকুমের আসামি করে অভিযুক্ত করে।
খোদ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দুটি মামলার কার্যক্রম চালু রয়েছে তার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি চালু করেছিল তত্ত¡াবধায়ক সরকার ২০০৮ সালে। অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলা কয়েক দিন আগে হাইকোর্টের রায়ে বর্তমানে বিচারিক আদালত থেকে স্থানান্তরিত হয়ে অন্য আদালতে পুনরায় শুরু হবে। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দুই বছরের মেয়াদ শেষে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করার পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হিসেবে প্রত্যাহার করা হলেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা অরফানেজ ট্রাস্টের তহবিল তসরুফ সংক্রান্ত মামলা ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১১ সালের আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশন অন্য যে মামলাটি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করে, সেটি হলো জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের। খালেদা জিয়াসহ এ মামলার আসামি চারজন। মামলাটির বিচারকাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ দুটি মামলা ছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘটিত নামক তার একটি মামলায় সম্প্রতি খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়েছে বলে জানা যায়। সাধারণ নির্বাচনের আগে অন্তত একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে খালেদা জিয়ার। শাস্তি দুই বছর বা দুই বছরের বেশি হলে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সুযোগ হারাতে পারেন বিএনপি নেত্রী। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হাজার হাজার মামলা ছাড়াও কোনো স্থানেই বিএনপির কোনো প্রকার কর্মসূচিকেই পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। ঢাকায় কোনো সমাবেশ করার জন্য কোনো অনুমতিই দিচ্ছে না মহানগর পুলিশ প্রশাসন। অথচ জাতীয় পার্টি, জাসদ প্রভৃতি দলকে সমাবেশ, মিছিল করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে, বিএনপি নিষিদ্ধ কোনো দল নয়। অথচ বিএনপির সমর্থকদের মিছিল বেরুলে ধাওয়া করে লাঠিপেঠা ও আটক করা হচ্ছে দেশর সর্বত্র।
শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন হলেও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো থাকবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণেÑ এটা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে এখনও যে প্রশ্নটি থেকে যায়, তা হলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না। গত আট বছরে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেভাবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে সর্বদলীয় সরকারের নামে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনাই, সেভাবেই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনÑ এটাই হচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগের ইচ্ছা। প্রধানমন্ত্রী নিজে এখনও বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে চাইলেও তার চতুর্পাশ্বে যেসব ক্ষমতার সুবিধাভোগী নেতা রয়েছেন, তারা যে তাতে বাধ সাধবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও উচ্চকণ্ঠ কয়েকজন মন্ত্রী তাই প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও কে কতটা তির্যক মন্তব্য ও কটাক্ষ বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে করা যায়, তার অঘোষিত প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
অন্যদিকে, বিএনপির কতিপয় নেতাও বলে যাচ্ছেন, গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনে। দু-একজন বলেই ফেলেছেন খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। পরস্পরকে দোষারোপ করাই এখন রাজনীতি। মন্ত্রীরা যেসব অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে দু-একটি কথা বলেই বেশির ভাগ সময় নিয়ে বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে রেখে কীভাবে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা যায়, সে বিষয়ে নিজেদের চিন্তাপ্রসূত কিছু সংখ্যক প্রস্তাব কত শীঘ্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা যায়Ñ এটাই বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্বের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। গত আট বছরে এটা অনেকবার প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকার শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারী ব্যবহার প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেনি, উন্নয়ন ও দেশের স্বার্থেও সাধারণ জনগণ, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের কোনো পরামর্শ বা সুপারিশের প্রতিও ক্ষমার অযোগ্য উপেক্ষা প্রদর্শন করে চলেছে। তাই রামপালে চলছে কয়লা-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের নির্মাণ কাজ। সাগর-রুনী হত্যাসহ আরো কয়েকটি দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত হত্যাকাÐের বিচার না করার বিস্ময়কর অপ-সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার অবাঞ্ছিত জেদ। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রদান ও দলীয় প্রতীক ব্যবহার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদেরকে যারা নির্বাচিত করেছে তাদের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে বরখাস্ত করার দৃষ্টান্ত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের তালিকা প্রকাশে অনীহা ও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া, তথাকথিত বিরোধী দল থেকে তিনজন মন্ত্রী নিয়োগ ও দলের সভাপতিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত নিয়োগ, তিস্তা পানি চুক্তি বছরের পর বছর স্বাক্ষর না করলেও ভারতকে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান ও আরো বৃহত্তর সহযোগিতার নামে চুক্তির পর চুক্তি করে যাওয়ার প্রস্তুতি। সব কিছু মিলিয়ে আগামী নির্বাচনের সময়কালীন সরকার কেমন হতে যাচ্ছে তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ