পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাবার মতো জীবন দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব
সাইদুর রহমান মাগুরা থেকে : ‘আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না’ দৃঢ়তার সঙ্গে এ অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ২০০১ সালে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং আমেরিকার যোগসাজশে ক্ষমতায় এসেছিল। গতকাল মাগুরায় বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না, কাউকে পরোয়া করি না। কারও কাছে মাথা নত করি না। বাবার আদর্শ নিয়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জীবন উৎসর্গ করব; যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত। বাবার মতো বুকের রক্ত দিয়ে আপনাদের সেবা করব এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। তিনি আরো বলেন, মাগুরার কৃতী সন্তান সাকিব আল হাসান শততম টেস্টে শ্রীলংকাকে পরাজিত করে দেশের মান বৃদ্ধি করেছে। তার জন্মভ‚মিতে এসে মাগুরার মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে আরো উন্নত করতে চাই। দেশ উন্নত হোক এটাই আওয়ামী লীগ চায়। নৌকায় ভোট দেয়ায় দেশ স্বাধীন হয়েছে। নৌকা মানুষের বিপদে-আপদে রক্ষা করে নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে সারাদেশে বহুমুখী উন্নয়ন হয়েছে। আগামী ২০১৯ সালেও নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন। মাগুরা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খান। বক্তৃতা করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পিযুষ কান্তি চট্টপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট বীরেন শিকদার এমপি, মেজর জেনারেল (অব:) এ টি এম আব্দুল ওহাব এমপি, প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব অ্যাড. সাইফুজ্জামান শিখর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ কুমার কুন্ড প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে মাগুরা স্টেডিয়ামে প্রস্তুতকৃত ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। একই সাথে ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। উদ্বোধনকৃত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মাগুরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, ফটকি নদীর উপর ১১০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, কাটাখালী-ইছাখাদা ৯.৭১ কিলোমিটার সড়ক, ৩০.৫০ মিটার নতুন বাজার সেতু, ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার, আছাদুজ্জামান স্টেডিয়াম, সরকারি কলেজ প্রশাসনিক ভবন, হাঁস প্রজনন খামার, মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ ভবন, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের অফিস, শ্রীপুর ও শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, মাগুরা বস্ত্রকলের পুনঃ উৎপাদন কার্যক্রম, শালিখার আড়পাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে যে ৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তা হচ্ছে মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, শালিখার নলিয়া ঘাটে ৯৬ মিটার ব্রিজ, আটিরভিটা-বরইচরা সড়কে ফটকি নদীর উপর ৬৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, বাউলিয়া-শরশুনা চিত্রা নদীর উপর ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়কে (এন-৭) মাগুরা শহর অংশ ৪ লেনে উন্নীতকরণ, মাগুরা পৌরসভার তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ২য় পর্যায়, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার, শ্রীপুর ও শালিখা উপজেলায় মিনি স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ মোট ২৮টি উন্নয়ন কাজের একযোগে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করেছিল। তাদের সময় সাধারণ মানুষকে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা সন্ত্রাস জ্বালাও-পোড়াও করে। পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারে। তাদের হাত থেকে পবিত্র কোরআন পর্যন্ত রেহাই পায়নি। তিনি জঙ্গিবাদের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে মাগুরার স্থানীয় জনগণ, স্কুল-কলেজের ছাত্রদের অভিভাবক, মসজিদের ইমাম, আলেম-ওলামাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস জাতির পিতা ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বাংলার মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩০ লক্ষ শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের আত্মত্যাগে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে জাতির পিতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে দেশ ও দেশের মানুষ যখন সুফল পাচ্ছিলেন ঠিক তখন ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল পরিবারের ১৮ জন সদস্যসহ স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতাকে। এর পর থেকে শুরু হয় বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আবার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়ে কৃষকদের জন্য বিনা জামানতে কৃষিঋণ ব্যবস্থা চালু করেছে, পর্যায়ক্রমে তিনবার সারের দাম কমিয়েছে। দেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়াও গরিব মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যথাসময়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার করা হয়েছে, ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে, ১ কোটি ৩০ লাখ মায়ের মোবাইল ফোনে বৃত্তির টাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিএনপি কি করেছে, শুধু অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মানুষকে দুর্বিষহ করে তোলে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ হবে আমরা তাই চাই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। তারা পবিত্র কুরআন শরীফ পুড়িয়েছে, জঙ্গিবাদের নামে মানুষ হত্যা করেছে, মসজিদে আগুন দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্র করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাগুরার মানুষ রেললাইন দেখেনি মাগুরায় রেললাইন স্থাপন করা হবে। বিএনপি নেত্রীর ছেলে বিদেশে বসে হুকুম দিয়ে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপি- জামায়াত ২৭১ জন মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ্ মানুষকে জিম্মি করে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করেছিল। বন্ধ করতে চেয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, পারেনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জনগণের সহায়তায় তা প্রতিহত করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় এসে লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচার করে তাদের হাতে এতিমদের টাকাও রক্ষা পায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।