মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
শরীফুর রহমান আদিল : হা-ডু-ডু বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও কালের বিবর্তনে ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশের খেলা হলেই শত বাধা, হরতাল, রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা রোদ-বৃষ্টি সবকিছু উপেক্ষা করে ভরপুর গ্যালারি তারই প্রমাণ করে। আর বিজয়ের পর সারা পাড়া-মহল্লাহয় জয়োৎসব ক্রিকেটের উপর বাংলাদেশের মানুষের আবেগ আর উচ্ছ¡াসেরই বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে। যাহোক, বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলে বহুবছর আগ থেকে আর এর জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে ১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রথম টেস্ট প্লেয়িং দেশ পাকিস্থানকে হারানোর মধ্যদিয়ে, এরপর একে একে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকাসহ সকল দেশকে হারায় টাইগাররা। কিন্তু একটি খেলায় জয়ের পরে আবার দেখতে হয় বাংলাদেশের ছন্দপতন, কোন কোন ম্যাচে কোন নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের নান্দনিক কিছু শর্ট আবার কোন কোন ম্যাচে কিছুটা আশা জাগানো এভাবেই চলছিলো গত ৬-৮ বছর। আর এভাবেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো টাইগার ভক্তদের। কিন্তু বিরামহীন অনুশীলন, দক্ষ কোচিং স্টাফ, নিত্য-নিতুন কৌশল, আকাশছোঁয়া আত্মবিশ্বাস, নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ, মনোযোগ, সর্বোপরি দেশের মান- সন্মানকে বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার মনোভাব বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এক অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ গ্রহণ করে ফেলছে হোয়াইট ওয়াশের স্বাদও। কিন্তু এইসব অভাবনীয় সাফল্য এতদিন কেবল ওয়ানডেতে পরিলক্ষিত হয়েছে; টেস্টে টাইগারদের জয়ের রথ যেন ইদুরের গতিতে এগুচ্ছিলো। কেননা, টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম জয় পেতে খেলতে হয়েছে ৩৫ ম্যাচ! ২০০০ সাল থেকে শুরু ২০১৭ সাল পর্ষন্ত বাংলাদেশ ১০০টা টেস্ট খেলেছে কিন্তু জয় কেবল চারটি টেস্ট দলের বিপক্ষে। তাও দুর্বল জিম্বাবুয়ের আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এসেছে এইসব জয়! তাই বলা যায় বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এই জয়ের পূর্বে যে ৮টি ম্যাচ জিতেছে তারমধ্যে ৫টি জিতেছে দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আর ২টি জিতেছে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে! কেবল ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের সাথে বিজয় ছাড়া বলতে গেলে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে আর দলীয় অর্জন তেমন একটা নেই। তবে ব্যক্তিগত অনেক অর্জন রয়েছে। তাই শ্রীলংকার বিপক্ষে এই জয় বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে বিজয়ের যে বদনাম ছিলো তা কিছুটা হলেও ঘুচবে।
টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম জয় পেতে খেলতে হয়েছে ৩৫ ম্যাচ আর বাকী ৬৫ টেস্টের মধ্যে বাংলাদেশের জয়ের ঝুলি আছে ৯টি যা সত্যিই ক্রমানয়ে উন্নতির লক্ষণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। কেননা, এই অবস্থানে থেকে নিউজিল্যান্ড জয় পেয়েছে মাত্র ৭টি। ২০০৫, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৬ সালেই আসে বাংলাদেশের টেস্টের বিজয় সমূহ কিন্তু ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের সাথে বিজয়ে কেবল বাংলাদেশ আনন্দ উল্লাস করেছে বাকীগুলো প্রত্যাশিত বলে ধরে নেওয়া হয়েছিলো। তাছাড়া আগের ৮টি ম্যাচ জয়ের মধ্যে অধিকাংশই দেশের মাটিতে; বিদেশের মাটিতে জয় কিংবা প্রতিদ্ব›িদ্বতাপৃর্ণ খেলাই উপহার দিতে পারেনি। এর আগে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ কেবল দুর্বল জিম্বাবুয়ে আর দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে জয় পেলেও আর কোন দলের সাথে জয়ের দেখা পায়নি।
টেস্ট প্লেয়িং দেশ রয়েছে ১০টি কিন্তু শততম ম্যাচে জয় নিয়ে স্বরণীয় করে রাখার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ ছাড়া আর কেবল ৩টি দেশের রয়েছে যেমন ১৯১২ সালে অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, ১৯৬৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবং ১৯৭৯ সালে পাকিস্থান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তবে ডায়েরিতে কিংবা ইতিহাসে এই ঐতিহাসিক জয়ের রেকর্ডে এবার নাম লেখালো বাংলাদেশ। এই হিসেবে ১৯ মার্চ ২০১৭ সাল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য এক অবিস্মরণীয় দিন। বলা যায় এ যেন বিজয়ের মাসে স্মরণীয় অন্য এক বিজয়।
তবে কোচ হাথুরাসিংহে বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক জয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে যে আবেগের সৃষ্টি হয়েছে তার লাগাম টেনে ধরে আরো প্রফেশনাল হওয়ার যে আহবান জানিয়েছেন তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বাংলাদেশ কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়া বধের মধ্যদিয়ে যে আবেগে ভেসে যাচ্ছিল তা পরে আর দেখা যায়নি।
যাইহোক, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন সামাজিক, রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের খেলা সেখানেই সকল দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে খেলা দেখেন আর মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকেন যাতে বাংলাদেশ জিততে পারে। পরিশেষে জয়ের মধ্যদিয়ে সকলে বিভেদ ভুলে আবার বিজয় মিছিলে নেমে পড়েন। মনে হয়, বাংলাদেশে নেই কোন বিভেদ, নেই কোন হানাহানি কিংবা রেষারেষি; এই ঐক্য ও আবেগের মূল্য দেওয়ার সময় এখন বাংলাদেশের সামনে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্ষন্ত মাত্র ১০০ টেস্ট যেকোন দেশের জন্য কম বলে গণ্য হয় তাই আগামীতে বাংলাদেশ আরো বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে একই সাথে বাংলাদেশ তার স্বভাবসুলভ খেলা খেলে আগামীতে দেশে ও দেশের বাইরে আরো বেশি বেশি জয় উপহার দিবে এই প্রত্যাশা সবার। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর যেমনি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে স্মরণীয় হয়ে আছে, তেমনি ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশে ডায়েরিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক : প্রভাষক, দর্শন বিভাগ, ফেনী সাউথ ইস্ট ডিগ্রী কলেজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।