Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ট্রেন যাবে দার্জিলিং

৫২ বছর পর ঢাকা-দার্জিলিং রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে : রেলমন্ত্রী বললেন, জনগণের সেবা করাই আমাদের কাজ

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ট্রেনে যাওয়া যাবে ভারতের দার্জিলিং। বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার চিলাহাটি হয়ে রেললাইন যাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ি স্টেশন পর্যন্ত। প্রায় ৫২ বছর পর ঢাকা-দার্জিলিং রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দুই দেশেই পৃথক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কাজই হলো জনগণের সেবা করা। সেবার মনোভাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এতে করে জনগণের উপকার হবে, কল্যাণ হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। যা যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদনের জন্য একনেকে যাবে। চিলাহাটি থেকে ভারতের বর্ডার মাত্র সাড়ে ৭ কিলোমিটার। ভারত বিভাজনের আগে এ করিডোর দিয়ে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু ছিল। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর এই রুটে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, পুরাতন এই ট্রেন রুটটি আবার চালু হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি দার্জিলিংসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, নেপাল ও ভুটান যাওয়া অনেক সহজ ও আরামদায়ক হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ৬ মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে ১০ ঘণ্টায় যাওয়া যাবে নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি। সেখান থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। আর শিলিগুড়ি থেকে নেপাল সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার এবং ভুটানের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আবার চালু হচ্ছে ঢাকা-দার্জিলিং রেল যোগাযোগ। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী চিলাহাটি স্টেশনকে উন্নত করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি রেল লাইন। গত মাস থেকে ঢাকা-চিলাহাটি রেলপথে সরাসরি আন্ত:নগর ট্রেনও চালু হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনগুলোও এখন চিলাহাটি পর্যন্ত যাচ্ছে। চিলাহাটি থেকেই রেল লাইন সম্প্রসারণ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ি স্টেশন পর্যন্ত নেয়া হবে। এজন্য দুই দেশের পক্ষে পৃথক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমাদের দেশে যে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে তার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়ন করতে সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত। যদিও প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ৬ মাসের বেশি সময় লাগবে না। এছাড়া এটি রেলওয়ের নিজস্ব প্রকৌশলীদের তত্ত¡াবধানেই করা সম্ভব।
জানা গেছে, ঢাকার সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় পৃথক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শিগগিরই শেষ হবে। জানা গেছে, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট চালুর লক্ষ্যে চিলাহাটি অংশে ৭ কিলোমিটার এবং ভারতের হলদিবাড়ি অংশে ৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। মোট ১০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করলেই দু’দেশের মধ্যে এই করিডোরে রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, চিলাহাটি থেকে ভারতের সীমান্তব পর্যন্ত ব্রডগেজ কানেক্টিভিটি স্থাপনের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে করে মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃদ্ধিসহ নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে এই করিডোর দিয়ে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন পরিচালনার দুয়ার উন্মোচিত হবে। রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট বহু পুরাতন। এ দুটি স্টেশনে নতুন করে সংযোগ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটা চালু করতে পারলে পরবর্তী জেনারেশন উপকৃত হবে। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে চড়ে যাওয়া যাবে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং। পাশাপাশি আমরা আর্থিকভাবেও উপকৃত হব। যাত্রী চলাচলের পাশাপাশি স্টেশন দুটি চালু হলে মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি নেপাল-ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমও বৃদ্ধি পাবে। রেলওয়ের উপ-পরিচালক (অপারেশন) কালিকান্ত ঘোষ জানান, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেললাইন চালু হলে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি যেতে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা। বিলাসবহুল ট্রেনে ১০ ঘণ্টার ভ্রমণ মোটেও কষ্টের নয়। বরং মানুষ অল্প খরচে আরামদায়ক ভ্রমণে বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র দার্জিলিং-এ যেতে পারবে। তিনি বলেন, শুধু দার্জিলিং নয়, তখন খুব সহজেই ভারতের সাতটি প্রদেশসহ নেপাল ও ভুটান যাওয়া যাবে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি দার্জিলিং বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র দার্জিলিং। যেখানে মেঘ আর পাহাড় এক সাথে খেলা করে। দার্জিলিং শহরে হিমালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। এখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও গড় নিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দার্জিলিংয়ে বছরে গড়ে ১২৬ দিন বৃষ্টিপাত হয়। পাহাড় আর গাছপালায় ঘেরা দার্জিলিংয়ে বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর একেকটি একেক রকম। যা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে জাপানিজ টেম্পল এবং পেস প্যাগোডা, টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, কাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং মল, শহর থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট নিচে অবস্থিত রক গার্ডেন, প্রকৃতির অপরূপ শোভাময় গঙ্গামায়া পার্ক, তেনজিন রক, দৃষ্টিনন্দন চা বাগান, আভা আর্ট গ্যালারি ইত্যাদি। দার্জিলিংয়ে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আছে ক্যাবল কার, টয় ট্রেন, হিমালয় মাউন্টেন ইন্সটিটিউট, মিউজিয়াম ও চিড়িয়াখানা ইত্যাদি। উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও তরাই অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত দার্জিলিং জেলাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এখানকার পাহাড়ে নেপালিরাই প্রধান জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস শুরু করে। ভারত বিভক্তির পর তারাই সমতলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালিরাও এখানে বসবাস করা শুরু করে। এর আগে ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুতে দার্জিলিংকে অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত জেলা হিসেবে গণ্য করা হতো। এতে করে ব্রিটিশ ভারতের অন্যান্য জেলাতে প্রযোজ্য আইন এই অঞ্চলে বলবত হতো না। ১৯১৯ সালে এই অঞ্চলকে একটি পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখনকার সাথে যার আকাশ-পাতাল ব্যবধান।



 

Show all comments
  • zak ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:৪২ এএম says : 0
    Its a very interesting project so far. I was wandering is there any plan to start a new rail line between Sylhet to border town of Jokigonj. Which will be very help full for the local people and for the Bangladesh's economy. Also it will release the pressure on the Sylhet to Jokigonj road. This project can transform Sylhet into a regional business hub. I would make a humble request to the Bangladesh government, if you don't have this in your plan. Please consider the project as a priority, it will be a historical step for the development of Bangladesh economy.
    Total Reply(0) Reply
  • Tauhid ২১ মার্চ, ২০১৭, ৯:০২ এএম says : 0
    At first we should enrich internal communication,. Railway is the vital issue for country development ,Railway may be the profitable sector of our country,if we restore of its past contribution.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ