পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফগানিস্তানে সিরিয়ার মত হস্তক্ষেপ করতে পারে মস্কো
ভ্যালুওয়াক : আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূলে রাশিয়া, পাকিস্তান ও চীন একজোট হয়েছে। এটা এ ত্রয়ীকে আফগান সন্ত্রাসবাদকে শুধু তাদের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়া প্রতিহত করতেই সক্ষম করবে না, একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে পরাশক্তির মর্যাদা থেকেও নামিয়ে আনবে।
মস্কো, ইসলামাবাদ ও বেইজিং তাদের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে এক নতুন, ত্রিপক্ষীয় অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, আর এতে আফগানিস্তান হতে যাচ্ছে ও ত্রয়ী ও বাকি বিশে^র মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
৮ মার্চ কাবুলের সরদার দাউদ হাসপাতালে এক ভয়াবহ বোমা হামলায় ৩০ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস, আরেক নাম ইসলামিক স্টেট বা আইএস) এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। এ ঘটনার পর আর কোনো সন্দেহ নেই যে আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অসংখ্য চেষ্টা করা সত্তে¡ও আফগানিস্তানের মাটিতে সক্রিয় সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর কমপক্ষে অর্ধেককেই সে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে। আফগানিস্তানে মার্কিন শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল জন নিকলসন গত ডিসেম্বরে প্রকাশ করেন যে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বৈশি^ক সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত ৯৮টি গ্রæপের মধ্যে ২০টিই আফগানিস্তানে তৎপর রয়েছে। বিশে^র অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে সবচেয়ে বেশী সন্ত্রাসী গ্রæপের সমাবেশ ঘটেছে আফগানিস্তানে।
রাশিয়া, পাকিস্তান ও চীন আফগানিস্তানে একজোট হচ্ছে
পূর্ব আফগানিস্তানে যখন ক্রমেই বেশী মাত্রায় চীনা উপস্থিতির খবর মিলছে, সে অবস্থায় রাশিয়া ও পাকিস্তানও আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে নাছোড়বান্দা হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় ১৫০ ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান গত মাসে দেশব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান শুরু করে এবং আফগান সীমান্তে সন্ত্রাসবাদীদের লুকিয়ে থাকার স্থানগুলোতে হামলা চালায়।
সন্ত্রাসবাদ ও আফগানিস্তান বিষয়ক আঞ্চলিক বৈঠকগুলোতে রাশিয়া এক সক্রিয় চালকশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ১৫ ফেব্রæয়ারি মস্কো পাকিস্তান, চীন, ইরান, ভারত ও আফগানিস্তানের সাথে ৬ দেশীয় বৈঠকের আয়োজন করে। এ ৬ দেশীয় আলোচনার আগে অনুষ্ঠিত এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে রাশিয়া শুধু চীন ও পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ করে।
আফগানিস্তানে রাশিয়া-চীন যৌথ হস্তক্ষেপ
এ মাসের গোড়ার দিকে নাম অজানা এক পাকিস্তানি সেনা সূত্র হুঁশিয়ার করে বলে যে যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার অবসান করতে না পারে, রাশিয়া করবে। সূত্র ব্যাখ্যা করে বলে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যদি আফগানিস্তানে আইএসআইএস বা তালিবানের অগ্রযাত্রা থামাতে ব্যর্থ হয় তাহলে রাশিয়া আফগানিস্তানে সিরিয়া ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারে।
আফগান পুনর্গঠন বিষয়ক বিশেষ মহাপরিদর্শক (এসআইজিএআর বা সিগার)-এর ফেব্রæয়ারির রিপোর্ট অনুসারে ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ দেশের ৫৭.২ শতাংশ এলাকা আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ আফগান সরকার দেশের ৬৩.৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। তবে ওয়াশিংটন ও কাবুল আফগানিস্তানে তালিবানদের নতুন করে অগ্রগতির কথা অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগান সমস্যাকে আসলেই তার স্বার্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে না, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ওয়াশিংটনের হাতে যখন করার মত অনেক কিছু রয়েছে, সে সময়ে রাশিয়া, চীন ও আফগানিস্তান তাদের সীমান্তের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসবাদে পুড়ে মরার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে চলেছে।
পাকিস্তানে সর্বশেষ একের পর এক হামলা যদি তারই আভাস হয়, তাহলে ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে যে আইএসআইএস ও এ অঞ্চলের সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো সিরিয়া ও আফগানিস্তানের বাইরে বহু দূর পর্যন্ত তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
রাশিয়া, পাকিস্তান ও চীনের সন্ত্রাসবাদের আগুনে পোড়ার ঝুঁকি
এ কারণে শুরুতেই মস্কো, বেইজিং ও ইসলামাবাদের আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্র্মূল করা প্রয়োজন। চীনা সামরিক বাহিনী পূর্ব আফগানিস্তানে কর্মকাÐ চালাচ্ছে বলে প্রকাশিত খবর চীন যখন অস্বীকার করা অব্যাহত রেখেছে, সে সময় রাশিয়া ভারতের সাথে তার বহু দশকের বন্ধুত্ব সত্তে¡ও চীন ও পাকিস্তান উভয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ভারত চীন ও পাকিস্তান উভয়ের প্রতিদ¦›দ্বী।
মধ্য এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রাশিয়ার স্বার্থের প্রতি সরাসরি হুমকি যার অর্থ এই যে সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো রাশিয়ার সীমান্তে দাঁড়াবে এবং তারা পাকিস্তানে সম্প্রতি যে রকম করেছে সেভাবে রাশিয়াতেও সন্ত্রাস ও গোলযোগ বয়ে আনবে। এ অঞ্চলে তালিবানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি কি করছেন তা পুতিন জানেন না বলে চীনা মিডিয়া মন্তব্য করলেও কেউ এটা বলতেই পারে যে যেহেতু পুতিন এ ব্যাপারে কথা বলছেন সেহেতু তিনি এ অঞ্চলে একটি বড় ধরনের, দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত খেলা খেলতে যাচ্ছেন।
শুধু এটাই নয়।
রাশিয়ার লক্ষ্য বিশে^ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য হ্রাস করা
বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট মেয়াদে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। তাছাড়া ওবামা এ অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব বহাল রাখার ব্যাপারে তা আগ্রহের অভাব প্রদর্শনের পাশাপাশি সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করেন যার পরিণতিতে রাশিয়া সিরিয়া পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের বিষয়টি সর্বোচ্চে রেখে মস্কো এ অঞ্চলের প্রধান খেলোয়াড়দের সাথে সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করেছেঃ ইরাক, ইরান, ইসরাইল, মিসর ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়া পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক জোরদার করেছে এবং এ প্রক্রিয়ায় ভারতের বন্ধুত্ব হারায়নি।
মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার চূড়ান্ত পর্যায়ে রাশিয়াকে এ অঞ্চলে প্রধান বিদেশী খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্রের স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবে। কেউ বলতে পারে যে এত সহজে আফগানিস্তানকে পরিত্যাগ অনিবার্যভাবে এ অঞ্চলে মার্কিন প্রভাবকে সংকুচিত করবে এবং এমনকি বিশ^ পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তার মর্যদাও হারাতে পারে।
চীন, যে বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট আমলে যুক্তরাষ্ট্রকে তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে দেখে ও বিশে^ মার্কিন প্রাধান্যের অবসান ঘটাতে চায়, এ অঞ্চলে দৃঢ়ভাবে পা রাখতে নিশ্চিতভাবে রাশিয়ার সাথে হাত মিলাবে। আমেরিকার বহু অবহেলা-উপেক্ষার শিকার পাকিস্তানও (ভারতের সাথে ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্ব যার একটি) রাশিয়া ও চীনের সাথে যোগ দিতে ও ত্রয়ী জোট গঠনে সমানভাবে আগ্রহী।
ট্রাম্প কি এত সহজে মধ্যপ্রাচ্যকে পরিত্যাগ করবেন?
যে কেউ বলতে পারেন যে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে তার স্বার্থ এত সহজে পরিত্যাগ করবে না। শুধু ২০০২ সালেই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ১১৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী ব্যয় করেছে। যাহোক, আফগানিস্তান সমস্যাকে রাশিয়া, চীন ও পাকিসÍানের নিজের হাতে তুলে নিতে বাধা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোনো নিরেট পদক্ষেপ নেয়নি।
আফগান সমস্যার চিরতরে সমাধানের অংশ হিসেবে রাশিয়া তালিবানের সাথে সংলাপে নিয়োজিত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গেছে। তালিবানের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা সেখানে সিরিয়া ধরনের হস্তক্ষেপের জন্য আফগান মাটিতে সহায়ক শক্তি সৃষ্টিতে রাশিয়াকে সক্ষম করবে।
বস্তুত, মস্কো যদি সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয় এবং সেক্ষেত্রে যদি চীন ও পাকিস্তানকে তার সম্ভাব্য সহযোগী হিসেবে পায় সেক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন কি রাশিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে তার বড়মাপের কৌশলগত খেলা শুরু করতে বাধা দেবে? নাকি ট্রাম্প সিরিয়ায় ওবামার কৌশল গ্রহণ করবেন ও হস্তক্ষেপ করবেন না?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।