Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুপ্রিম কোর্ট ও গ্রিক দেবীর মূর্তি প্রসঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম : গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনকে কেন্দ্র করে আজ দেশের সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাতীয় ঈদগাহের গা ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে গ্রিক দেবীর মূর্তি। যদিও দাবি করা হয়েছে তা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে তা না কিন্তু। এটায়ও মাথার রাখা চাই, তার কূলঘেঁষে বসে আছে জাতীয় ঈদগাহ। তাইতো মূর্তিটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হচ্ছে, এটা বলাও যুক্তিযুক্ত না। বাস্তবতা হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহর সাথেই স্থাপিত হয়েছে মূর্তিটি। এবং সুপ্রিম কোর্টের যে গেইটটির চত্বরে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে সেটা জাতীয় ঈদগাহের একটি প্রবেশদ্বার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
আমার জানা মতে, ইসলাম ধর্মানুসারে মূর্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, আর সেখানে গ্রিক পৌত্তলিকতার মূর্তি ভাড়া করে কোন যুক্তিতে আনা হচ্ছে সেটাই হতবাক হওয়ার মত বিষয়। এই মূর্তির মধ্যে না আছে জাতীয় চেতনার কোন সম্পর্ক, না আছে ধর্মীয় পরিচয়ের কোন সম্পর্ক। না আছে স্বাধীনতার কোন সম্পর্ক। আমার মনে হয়, অহেতুক এই মূর্তিটি বসিয়ে সরকার শুধু শুধু ধর্মীয় অস্থিরতা বৃদ্ধি করছে এবং মুসলমান ও আওয়ামী সরকার এবং জনগণের মাঝে দ্ব›দ্ব তৈরি করছে। সরকারের উচিত, দ্রæত তা ভেঙে ফেলে নিজস্ব একক মতাদর্শ থেকে সরে আসা, নয়তো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সঙ্গে অযথাই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে হয়। আমরা জানি, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি মুসলিম দেশ। এ এশের মানুষ খুবই ধর্মপ্রাণ। সুতরাং অন্তত একথাটি মাথায় রেখে সরকারের উচিৎ ছিল মূর্তিটি স্থাপন না করা। ঐতিহ্য বা ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে মিল রেখে ভাস্কর্যটি করা হলে আপত্তি ছিল না। কিন্তু এটি গ্রিক দেবি অন্য দেশীয় চেতনাকে খামাখা হায়ার করে এনে স্থাপন করা হয়েছে। সেটাই আজ আমজনতা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আপত্তি। গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গ্রিক দেবীর যে মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আদর্শিক চেতনার বিপরীত। এটা বোধহয় বাংলাদেশের কেউই তা মেনে নিতে প্রস্তুত না। চাই সে যেকোনো ধর্ম বর্ণের হোক। গ্রিক দেবী থেমিসের গায়ে শাড়ি পরিয়ে, এটিকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য প্রমাণেরও অপচেষ্টা করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের এবং তাদের চিন্তা-চেতনা ও দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অদৃশ্য শক্তির বুড়ো আঙ্গুল দেখানো বৈ কিছু না।
উল্লেখ্য যে, ১৯৪৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হয়। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ছিল দাঁড়িপাল্লা। বিগত ৬৮ বছর ধরেই দাঁড়িপাল্লা শোভা পাচ্ছিল সুপ্রিম কোর্টে। কেউ এর বিরুদ্ধে এই ৬৮ বছর ধরে একটি প্রতিবাদও করেনি। ৬৮ বছর পর হঠাৎ করে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লার জায়গায় গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হলো কেন? গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে তারা কোন ধরনের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন সেটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। তাহলে কি বিগত ৬৮ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টে কি কোনো ন্যায়বিচার হয়নি?
এর মাধ্যমে কি এটাই বোঝানো হচ্ছে যে, আমাদের উচ্চ আদালত শাড়ি পরিহিতা গ্রিক দেবী থেমিসের অনুসারী? আমাদের এই আদালত চলবে গ্রিক দেবীর আদেশের মাধ্যমে? এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে কি বাংলাদেশের আইন-আদালত এবং বিচার ব্যবস্থাকে গ্রিক দেবীর অধীনস্থ করা হচ্ছে না? তারা কি চাচ্ছেন, বাংলাদেশের মানুষ দেবী থেমিসের অনুরক্ত হোক এবং তার প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা দিনের পর দিন বাড়তে থাকুক?
এখন থেমিস সম্পর্কে দুটো কথা। হিন্দু পুরানের দেব-দেবীরা বাংলাদেশে যত পরিচিত গ্রিক পুরানের দেব-দেবীরা তত পরিচিত নন। সে জন্য গ্রিক দেবী থেমিসের কিছুটা পরিচয় দেয়া দরকার। ১২ জন গ্রিক দেব-দেবীর মধ্যে থেমিস ছিল আইনশৃঙ্খলার দেবী। গ্রিক ভাষায় থেমিস শব্দের অর্থ হলো ঐশ্বরিক বা স্বর্গীয় আইন। থেমিস বা টাইটানদের কাহিনী হলো পৌরাণিক। বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব কোনোকালে ছিল না। সেই পৌরাণিক কাহিনীর এক দেবীকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে কেন? খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কাহিনী দেবী থেমিসে পার্সোনিফাইড হয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে শোভা পাবে কেন? নীতিনৈতিকতা এবং ইনসাফের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে গ্রিক তথা খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কাহিনী থেকে ধার করে আনতে হবে কেন? যে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান সেই বাংলাদেশে কল্পনার দেবী থেমিসকে সুপ্রিম কোর্টে বসাতে হবে কেন? ৬৮ বছর ধরে যে দাঁড়িপাল্লা ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে উদ্ভাসিত ছিল সেটিকে হঠাৎ করে নির্বাসনে পাঠিয়ে গ্রিসের খ্রিস্টান দেবীকে আমদানি করতে হবে কেন? সুপ্রিম কোর্টে যদি ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতে হয় তাহলে পবিত্র কোরআন অথবা পবিত্র হাদিসের এক বা একাধিক পাক কালাম উদ্ধৃত করা হয়নি কেন?
কোরআন শরিফ বা হাদিস শরিফের সত্য ও ন্যায়ের অমীয় বাণীর কি অভাব হয়েছে? আমরাও তাই মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে শাড়ি পরিহিতা গ্রিক দেবী থেমিসকে অবিলম্বে অপসারণ করা হোক। আর ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে পবিত্র কোরআন শরীফের প্রতিকৃতি স্থাপন করা হোক। এটা একজনের কথা না। এক গোত্রের কথা না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি। বাংলাদেশের মানুষ চায় অন্তত এটা নিয়ে যেনো কোন রাজনীতি না করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট হলো সবার ন্যায় বিচারের শেষ আশ্রয় কেন্দ্র। এটা বিবেচনা করে গ্রিক দেবীর অপসারণ সবার দাবি।
লেখক : শিক্ষার্থী, দেওবন্দ, ভারত



 

Show all comments
  • khandaker sadekur rahman ১৫ মার্চ, ২০১৭, ৯:২৮ এএম says : 0
    আমারা মূর্তির অপসারণ চাই
    Total Reply(0) Reply
  • Saddam Hossain Joy ১৫ মার্চ, ২০১৭, ২:১০ পিএম says : 1
    কোন ধর্ম কে আবমাননা করার অধিকার আদালত পেল কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • Harisul Alam ১৫ মার্চ, ২০১৭, ২:১১ পিএম says : 0
    যদি কালচারের কথা বলতে হয় তবে বলতে হবে বিচারালয়ে মূর্তি স্থাপন আমাদের নয় বৃটিশদের কালচার। তাই এটা ভেঙ্গে ফেললে কিংবা সরিয়ে ফেললে এদেশের গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া কেউ কোন কষ্ট পাবে বলে মনে হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohamed Eman ১৫ মার্চ, ২০১৭, ২:১১ পিএম says : 0
    মূর্তি্ ভেঙ্গে ফেলা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • abul bashar ১৫ মার্চ, ২০১৭, ১০:০৬ পিএম says : 0
    I LIKE TO KNOW WHOSE IDEA WAS THIS ? DOES PRIME MINISTER KNEW THIS ?
    Total Reply(0) Reply
  • আবু বকর ২১ মার্চ, ২০১৭, ৪:২৩ পিএম says : 0
    মাশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • ২১ মার্চ, ২০১৭, ৮:১৭ পিএম says : 0
    এদেশের ৯০ ভাগ মানুষের হ্নদ্যতার সম্পর্ক ইসলাম এর সাথে। তাই দেশের চেতনা, সংস্কৃতি আদর্শ রক্ষার্থে গ্রীক দেবির মুর্তি ভেংগে ফেলা হোক। তা দেশের সকলের দাবী। . লেখক আমার ভাগিনা আল্লাহ তাকে কলম-শ্রমিক হিশেবে বেশ ও উন্নিত করুক
    Total Reply(0) Reply
  • Nasym ২২ মার্চ, ২০১৭, ২:৩৪ এএম says : 0
    WAIT BROTHERS, THERE WILL BE "SWARASSWATI MURTI"(IDOL) BEFORE EVERY EDUCATIONAL INSTITUTIONS VERY SOON!
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ২৪ মার্চ, ২০১৭, ৯:২৫ পিএম says : 0
    সবাই এমনভাবে লেখালেখি শুরু করেছেন যেন যতো দোষ সবই কেবল ওই গ্রীক দেবী থেমিসের। বাঙ্গালী দেবী হলে মনে হয় কোন সমস্যাই হতো না। আর এজন্যই সম্ভবতঃ অবস্থা বুঝে স্থপতিরা থেমিসের পরন থেকে শার্ট-প্যান্ট খুলে নিয়ে শাড়ি জড়ায়ে বাঙ্গালী মুর্তি বানিয়ে দিয়েছেন। তবু কেন সবাই গ্রীক দেবী বলে বলে শোর তুলছেন? সবাই এটাই বলুন না, গ্রীক দেবীর হোক আর শ্রীদেবীরই হোক, কোন মুর্তিই ওখানে থাকতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন