Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনপ্রশাসনে দু’টি ব্যাচের কর্মকর্তাদের চাপে আটকে গেল বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তালুকদার হারুন : জনপ্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ঝুলে গেছে। প্রশাসনের দু’টি ব্যাচের কর্মকর্তাদের চাপে শেষ পর্যন্ত আটকে গেল এই পদোন্নতি। বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় প্রশাসনে তিন স্তরে প্রায় চার শতাধিক বঞ্চিত কর্মকর্তার পদোন্নতির মহতী উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়ালো সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) নীতি-নির্ধারকরা। অথচ এ মাসেই বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত ছিল। জানা গেছে, একটি মহলের প্রবল চাপে শুধুমাত্র বঞ্চিতদের পদোন্নতি নয়, সবার জন্যই পদোন্নতির দ্বার খুলতে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব পদে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়ার জন্য সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) কয়েক দফা সভা ইতোমধ্যেই কমপক্ষে ১৫ বার সভা করেছে। দফায় দফায় সভা করে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড চূড়ান্ত করে ফেলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি। কিন্তু প্রশাসনের দু’টি নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তারা এ পদোন্নতিতে বাধ সাধেন। তারা এই পদোন্নতি প্রক্রিয়া আটকাতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির শুরু করেন। তাদের তদবিরের কারণেই প্রশাসনের নীতি-নির্ধারকরা অবশেষে শুধুমাত্র বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিয়ে পদোন্নতি প্রত্যাশী সকল কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে সায় দেন। নীতি-নির্ধারকদের এমন সম্মতির প্রেক্ষাপটে নতুন করে প্রশাসনের দু’টি নিয়মিত ব্যাচসহ বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানা গেছে। বলা হচ্ছে, আগামী মাসের মাঝামাঝি এই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হবে। উল্লেখ্য, জনপ্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে এখন কর্মকর্তার সংখ্যা ২ হাজার ৫৭৩ জন। অথচ এই তিন স্তরে পদ রয়েছে ১ হাজার ২০৩টি। যদিও প্রশাসনে কোনো শূন্য পদ নেই। বরং প্রতিটি পদের বিপরীতে অসংখ্য কর্মকর্তার উপস্থিতি প্রশাসনকে ভারী করে তুলেছে।
জানা গেছে, ১৯৮২ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি চাকরিতে যোগ দিয়েছেন সেসব ব্যাচের অন্তত হাজার খানেক কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বিভিন্ন ধাপে (উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব) পদোন্নতি পাননি। এবার তাদেরকেই বিশেষ সুযোগ দিতে পদোন্নতির প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে একাধিকবার পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আর এ প্রক্রিয়ায় বঞ্চনার ঘটনাও ঘটেছে অতীত সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায়। বিপরীত চেতনার চিহ্নিত করার পাশাপাশি কাকে টপকাতে পারলে কার পদোন্নতি নিশ্চিত হবে সে বিবেচনা মাথায় রেখেই পদোন্নতি হয়েছে। আর এতেই ‘কপাল পুড়েছে’ অনেকের। সুশাসনের কথা বলে ‘দলীয় আর নীতি-নির্ধারকদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের’ নিরিখে দেয়া পদোন্নতিতে বঞ্চিত থাকতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই ।
একটি সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনে এখন সরকারবিরোধী আমলার সংখ্যা কম। সরকারবিরোধীরা পদোন্নতি বঞ্চনা ও নানা চাপে চুপসে আছেন। এদের অধিকাংশই কোণঠাসা, ওএসডি ও কম গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। এসব কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন যাবতই পদোন্নতি বঞ্চিত। প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা বার বার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। জানা গেছে, বঞ্চিত কর্মকর্তারা এবার পদোন্নতি পেতে অনেকটাই মরিয়া। এদের মধ্যে অনেকেই এবার আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী পরিবারের সদস্য না হয়েও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে তাদেরকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কেউ কেউ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকে নগদ অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ‘আওয়ামী পরিবারের সদস্য’ হিসেবে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত বছরের ৬ এপ্রিল তিন স্তরে বড় আকারের পদোন্নতি দেয়া হয়। এ সময় অতিরিক্ত সচিব পদে ২৩১ জন, যুগ্ম-সচিব পদে ২৯৯ জন এবং উপ-সচিব পদে ৩৪২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ফলে বর্তমানে মঞ্জুরিকৃত পদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচিবের ১০৭ পদে ৩৭৩ কর্মকর্তা, যুগ্ম-সচিবের ৪৩০ পদে ৮৬৯ জন এবং উপ-সচিবের ৮৩০ পদে ১,৮১৮ কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের অধিকাংশকে পদোন্নতি-পূর্ব পদে থেকেই কাজ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিব করছেন যুগ্ম-সচিবের কাজ, যুগ্ম-সচিব করছেন উপ-সচিবের কাজ, উপ-সচিব করছেন জ্যেষ্ঠ সরকারি সচিবের কাজ। অনেকের আবার মঞ্জুরিকৃত পদ জোটেনি। সুপারনিউম্যারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদে থেকে বিড়ম্বনার মধ্যেই আছেন তারা। তবুু পদোন্নতি পাওয়াটাকে গৌরবের বলেই মনে করেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জানা গেছে, যারা কাক্সিক্ষত পদোন্নতি পেয়ে গেছেন, তাদের অধিকাংশই চান না নতুন করে পদোন্নতি দেয়া হোক। তাদের বক্তব্য হচ্ছেÑ নতুন করে পদোন্নতি দেয়া হলে এখনতো অতিরিক্ত সচিব যুগ্ম-সচিবের পদে কাজ করছেন, এবার পদোন্নতি হলে উপ-সচিবের পদেও তাদের কাজ করতে হবে। আর শাখা কর্মকর্তা বলতে পদের চিহ্নও থাকবে না। মাঠ প্রশাসনে এডিসিরা উপ-সচিব হয়েও সেখানেই থাকবেন। ডিসিরাও যুগ্ম-সচিব হয়ে থাকবেন। নানা ধরনের বিশৃংখলা তৈরি হবে।
কিন্তু সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মত ভিন্ন। তাদের কথা যেসব কর্মকর্তা ন্যায্য পদোন্নতির যোগ্য, তাদেরকে পদোন্নতি না দেয়াটা হবে অন্যায়। প্রশাসন থেকে এ ধরনের অন্যায় দূর হওয়া প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনপ্রশাসনে দু’টি ব্যাচের কর্মকর্তাদের চাপে আটকে গেল বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ