পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : আর মাত্র দুইদিন পরেই এবারের মতো মেলা শেষ হচ্ছে। গতকাল বই নিতে বাংলা একাডেমি অংশে যুবজাগরণ নামের একটি স্টলে ৪টায় লাইন শুরু হয়। কিন্তু বই দিবে বিকাল পাঁচটায়। সন্ধায়ও দেখা যায় ওই স্টলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে বই কিনছেন মেলায় আগতরা। পাঠকদের লম্বা লাইন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি জন্য। কারণ মাসজুড়েই বইটি ছাড় দিয়ে ‘যুবজাগরণ’ বিক্রি করছে মাত্র ১০০ টাকায়। স্টল সূত্রে জানা গেছে, মেলায় এই পর্যন্ত বইটি ১৬ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। বাকি দুইদিনে আরো ৫ হাজার কপি চলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
মেলার শেষ সময়ে গতকাল দেখা গেছে এমন ভিড় প্রায় প্রতিটা স্টলেই। তবে অন্য স্টলে লাইন না থাকলেও ঠেলাঠেলি করে সবাই তাদের পছন্দে বইটি কেনার কাজে ব্যস্ত। অবসর প্রকাশনের বিক্রয় কর্মী জানান, শুক্রবার প্রায় আড়াই লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। আশা করছি আজও এমনই বিক্রি হবে। তিনি আরো বলেন, এখন যারাই দর্শণার্থী তারাই ক্রেতা। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শাহাদাত হোসেনের দু’হাত ভরা বই। তিনি জানান, হাজার তিনেক টাকা ভেঙেছেন এখন পর্যন্ত। জানালেন, ট্রেনিং করতে ঢাকায় এসে সুযোগ বুঝে মেলায় চলে আসা। বইগুলো সারা বছর ভরে পড়বেন।
এই বছর যে সব বই মেলায় বেশি চলছে তার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইটিও। এটির মূল্যও ছাড় দিয়ে সরবরাহ করছে ১০০ টাকায় যুবজাগরণ স্টল। বইটি ৮ হাজার কপির মতো বিক্রি হয়েছে। তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত জাফর ইকবালের ক্রেনিয়াল অন্যতম। হুমায়ুন আহমেদের সাবেক স্ত্রী গুলতেকিনের ‘আজো, কেউ হাঁটে অবিরাম’। বইমেলার প্রথম দিনেই প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপির স্টলে আসে। ওই স্টলে বইটি সব থেকে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানান বিক্রয় কর্মীরা। ঐতিহ্য থেকে মারশাফির জীবনী বইটিও বেশ বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন প্রকাশক আমজাদ আলী। তিনি জানান, বইটি প্রায় দুই হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। অবসর প্রকাশনী থেকে হরিশংকর জলদাসের কসবি নামের একটি বই বেশ চলছে বলে জানালেন বিক্রয় কর্মী। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ শত কপি বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও বেশি বিক্রিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আনিসুল হকের মা নামের বই, সৈয়দ আবুল মাকসুদের প্রথমা থেকে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নামের বইটি।
স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে সঙ্গে কথা হয় যুবলীগের উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মানুষ জানতে চায়। এখানে কোনো দলের বিষয় নয়। সব ধরনের-পদের মানুষের আগ্রহ জাতির জনককে ঘিরে। তাই তার বইটি অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমরাও কম দামে দিচ্ছি কারণ সবার হাতেই যেন বইটি পৌঁছে যায়।
গ্রন্থমেলায় হুমায়ুন আজাদ স্মরণ
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে লেখক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার উদ্দেশে পরিচালিত হামলার বার্ষিকী স্মরণে গতকাল বিকেল ৫টায় একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি চত্বরে তথ্যকেন্দ্রের সামনে লেখক-পাঠক-প্রকাশক ফোরামের আয়োজনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনির সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সমাবেশে বক্তরা বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের যেমন প্রগতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণের আন্দোলনে সক্রিয় থাকতে হবে তেমনি অতিদ্রুত হুমায়ুন আজাদ হত্যা চেষ্টা মামলার নিষ্পত্তি এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান গতকাল বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে একাডেমি পরিচালিত কয়েকটি পুরস্কার ঘোষণা করেন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য মাওলা ব্রাদার্স-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার। ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য ভূমেন্দ্র গুহ সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশের মূলানগ পাঠ-ভূমিকা ও কবিতা গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশনস্ লিমিটেড, নিমফিয়া পাবলিকেশন ও তাসলিমা মুন রচিত আমি একটি বাজপাখিকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম গ্রন্থের জন্য পাঠসূত্র-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৬ দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার প্রদান। ২০১৬ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সময় প্রকাশন, মধ্যমা পাবলিকেশন ও জ্যার্নিম্যান বুকস্কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬’র সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পুরস্কার পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ৬ দফার পঞ্চাশ বছর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রাজনীতিবিদ নূহ-উল আলম লেনিন, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি: বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মোস্তফা জব্বার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাতীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার এবং তারিক সুজাত। সভাপতিত্ব করবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাংবাদিক মিজানুর রহমান তোতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
খ্যাতিমান সাংবাদিক মিজানুর রহমান তোতার নতুন গ্রন্থ ‘ক্ষতবিক্ষত বিবেক’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন এবং ফিচার সম্পাদক ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর। ইনকিলাব ভবনে গতকাল মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মুন্সী আবদুল মান্নান, ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক এ এস এম হাফিজুর রহমান, চিফ রিপোর্টার রফিক মুহাম্মদ, মফস্বল সম্পাদক জামান সৈয়দী, পরিচালক (মার্কেটিং ও প্রশাসন) আব্দুল কাদের, জিএম (হিসাব ও অর্থ) সিরাজুল ইসলাম, আহসানুর রহমান গালিব (আইটি এক্সিকিউটিব) প্রমুখ। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, এখানে উপস্থিত আছেন আমাদের গর্ব অহংকার, ভাষা আন্দোলনের প্রতীক অধ্যাপক আবদুল গফুর। তিনি শুধু ভাষা সৈনিক নন, ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমুদ্দুন মজলিসের অন্যতম সদস্য। তিনি তমুদ্দুন মজলিসের পত্রিকা ‘সৈনিক’ এর সম্পাদক। তার উপস্থিতি আজকের এ অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত ও সার্থক করেছে। তিনি বলেন, মিজানুর রহমান তোতা একজন পরীক্ষিত সাংবাদিক। তার লেখা খুব চমৎকার। এর আগেও তার বই বেরিয়েছে। এ বইটিও সবার ভাল লাগবে বলে আমি মনে করি।
বইয়ের লেখক মিজানুর রহমান তোতা তার অনুভূতি প্রকাশে বলেন, আমার লেখার অনুপ্রেরণা মাননীয় সম্পাদক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। সেই সাথে ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক অধ্যাপক আবদুল গফুরকে এ অনুষ্ঠানে পাওয়া সত্যি সৌভাগ্যের বলে মনে করি। আমার লেখা এ বইয়ের কলেবর মোটা না হলেও মান সমৃব্ধ লেখায় এটি সুখপাঠ্য। পাঠকদের ভাল লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।
‘ক্ষতবিক্ষত বিবেক’ একটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ। মিজানুর রহমান তোতা তার সাংবাদিকতা জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা এ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। এই পেশা তাকে যেমন সম্মানিত করেছে অন্যদিকে তার জীবনকে করেছে ঝুঁকিপূর্ণ। নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ প্রায় চার দশক এ পেশায় যুক্ত দৈনিক ইনকিলাবের যশোর ব্যুরো চিফ মিজানুর রহমান তোতা। তার এই অভিজ্ঞতার নিপুণ বর্ণনা এ গ্রন্থে পাওয়া যাবে। এর আগে লেখকের আরও একটি গ্রন্থ ‘মাঠ সাংবাদিকতা’ প্রকাশিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।