বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
ড. ইশা মোহাম্মদ : শিশু-কিশোরদের পাঠ্যবই নিয়ে বিস্তর বাড়াবাড়ি রকমের কেচ্ছা-কাহিনী চলছে। ন্যায়-অন্যায়ের অসংখ্য ঘটনা তো ঘটেছেই। কিন্তু ওইসব ভুলভাল ও ন্যায়-অন্যায়ের ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করা আর যাই হোক গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার পরিচয় বহন করে না। তবে বেশ কয়েকটি ‘ভুল’ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়। যেমন- শেখ হাসিনার ছবির নিচের একটি শব্দের ভুল বানান, মূলত শেখ হাসিনাকে হেয় করার সার্থক প্রয়াস বলেই মনে হয় এটিকে। যারা করেছে তারা বেশ দুষ্টবুদ্ধিসম্পন্ন এবং পটু। তবে এদেরকে সরাসরি দোষ দেয়াটা ঠিক হবে না। এরা সুযোগ সন্ধানী এবং সুযোগ পেয়েছে বলেই অপকর্ম করেছে। যে সুযোগ দিয়েছে, সেই প্রকৃত অপরাধী।
সরকারের পাঠ্যবই তৈরির দায়িত্বে আছে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান। তারা লোক ঠিক করে পাঠ্যবই লেখায়। আবার ইংরেজিতে অনুবাদও করায়। ওইসব পাঠ্যবই রচনাকারক কে? অনুবাদকও বা কে? তারা কোন গুণে গুণান্বিত? শিশুদের পাঠ্যবইয়ের ব্যাপার বুঝে না, তারাই এখানে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। কিই বা আশা করা যায় ওইসব পন্ডিতের কাছ থেকে? তারা অবশ্য দায়িত্ব স্বীকার করেন না। কেননা, তারা ওইসব চেয়ারে বসেছেন বদলি হয়ে আসার কারণে। তারা ওই কাজের কাজী, এমন দাবি তারা করেন না। এসব পাঠ্য-পুস্তক তৈরি করার কাজে একজন সম্পাদক এবং অনেক সহকারী সম্পাদক থাকেন। তারা সম্পাদনা করার কি অধিকার রাখেন? সম্পাদনা বিষয়ক জ্ঞানকান্ডের ওজন করা হয়েছিল কি? ওই প্রতিষ্ঠান তার প্রয়োজনই মনে করেনি। কেননা, তারা ভাবে, শিশুপাঠ্য নিয়ে চিন্তার বা দুশ্চিন্তার কিইবা আছে। এতকাল যাচ্ছেতাই-ই তো পড়ানো হচ্ছে। কেউই তো কিছু বলছে না। তাহলে এখন যদি যাচ্ছেতাই পড়ানো হয় তবে কার কিই বা এসে যায়? প্রকৃত অর্থে শিশু পাঠ্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা হয়নি কখনই।
অপাঠ্য কুপাঠ্যই পাঠ্য হয়েছে শিশুদের। অসংখ্য বানান ভুল ও তথ্যগত ভুল ধরা পড়ার কারণে অনেকেই ক্ষেপেছেন। কিন্তু ক্ষ্যাপার প্রকৃত কারণে কেন ক্ষেপছে না?
শিশুপাঠ্য ‘সংকলন’ হয়েছে। কে সংকলন করেছে? সংকলনের নীতিমালা কী? কারা নীতিমালা তৈরি করেছেন?
বাংলাদেশে শিশু শিক্ষার ইতিহাসে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম আছে। বাল্য শিক্ষা প্রথমভাগ, দ্বিতীয়ভাগ ইত্যাদির কথাও আছে। সে সময়ের পন্ডিতরা শিক্ষার অহংকার অনুভব করতেন। পারতপক্ষে সমালোচনার সম্মুখীন হতেন না। সে সময়ের প্রকাশকরা দায়িত্ববান ছিলেন। লেখক এবং প্রকাশকের ঐক্যেই বই ছাপা হতো। তারপরও ভুল থাকত। কিন্তু বাল্য শিক্ষায় কোনো ভুল থাকত না। ভুল না থাকার প্রধান কারণ একটাই- লেখকের দায়িত্ব গ্রহণ। এখনকার লেখকরাও দায়িত্ব নেন। কিন্তু সে মাত্র গুটিকয়েক প্রকৃত লেখক। তাছাড়া অসংখ্য লেখক আছেন, যারা দায়িত্ব নেয়ার অর্থও জানেন না। তারা দায়িত্ব নিলেই কি বা না নিলেই কি?
হয়তো লেখক নির্ভুল লিখলেন। কিন্তু প্রকাশক কি নির্ভুল ছাপাবেন? গ্যারান্টি দেয়া যায় না। প্রকাশ করার জন্য যে সময় দেয়া প্রয়োজন সে সময় দেয়ার সময় লেখকদের নেই। এখন লেখকদের অসংখ্য কাজ থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু বই আছে, যেসব বই লিখে খুব একটা কামাই হয় না। এ কারণে প্রকৃত লেখকরা শিশুপাঠ্য লিখে সময় ব্যয় করেন না। অনুবাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যোগ্য অনুবাদক অনুবাদ কর্মকে সময়ের অপচয় ভেবে মৌলিক রচনায় মনোনিবেশ করেন। ফলে নিম্নমানের অনুবাদ কিংবা ভুল অনুবাদ পড়তে হয় শিশু-কিশোরদের। শিশু-কিশোর পাঠ্য নির্ভুল করার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
শিশুপাঠ্য তৈরি করা, ছাপানো এবং শিশুর হাতে বই তুলে দেয়া শুধুমাত্র দায়িত্বই নয়, এতে স্বকীয় আনন্দও আছে। যারা আনন্দের সাথে এ কাজ করবেন, তারাই সুষ্ঠুভাবে এ কাজ করতে পারবেন। কিন্তু কারা সেই বিদ্যানন্দের মানুষ, যারা অনুভব করেন, দেশপ্রেমই বড় প্রেম? এদেরকে যত্রতত্র পাওয়া যায় না। খুঁজে খুঁজে আনতে হবে। সরকারকে কৌশলে এদেরকে খুঁজে এনে কাজ করাতে হবে। ডাকলেই আসবেন এমন মনে করা ঠিক নয়।
তবে অধিকাংশই আসবেন। যারা লেখক হিসেবে আসবেন তারা নিজেরাই নির্ভুল পাঠ্যের দায়িত্ব নেবেন। আগের মতো কম্পোজার, প্রুফ রিডারের পায়ে ধরে নির্ভুল করার বিষয়টি এখন আর নেই। এখন কম্পিউটারের ব্যবহার চলছে। লেখক শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেন। তিনি যা লিখেছেন, তাই ছাপা হবে। এখানেই একটা কথা আছে। দেশের মোট প্রয়োজনের পরিমাণ বই ছাপানো কি একজন লেখকের পক্ষে সম্ভব? যেখানে সরকারই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে? না কখনই সম্ভব নয়। তাহলে কি করতে হবে? প্রত্যেক জেলায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বইটা ইমেইল করে ডিসি অফিসে পাঠালেই হবে। ছাপা এবং সরবরাহ করবে সরকারি লোকজন। লেখককে কষ্ট করতে হবে না। শুধুমাত্র একটি ছাপাখানায় না ছাপিয়ে কয়েকটি ছাপাখানায় ছাপালে কারোর ওপরে চাপ পড়বে না।
ফলে সব বই যথাসময়ে ছাপা হয়ে যাবে। জেলা অফিস থেকে বই সংগ্রহ করবে স্কুলগুলো। কিন্তু সেখানেও ঝামেলা হতে পারে। তাই প্রত্যেক স্কুলেই কম্পিউটারে সফট কপি পাঠাতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে তারা প্রিন্ট করে নেবে। এই প্রিন্ট করার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। কী ছাপানোর কথা আর কী ছাপা হচ্ছে তা সব সময় মনিটর করা সম্ভব নয়। সে জন্য লেখকই নিজ দায়িত্বে পেজ মেকআপ করে দেবেন। ওই মেকআপ করা পেজ কেউ ভাঙতে পারবে না। তারপরও নাশকদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে এবং নিয়মিত মনিটর করতে হবে। তবে বই না পাওয়ার তাৎক্ষণিক সমাধান স্কুলে সফট কপি পাঠিয়ে দেয়া। স্থায়ী সমাধান বই পাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় গার্জেন ক্লাসকে দায়িত্ব দেয়া। তারাই যোগ্য প্রতিনিধি।
বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে গার্জেন ক্লাস উপেক্ষিত। তার কারণ ছিল সম্ভবত এই যে, এক সময় তারা নিজেরাই ছিল অশিক্ষিত। কোনো সরকারই অশিক্ষিতের হাতে শিক্ষার দায়িত্ব দিতে পারে না। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামেও উচ্চ শিক্ষিত লোকজন পাওয়া যায়। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কিন্তু শিক্ষিত লোকজনও আছে। এদের সমন্বয়ে ‘গার্জেন ক্লাস’ তৈরি করতে হবে, যতদিন না গ্রাম্য সুশীল সমাজ নিজেরাই ক্লাস হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কিন্তু একপর্যায়ে সময়মতো সরকারকে সরে আসতেই হবে। শিক্ষার দায়িত্ব কমিউনিটিকেই দিতে হবে।
লেখকরা কেন লিখবেন? তাছাড়া যোগ্য ও প্রকৃত লেখকরা এগুলো পরিহার করে চলেন। কিন্তু যদি যোগ্য সম্মানি দেয়া হয় এবং তার বই গৃহীত হলে যথাযথ রয়্যালটি দেয়ার ব্যবস্থা থাকে তবে সবাই না হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক লেখক পাওয়া যাবে। সবাই তো আর মুনাফাখোর নয়। কেউ কেউ দেশের স্বার্থে স্বল্প সম্মানিতে কাজ করবেন। তবে মনে রাখতে হবে, একই লেখেকের লেখা অনন্তকাল শিশুরা পড়বে না। পাঠযোগ্য লেখকদের বইয়ের মধ্য থেকে বছর বছর চক্রাকারে বই বাছাই করতে হবে। যদি এমন হয় যে, দশজনের বই যোগ্য বিবেচিত হলো, তবে দশ বছরে দশটি বই চক্রাকারে পড়াতে হবে। শুধুমাত্র একজন লেখকেরই লেখা পড়ালে চলবে না। ওই লেখককেই দায়িত্ব দিতে হবে। তার লেখার মান সমতুল্য কিংবা আরো উচ্চমানের লেখকদের সংকলন তৈরি করার। এক মলাটে লেখা ও সংকলন থাকতে হবে। এমন ধরনের ১০/২০টা বই থাকলেই দেশে আর পাঠ্যবইয়ের অভাব থাকবে না।
তবে সবচেয়ে ভালো হয় জেলাভিত্তিক পাঠ্যবই স্বতন্ত্রভাবে তৈরি করা। প্রতিটি জেলার উৎকৃষ্ট মানে লেখকদের লেখার সংকলন করা যায়। জাতীয় পছন্দ ও আঞ্চলিক পছন্দের সংকলন করাই হবে উত্তম কাজ। শুধুমাত্র শিশু-কিশোরদের জন্যই নয়, ডিগ্রি পর্যায় পর্যন্ত একই মডেলের বই ছাপানো যায়। জেলা পর্যায়ের বই ছাপানো এবং বিতরণের দায়িত্বে থাকবে জেলা পর্যায়ের গার্জেন ক্লাস এবং সহযোগিতা করবে সরকার। প্রতিটি জেলার চাহিদামাফিক বই ছাপা হলে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কোনো চাপই থাকবে না। আমরা তো গণতান্ত্রিক মডেলে বিকেন্দ্রীকরণ চাই। শিশু-কিশোররা তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই জানে না। এসব সংকলনে জাতীয় পর্যায়ের এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য থাকবে। ফলে শিশু-কিশোররা তাদের ঐতিহ্য জানবে একই সাথে তারা নিজেদেরকে চিনবে। আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যিকতার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। অঞ্চলভিত্তিক অসংখ্য লেখক তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে সৃষ্টিশীলতায় জাতি এগিয়ে যাবে। প্রকৃত লেখক ছাড়া সংকলক ও সম্পাদক নেয়া হবে না। যিনি লেখক নন, তার সংকলনও অগ্রহণযোগ্য। তিনি যোগ্য সম্পাদকও নন। এভাবেই বিবেচনা করতে হবে। প্রকৃত লেখক তার নিজের লেখা, কৃত সংকলন ও সম্পাদনার দায়িত্ব নেবেন। তার কাজ বিকৃত হবে না। যদি তিনি দায়িত্ব নিয়ে পেজ মেকাপ করে দেন। শিশু শিক্ষার সাথে জাতি গঠন প্রক্রিয়ার সম্পর্ক আছে। শিশুপাঠ্য শুধুমাত্র শিশুদেরই নয়, বাড়ির বয়স্কদের, ভাইবোনদের এমন কি পুরো পরিবারের জন্যই ‘সবক’। ভেবে দেখুন শিশুপাঠ্য তৈরি করার ব্যাপারটা কত গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্যবইয়ের ব্যাপারটা একদিনের কাজ নয়, সারা বছরের কাজ। জ্যান্ত শিক্ষা কমিশনই এ কাজের যোগ্য। অহেতুক দায়িত্বহীন আমলাদেরকে কেন ডিস্টার্ব করা হবে। তাদের আরো অনেক কাজ আছে। তারা তাদের কাজই করুক, ভালোভাবে।
‘বাল্যশিক্ষা’ বালক-বালিকারা তৈরি করে না। অভিভাবকরা তৈরি করেন। অভিভাবক মানেই বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা পিতামাতাই নয় কেবল, শিক্ষিত প্রজ্ঞাবান এবং সামাজিক ব্যক্তিরাও। আমরা হয়তো শিক্ষিত চিনি, প্রজ্ঞাবানদেরকেও চিনতে পারি কিন্তু সামাজিক ব্যক্তিত্বকে চিনি না।
যারা মানুষের সাথে সম্পর্কিত নয়, তারা আত্মকেন্দ্রিক এবং অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন সত্তা। তারা অনেকেই হয়তো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু অনুশীলনহীনতায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। এসব আত্মকেন্দ্রিক এবং নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে শিশুতোষ গ্রন্থাদি রচনা করানো হলেও জাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধুমাত্র ভাষা সাহিত্য শিক্ষার জন্যই বাল্যশিক্ষা তৈরি করে পার পাওয়া যাবে না। অন্যান্য সকল বিষয়েই ‘বাল্যশিক্ষা’ মডেলে বইপুস্তক লেখাতে হবে। এমন কি নিষ্প্রাণ বিজ্ঞানকেও প্রাণরসে ভরপুর করে শিশু-কিশোরদের জন্য বই লেখাতে হবে। নিষ্প্রাণ গণিতেও প্রাণরসের সঞ্চারণ সম্ভব। আমাদের দেশে গণিতভীতি বর্তমান। বই লেখার স্টাইলের কারণেই এ ভীতির জন্ম হয়েছে। অভিভাবক শ্রেণীর এই বিষয়টি বহু পূর্বেই বোঝা উচিত ছিল। তারা বোঝেনি। কিন্তু সরকার বোঝেনি বলে কি বসে থাকবে? তাকে বুঝাতেই হবে। আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করা যায়। তাহলেই বছরের শেষে হয়তো সময়মতো ছেলেমেয়েরা বই পাবে তাদের বাড়িতে বসেই। আশা করি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বাল্য শিক্ষার ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং আগামী কয়েকশ বছরের জন্য জাতিকে ঠিকমতো নির্দেশনা দেবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।