Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

| প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দিনের চেয়ে রাতে নগরীর রাস্তায় চলে পুলিশের ব্যাপক চাঁদাবাজি : মহানগরীর প্রবেশপথগুলো যেন ট্রাফিক পুলিশের অবৈধ টাকার কারখানা : পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে চলছে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এ জন্য যানজট নিরসনের পরিবর্তে প্রতিদিন তা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তারা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে কাগজপত্র চেক করার নামে চাঁদা আদায় করে। নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন নানা ব্র্যান্ডের গাড়ি কারণে- অকারণে থামিয়ে কাগজপত্র দেখার অজুহাতে হয়রানি করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক রাখার ফলে নগরীতে যানজট আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র চেক করা নয়, সাধারণ মানুষকে হয়রানি আর টাকা আদায়ই তাদের মূল টার্গেট বলে ভুক্তভোগীরা জানান। রাস্তায় লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা ফিটনেসবিহীন যাত্রীবাহী বাস চলাচল করলেও সেদিকে তাদের নজর নেই। ফিটনেসবিহীন যাত্রীবাহী বাস আটক করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে এসব ফিটনেসবিহীন বাসের চালক ও মালিকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা মাসোহারা নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। আর এ মাসোহারার জোরেই রাস্তায় চলাচল বন্ধ হচ্ছে না লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন যানবাহন। চাঁদাবাজির বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অস্বীকার করেছেন। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ট্রাফিক পুলিশ চাঁদাবাজি করছে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, রাজধানীর টার্মিনাল ও সড়কসমূহে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজির স্থান হিসেবে শতাধিক পয়েন্টকে চিহ্নিত করে সেখানে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি করছেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরা ফুটেজের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ  দেয়া আছে। কতিপয় সার্জেন্ট, ট্রাফিক ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে পুলিশ কমিশনার বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
উত্তরায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী কামরুল বলেন, উত্তরা থেকে গুলিস্তান আসতে একটি প্রাইভেটকারকে ৯ থেকে ১০টি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের তল্লাশি মোকাবেলা করতে হয়। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই গাড়ি থামিয়ে অবান্তর প্রশ্ন করা হয়। আবার ট্রাফিক পুলিশের দাবি করা টাকা দিলে কোনো কাগজপত্র না থাকলেও অনেক গাড়ি ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া রাতের বেলা চলে ট্রাক থামিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ট্রাক ড্রাইভার সুমন অভিযোগ করে বলেন, শুধু দিনে নয় রাতেও চলে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এতেও চলছে ট্রাফিক পুলিশের বাণিজ্য। বিআরটিএর অভিযান টিম যে রাস্তায় থাকে ট্রাফিক পুলিশ তা আগেই ড্রাইভারদের জানিয়ে দেয়। এতে করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ওই রাস্তা এড়িয়ে অন্য রাস্তায় চলে যায়। পুলিশ ফিটনেসবিহীন বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান শুরু করেনি। এ জন্য অনেকেই পুলিশের চাঁদাবাজিকেই দায়ী করছেন। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ হলে পুলিশের অবৈধ বাণিজ্য কমে যাবে।
রাজধানীর রামপুরার প্রাইভেটকারের চালক মাসুদ বলেছেন, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ। রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে খিলগাঁও, টিটিপাড়ার মোড়, মানিকনগরসহ কমপক্ষে ৪-৫টি স্থানে ট্রাফিক পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়। কারণে-অকারণে গাড়ি থামিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখায়। টাকা দিলে সব ঝামেলা চুকে যায়।
উত্তরা এলাকার রেন্ট-এ কারের ব্যবসায়ী মোশারফ জানান, তার দুইটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকার ভাড়ায় চলে। তিনি বলেন, রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করতে গিয়ে তাকে নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয়। ট্রাফিক পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা না দিলে গাড়ি রিকুইজেশনের নাম করে আটক করে নিয়ে যায়। আবার রাস্তায় নানা অজুহাতে প্রতিদিনই পুলিশ টাকা আদায় করে। না দিলে ভয়ভীতি দেখানো হয় চালককে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গত রবিবার রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর প্রবেশপথ উত্তরা-আবদুল্লাহপুওে কিছু ট্রাফিক পুলিশ ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে। প্রায় এক ঘণ্টা পর ওই এলাকায় প্রচÐ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকার প্রবেশপথের ওই স্থানটিতে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটক করে চাঁদা আদায়ের কারণে এক সময় ওই যানজট দীর্ঘ হতে থাকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পুলিশের এ চাঁদাবাজি নিত্যদিনের। যানজটের তোয়াক্কা না করে শুধু দিনে নয়, রাতভর চাঁদা নিতে তৎপর এসব ট্রাফিক সদস্য। প্রতিটি ট্রাক থেকে ন্যূনতম ১০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা বা তারও বেশি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার রাতে যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তাগোলা এলাকাতেও যানবাহন থামিয়ে পুলিশকে টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। ওই দিন রাত আড়াইটার দিকে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর একটি ট্যাক্সিক্যাব থামিয়ে চাঁদা আদায় করতে দেখেছেন স্থানীয় চা বিক্রেতা আজাদ হোসেন। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে এবং কমলাপুর এলাকায়, টিটিপাড়া ও মানিকনগর ট্রাফিক পয়েন্টেও পুলিশ দিনে-রাতে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে।
স্থানীয় একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, শুধু যাত্রাবাড়ী আর খিলগাঁও নয়, রাত হলেই রাজধানীজুড়েই ট্রাফিক পুলিশের বিপথগামী কিছু সদস্য চাঁদাবাজি চালায়। অতি তুচ্ছ কারণে রাতের বেলা রাস্তায় চলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন যানবাহন চালকরা।
রাজধানীর উত্তরা জোনে অপ্রতিরোধ্যভাবে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রাস্তার পাশে থামিয়ে টাকা আদায় করছে। বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক ও লরি  থেকে প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে উত্তরা জোনের ট্রাফিক পুলিশ। উত্তরা জোনে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে যেমন পরিবহনের মালিক ও যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন তেমনি যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে পুলিশই যানজট সৃষ্টি করছে।
 রাজধানীর উত্তরা জোনে ট্রাফিক পুলিশ আব্দুল্লাহপুর, হাউজ বিল্ডিং, জসিম উদ্দিন ও এয়ারপোর্টে কর্মরত টিআই ও সার্জেন্টরা বিভিন্ন পরিবহন থেকে বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি করছে। উত্তরা  জোনে ট্রাফিক পুলিশ আব্দুল্লাহপুরে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি করছে। এছাড়াও গাজীপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশা উত্তরায় প্রবেশ করলেই সার্জেন্টদের চাঁদা দিতে হয়। মাসিক হিসাবে ঐসব সিএনজি অটোরিকশার মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে ট্রাফিক পুলিশ। তারা প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে ১ হাজার টাকা করে মাসিক হিসাবে আদায় করছে।
রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনাল, গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডসহ রাজধানীর সর্বত্রই পরিবহন সেক্টর ঘিরে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। টার্মিনাল-সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, সায়েদাবাদ থেকে  দেশের পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহের ৪৭টি রুটে চলাচলরত দুই সহ¯্রাধিক যানবাহন থেকে দৈনিক ফ্রিস্টাইলে পুলিশ চাঁদা আদায় করছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরসহ ৩২টি রুটে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ কোচ চলে। এছাড়া রাজধানীর গাবতলী টার্মিনাল, মহাখালী, উত্তরা, গাজীপুর, টঙ্গী, কালিগঞ্জ, শ্রীপুর, কাপাসিয়াসহ শহর ও শহরতলির অন্যান্য রুটে সহ¯্রাধিক বাস-মিনিবাসের চলাচল রয়েছে। যানবাহনের চালক, কন্ডাক্টর ও  হেলপাররা জানান, কোনো রুটের যানবাহনই চাঁদামুক্ত নয়। বরং চলাচলকারী সব গাড়িকে প্রতি ট্রিপেই নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদা পরিশোধের পর টার্মিনাল ছাড়তে দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দূরপাল্লার  কোচ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি দিতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। লোকাল সার্ভিসের প্রতিটি গাড়ি থেকে ট্রিপে আদায় করা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বিভিন্ন রুটে চলাচলরত গাড়ির মালিক-শ্রমিকরা জানান, কমিটি দখল ও মাত্রাতিরিক্ত চাঁদাবাজির অত্যাচারে মালিকরা পথে বসতে চলেছেন। শ্রমিকদের আয়ও কমে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মালিক বলেন, লাকসাম, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন রুটে এখন গাড়িপ্রতি ১২৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা মিলেমিশে এসব চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করে। চাঁদাবাজির শিকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা প্রতিদিন চাঁদা প্রদানের বিস্তাারিত তালিকা তুলে ওই বাস মালিক জানান, পরিবহন-সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের নামে ৫০ টাকা, মালিক সমিতি ৮০ টাকা, শ্রমিক ইউনিয়ন ৪০ টাকা, টার্মিনাল কমিটিকে ২০ টাকা দিতে হয়। এর বাইরে পুলিশকে দিতে হয় ৫০০ টাকা করে।
ট্রাক থেকেই কোটি টাকা : বাংলাদেশে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে পুলিশ। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকরা জানান, সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানালে আরো অধিক হয়রানির শিকার হতে হয়। এর প্রতিবাদ করলে চাঁদার হার পুলিশ আরো বাড়িয়ে দেয়। দেশে প্রতিদিন ৯০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। এর কোনোটিই পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে চলতে পারে না। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কর্মকর্তারা জানান, সড়ক বা মহাসড়কে এই ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে একেকটি স্পটে ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি ট্রাফিক পুলিশও আদায় করছে।
রাজধানীর শতাধিক পয়েন্টে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। একশ্রেণির পরিবহন শ্রমিক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন মহলের আশীর্বাদপুষ্টদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সম্মিলিত চাঁদাবাজ চক্র। তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে যানবাহন চালক, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। ফলে বন্ধ হচ্ছে না ফিটনেসবিহীন যান চলাচল।  ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে ট্রাফিক সার্জেন্টরা টাকা তুলে মাসোহারা হিসেবে। তাই এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে বর্তমানে সবচেয়ে অধিক হারে চাঁদাবাজি করছে।
সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী একাধিক মিনিবাস চালক বলেন, নানামুখী চান্দা-ধান্ধার কবলে চালক, মালিক, শ্রমিক সবার জীবনই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা হচ্ছেন নানা দুর্ভোগের শিকার। মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ সব বাস-ট্রাক টার্মিনালের অবস্থাই অভিন্ন। এসব স্থানে গাড়ি ঢুকতেও টাকা লাগে, বেরোতেও লাগে টাকা। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে পুলিশের চাঁদাবাজি। রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের যত্রতত্র পুলিশের বিশেষ চেকিং আর মাসোহারা আদায়ের প্রতিযোগিতা বন্ধের সাধ্য যেন কারো নেই। রাজধানীর এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে ট্রাকপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা গুনতে হয়।
ট্রাফিক পুলিশের টোকেন বাণিজ্যও থেমে নেই। তবে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং নামী-দামি ব্র্যান্ডের জন্য পুলিশের মাসিক টোকেন সংগ্রহ না করায় প্রতিদিনই তাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাগজপত্র দেখার নাম করে এসব গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক করে রাখে, তারপর টাকার বিনিময়ে রফাদফা হলেই পুলিশ তা ছেড়ে দেয়।
এছাড়া সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান টার্মিনাল ছাড়ার আগেই গাজীপুর চৌরাস্তা রুটের আজমেরী ও ঢাকা পরিবহনের দুইটি বাসের জন্য চাঁদা দিতে হয় সাড়ে ৫শ’ টাকা করে। ট্রাফিক পুলিশের সহযোগী লাইনম্যানরা এ চাঁদা আদায় করছে। এর বাইরে সিটি কর্পোরেশনের ইজারাদার ও সিরিয়ালের জন্য দিতে হয় আরো একশ’ টাকা। সব মিলিয়ে সাড়ে ৬শ’ টাকা পরিশোধের পর এ রুটে একটি বাস রাস্তায় নামে। এছাড়া টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত যেতে ৬টি স্থানে আরো তিনশ’ টাকা খরচ হয়। এই অর্থ ভাগাভাগি হয় সরকারি দল সমর্থিত বিভিন্ন মালিক-শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় পলিটিক্যাল ক্যাডার, পুলিশ ও সন্ত্রাসীসহ ৬ ধাপে। আর এ কারণে চাঁদা প্রদানকারী বাসচালকেরা দিনভর রাস্তার যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে পারে। পুলিশ কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করে না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। ঢাকা-গাজীপুর ও মতিঝিল-মিরপুরসহ রাজধানীর মোট ২৮টি রুটেও  প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছে ট্রাফিক পুলিশ। এছাড়া গুলিস্তান ও মতিঝিলসহ রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী- এ পাঁচ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বাস। প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে মাসে ১২ কোটি টাকার বেশি চাঁদা  আদায় করছে পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার  মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি মিথ্যাচার। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে মালিক সমিতির কাছ থেকে কেউ টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ এর প্রমাণ দিতে পারেন তবে তিনি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

Show all comments
  • সবুজ ৯ মার্চ, ২০১৭, ২:৫৯ এএম says : 0
    এগুলো এখন ডাল ভাত হয়ে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ কামরুল ইসলাম কামু ৯ মার্চ, ২০১৭, ৯:০১ এএম says : 0
    পঞ্চগড়ের সব জায়গাতেই এ অবস্থা, ফাঁড়ি সহ সবাই বেপোরোয়া, কারো কোন তোয়াক্কা নাই চলছে প্রতিদিনি চাদাঁআদায়
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:৩২ পিএম says : 0
    এই পুলিশ ভাই চাকরী নিতে কত টাকা ঘুষ দিয়ে ছিল? সত্যই সে ঘুষ দিয়ে থাকলে, এখন সে ঘুষ বাণিজ্য করার জন্য বেপরা হয়ে উঠবে। আগে ঘুষের মূল রুট,কালো বিড়াল ধরতে হবে। তা হলে সফলতা আসবে। জনগণ শান্তি পাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদাবাজি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ