মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইফতেখার আহমেদ টিপু : দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মার কাছে ছোট ছোট্ট নদীও এখন ঈর্ষার পাত্র। যে নদীকে বলা হতো ‘ক‚ল নাই কিনারা নাই’ রাজশাহীতে সেই পদ্মার বুকজুড়ে এখন ধু-ধু বালুচর। রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে কোথাও কোথাও হাঁটুজলও নেই। বালুর স্তরে স্তরে আটকে আছে মাঝিদের নৌকা। বিশাল বালুরাশির ওপর দিয়ে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। পদ্মার এ দুরবস্থার জন্য দায়ী উজানে পানি প্রত্যাহার। ফারাক্কা বাঁধ ভারতীয় জনপদের কি কল্যাণ নিশ্চিত করেছে, সে বিষয়ে সংশয় থাকলেও এ বাঁধের কারণে পদ্মা নদীর অস্তিত্ব যে সংকটের সম্মুখীন তা নিয়ে মতদ্বৈধতার সুযোগ নেই। পদ্মায় পানি না থাকায় বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হচ্ছে। খাল বিল নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। গভীর নলক‚পেও ঠিকমতো পানি পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে।
শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই পদ্মায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়ায় এ অঞ্চলে প্রকৃতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনছে। রাজশাহী এলাকার জনস্বাস্থ্যেও তার অশুভ প্রতিক্রিয়া লক্ষিত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে ১১০ ফুট নিচে অবস্থান করায় এ অঞ্চলে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার গভীর নলক‚প অকেজো হয়ে পড়ায় কৃষকরা সমূহ সর্বনাশের আশঙ্কায় ভুগছেন। রাজশাহীসহ সারা দেশের পদ্মা প্রবাহে যে পানি সংকট দেখা দিয়েছে তার পেছনে উজানে পানি প্রত্যাহার যেমন দায়ী, তেমন নদ-নদীর পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিও সমভাবে দায়ী। দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকট মেটাতে উজানে পানি প্রত্যাহার কীভাবে ঠেকানো যায় সে বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যেমন দেনদরবার চালাতে হবে তেমন নদ-নদীতে পানি ধরে রাখার বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারসহ সব মহলকেই যতœবান হতে হবে।
বর্তমান বিশ্বের ১২০ কোটিরও বেশি মানুষ সুপেয় পানির প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত, যাদের বেশির ভাগই এশিয়ার। ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ১৮০ কোটিতে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও ব্যবহারের লক্ষ্যে এই খাতে সর্বোচ্চ মনোযোগ, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সুপেয় পানির প্রধান উৎস নদ-নদী যেভাবে দূষিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। রাজধানী ঢাকায় অতি উত্তোলনে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর যে রকম উদ্বেগজনকহারে নিচে নেমে যাচ্ছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পানি ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। সেইসাথে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা লাভ নিশ্চিত করার ব্যাপারে কার্যকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। দ্বি-পক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে হবে।
পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীবন চলে না। ইতোমধ্যে পানি সংকটের কারণে চাষাবাদ বিঘিœত হওয়ায় সৃষ্ট খাদ্য ঘাটতি সবার জন্যই সতর্ক সংকেত। রাজধানীতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বহু পাম্প থেকে চাহিদামাফিক পানি উঠছে না। সবার জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নদ-নদীতে পানিদূষণ রোধ করার পাশাপাশি বাস্তবোচিত ও উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদ রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বাস্তব অবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ও বৃষ্টির পানির সর্বোত্তম ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পানি সংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে এই কার্বন সংকটের মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে পানি খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।