মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
হেলেনা জাহাঙ্গীর : সরকারের পক্ষ থেকে আবাসিক ও শিল্পসহ সকল খাতে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্যও বেড়ে গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, মূল্য আসলে বাড়ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। গত মাত্র দুই মাসে প্রতিটি সিলিন্ডারের মূল্য বেড়েছে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। বড় কথা, মূল্য বাড়ানো হচ্ছে অযৌক্তিকভাবে। এলপি গ্যাসের বিক্রেতা বেসরকারি কোম্পানিগুলো যুক্তি দেখাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলেছে। তাদের বক্তব্য, জানুয়ারি মাসে টনপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলার বাড়ার পর ফেব্রুয়ারিতে আবারো বেড়েছে ৯২ ডলার। একই কারণকে সামনে এনে কোম্পানিগুলো সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়েছে ১৫০ টাকা। এটা অবশ্য কাগুজে হিসাব। কারণ, বাস্তবে দেশের অনেক এলাকায় ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে বিইআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তথ্যাভিজ্ঞরা বলেছেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সিলিন্ডারের মূল্যবৃদ্ধির সম্পর্ক থাকতে পারে না। কারণ, কাঁচামালের দাম সাধারণত প্রতি মাসের এক তারিখে বাড়ানো হয়। সে কারণে দাম বাড়াতে হলেও প্রথমে কাঁচামাল দেশে এনে সিলিন্ডারজাত করার পর বাড়ানো চলতে পারে। এর মাঝখানে বেশ কিছুদিনের সময়ও পাওয়া যায়। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসারও অনেক আগে দাম বাড়িয়ে চলেছে। অর্থাৎ তাদের কার্যক্রমে যথেষ্ট চাতুরি ও ফাঁকি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, সিলিন্ডারের দাম কিন্তু সব কোম্পানি বাড়ায়নি। দু’একটি কোম্পানি এখনো আগের দামেই বিক্রি করছে। যার অর্থ, দাম বাড়ানোটা জরুরি ছিল না এবং দাম না বাড়িয়েও কোম্পানিগুলো লাভে থাকতে পারত। তাছাড়া দামও সারা দেশে একই পরিমাণে বাড়ানো হয়নি। কোথাও ১০০ টাকা, কোথাও ১৫০ বা ২০০ টাকা, কোথাও আবার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই আকারের সিলিন্ডারের গ্যাসের জন্য একেক কোম্পানি একেক রকমের দাম আদায় করছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বেসরকারি কোম্পানিগুলো গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ানোর যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তা কোনোক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে এসব কোম্পানি প্রকৃতপক্ষে জনগণের দুর্দশাই বাড়িয়ে চলেছে। কারণ, এমনিতেই দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তিতাসের তথা সরকারের সরবরাহকৃত গ্যাস পাওয়া যায় না। বহুদিন ধরে তিতাস নতুন সংযোগ দেয়াও বন্ধ রেখেছে। সেই সাথে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্ত হয়েছে গ্যাসের তীব্র সংকট। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গ্যাস আজকাল পাওয়া যায় না বললেই চলে। কখন গ্যাস আসবে আর থাকবেই বা কতক্ষণÑ এসব বিষয়ে মানুষ বুঝেই উঠতে পারছে না। অনেকে দু’তিনদিনের মতো খাবারো এক সঙ্গে রেঁধে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এমন অবস্থায় একদিকে বিইআরসির মাধ্যমে সরকার হঠাৎ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, অন্যদিকে বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলো যথেচ্ছভাবে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে চলেছে। বিষয়টিকে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
ওদিকে বিইআরসি কেন দাম বাড়িয়েছে তার প্রকৃত কারণ নিয়েও দেশের সচেতন মহলে নানামুখী বিশ্লেষণ ও জোর আলোচনা চলছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে গ্রাহক তথা সাধারণ মানুষের বছরে ব্যয় বাড়বে প্রায় চার হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। এর সম্পূর্ণটুকুই যাবে পেট্রোবাংলার অধীনে সৃষ্ট ‘সাপোর্ট ফর শর্টফল’ নামের নতুন একটি খাতে। পেট্রোবাংলা এবং এর অধীনস্থ কোনো কোম্পানি এই অর্থের কোনো অংশ পাবে না। গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা বিপুল অর্থ ঠিক কোন খাতে এবং কেন খরচ করা হবেÑ সে বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তথ্যাভিজ্ঞরা মনে করেন, ‘সাপোর্ট ফর শর্টফল’-এর আড়ালে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আসলে সরকার নিয়ে নেবে এবং বাজেট বাস্তবায়নের কাজে ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যবহার করবে।
এমন অনুমানের মধ্য দিয়ে দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। প্রথমত, লক্ষ হাজার কোটি টাকার অংকে বাজেট প্রণয়ন করা হলেও তার বাস্তবায়নের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় সে অর্থ সরকার যোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ সরকার বিরাট ঘাটতির কবলে পড়েছে। সে ঘাটতি পূরণের জন্যই জনগণের ওপর গ্যাসের বাড়তি মূল্য চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রয়েছে বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করার উদ্দেশ্য। একথা অনেক উপলক্ষেই জানাজানি হয়েছে যে, দেশে গ্যাসের বিপুল মজুত থাকলেও প্রধানত সমর্থক ও দলীয় লোকজনকে ব্যবসা ও বাড়তি অর্থ পাইয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য থেকেই সরকার গ্যাস আমদানি ও বিক্রি করার লাইসেন্স দিয়েছে। লাইসেন্স দেয়ার সে কার্যক্রম এখনো চলছে। জনগণ যাতে এসব কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কিনতে বাধ্য হয় মূলত সে কৌশলের অংশ হিসেবেই দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে সরকার। শুধু তা-ই নয়, সরকার একইসঙ্গে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া তো বন্ধ রেখেছেই, গ্যাসের সরবরাহও অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এভাবে সব মিলিয়েই সরকার জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে তারা বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে গ্যাস কিনতে বাধ্য হয়।
কৌশল হিসেবে যথেষ্ট চাতুরিপূর্ণ হলেও আমরা এভাবে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করার এবং তাদের ব্যয় বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য যথেচ্ছভাবে মুনাফা লুণ্ঠনের ব্যবস্থা করে দেয়ার বিরোধিতা করি। এর কারণ, অযৌক্তিকভাবে যখন-তখন সিলিন্ডারের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে এসব কোম্পানি এরই মধ্যে প্রমাণ করেছে, তারা আদৌ সৎ ব্যবসায়ী নয় এবং জনগণকে লুণ্ঠন করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আমরা তাই কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানাই, দাম বাড়ানোর মাধ্যমে তারা যাতে জনগণকে শোষণ ও লুণ্ঠন না করতে পারে। এজন্য তৎপর বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা একইসঙ্গে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্যও দাবি জানাই।
ষ লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।