পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় ৮ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনার দুই বছর পর গতকাল (সোমবার) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই ইব্রাহিম মিয়া বিএনপির চেয়ারপাসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন। এছাড়াও একই বছরের বিশেষ ক্ষমতায়নের দায়ের অপর একটি মামলায় ও খালেদা জিয়াকে আসামি করে গতকাল মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুজন মজুমদার চার্জশিট দাখিল করেন। পেট্রোল বোমা হামলার মামলায় অভিযুক্ত ১২ জনসহ মোট ২৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। তারমধ্যে ৩ জন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
ওই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১ জন ছাড়া অন্যদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করায় পরবর্তীতে মামলা বিচার প্রক্রিয়া জটিলতার আশঙ্কায় আদালতের নির্দেশে পুলিশ কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। বহুল আলোচিত এ ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ৫ নেতাকে হুকুমের এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি করে জামায়াত-বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়া ও ডা. তাহের ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, শওকত মাহমুদ, মনিরুল হক চৌধুরী, যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য কামরুল হুদা, উপজেলা জামায়াতের আমীর সাহাব উদ্দিন, সেক্রেটারী শাহ মিজানুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তোফায়েল হোসেন জুয়েল, শিবির সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারীসহ ৫৬ জনের নাম উল্ল্যেখ করে অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামি করে দুইটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছিল। এদের মধ্যে জাকির, মোতালেব ও আলমগীর নামে ৩ জন আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে শাহাবুদ্দিন নামে এক শিবির নেতা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় সোহেল নামে এক আসামি মারা গেছেন বলে পুলিশ জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো. ইব্রাহীম জানান, ঘটনার দিনের ৭ নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত না করায় পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ২১ নভেম্বরে কক্সবাজারের ইউসুফ ও রাশেদুল ইসলামের লাশ, ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি যশোরের নুরুজ্জামান পাপলু ও তার মেয়ে মাইশা, ২ ফেব্রæয়ারি শরীয়তপুরের ওয়াসিমের লাশ এবং ১ মার্চ নরসিংদীর আসমা ও শান্তর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত ২০১৫ সালে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলাকালে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশকোচ (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৪০৮০) ৩ ফেব্রæয়ারী মঙ্গলবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজারসংলগ্ন জগমোহনপুর নামক স্থানে বাসটি লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে নাশকতাকারীরা। এতে বাসটির ভিতরে-বাইরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। এসময় বাসে ঘুমিয়ে থাকা যাত্রীরা কোন কিছু বুঝে উঠার আগে আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই ৭ জন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরো একজন মারা যান।
নিহতরা হলেনÑ যশোরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার জেলা সদরের ঘোপসেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা হাজী রুকনুজ্জামানের পুত্র নুরুজ্জামান পাপলু (৫০), তার একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা তাসলিম (১৪), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার গাইনাকাটা গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহম্মদের পুত্র আবু তাহের (৩৮) ও একই গ্রামের সালেহ আহম্মদের পুত্র আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুরচর পাড়ার জসিম উদ্দিন মানিকের স্ত্রী আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্ত (১৩) এবং শরীয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট থানার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত নজরখার পুত্র ওয়াসিম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই ইব্রাহিম মিয়া গতকাল (সোমবার) জানান, এই ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে খালেদা জিয়া ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ ৫৬ জনকে আসামি করে দুইটি পৃথক মামলা রুজু হয়েছিল। দীর্ঘ তদন্ত শেষে খালেদা জিয়াসহ ৭৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গতকাল কুমিল্লার ৫ নং আমলী আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়। অপরদিকে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই সুজন মজুমদার জানান ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারী খালেদা জিয়াসহ ৩৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতায়নে এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪৩)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে খালেদা জিয়াসহ ৪২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঐ মামলার চার্জশিট কুমিল্লার ৫ নং আমলী আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল চৌদ্দগ্রাম থানা অফিসার ইনচার্জ আবুল ফয়সাল জানান, দীর্ঘ তদন্ত শেষে আলোচিত ৮ মাডারসহ চৌদ্দগ্রাম থানায় দায়েরকৃত ৩টি মামলা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গতকাল (সোমবার) আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।