বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হোসেন মাহমুদ : মানব সভ্যতার ইতিহাস শিক্ষিতজনদের সবারই মোটামুটি জানা। আদিম মানুষের প্রথম খাদ্য ছিল ফলমূল। তারপর একদিন সে পেল কাঁচা মাংসের স্বাদ। আমাদের পূর্বপুরুষরা কতকাল কাঁচা মাংস খেয়েছিলেন, তা কে জানে? মাংসকে আরো উপাদেয় করে খেতে এলো আগুন। কীভাবে এবং কখন আগুন আবিষ্কার হলো তা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। অরণ্যে সৃষ্ট দাবানল বা বজ্রপাতে গাছে আগুন ধরার ঘটনায় মানুষ হয়তো আগুনকে প্রথম চিনেছিল। এক সময় চকমকি পাথর দিয়ে মানুষ আগুন জ্বালাতে শেখে। আগুনে মাংস পুড়িয়ে খাওয়া শেখে। আবিষ্কার হয় পাত্র। রান্নার পালা শুরু হয়। কখন থেকে তা ঠিক করে বলা মুশকিল। সুদীর্ঘকাল মানুষ খড়কুটো, শুকনো পাতা, শুকনো ডাল এবং চেরা কাঠ পুড়িয়ে রান্না করে খেয়েছে, এখনো খাচ্ছে। কালের পরিক্রমায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের অবসান ঘটে আসে আধুনিক যুগ। আবিষ্কৃত হয় কয়লা, তারপর বিদ্যুৎ। তবে আমাদের দেশে রান্নায় এগুলোর ব্যাপক ব্যবহার হয়নি। কারণ, আগে দেশে কয়লা ছিল না। বিদ্যুৎ প্রাপ্তিও ছিল সীমিত। শহর এলাকা ব্যতীত গ্রামাঞ্চলে এসব পাওয়ার সুযোগও ছিল না। তারপর আসে গ্যাস। এর প্রথম সুবিধাভোগী ছিল ঢাকার মানুষ। জানা যায়, ১৯৬৮ সাল থেকে ঢাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রদান শুরু হয়। পরবর্তীতে গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা বাড়ে। তাই গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ও গ্যাস সংযোগের আওতাও ক্রমেই বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিককালে কিছু এলাকা ছাড়া নগর ঢাকার অধিবাসীরা সম্পূর্ণরূপেই গ্যাস নির্ভর। আর ঢাকার বাইরে গ্যাস সরবরাহহীন শহর-নগরে কাঠের খড়ির পাশাপাশি শুরু হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার।
ঢাকার তুলনামূলকভাবে নি¤œআয়ের অধিবাসীদের জন্য আবার কিছুটা খারাপ খবর বলা যায়। বাসা-বাড়িতে রান্নার তথা গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক সংবাদ সম্মেলনে দাম বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে। ১ মার্চ থেকে সিঙ্গেল চুলা বর্তমান ৬শ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৭শ ও ডবল চুলা সাড়ে ৬শ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকা বাড়িয়ে ৮শ টাকা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুন থেকে তা আরো দেড়শ’ টাকা করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯শ ও সাড়ে ৯শ টাকা করা হবে। বলা হয়েছে, এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে সরকারের অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা আয় হবে।
জানা গেছে, অন্যান্য খাতে যেমন বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, চা-বাগান, বাণিজ্যিক, সিএনজি ও গৃহস্থালিতে মিটার ব্যবহারকারীদের জন্যও দাম বাড়ানো হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১.৩৬ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে হবে ১৪.২০ টাকা এবং জুনে ১৭.০৪ টাকা। সিএনজির দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা ও জুনে ৪০ টাকা দাঁড়াবে। ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৮.৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৮.৯৮ এবং ১ জুন থেকে ৯.৬২ টাকা হবে। বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দাম ২.৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চ থেকে ২.৯৯ টাকা ও জুন থেকে ৩.১৬ টাকা করা হয়েছে। চা-বাগানে গ্যাসের বর্তমান দাম ৬.৪৫ টাকা। ১ মার্চ থেকে এটা ৬.৯৩ টাকা আর ১ জুন থেকে ৭.৪২ টাকা করা হয়েছে। সার কারখানায় ২.৫৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চে ২.৬৪ টাকা এবং জুনে ২.৭১ টাকা করা হয়েছে। শিল্পে ৬.৭৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চে ৭.২৪ টাকা আর জুনে ৭.৭৬ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া গৃহস্থালি কাজে মিটার ব্যবহারকারীদের ৭ টাকার পরিবর্তে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১ মার্চ থেকে ৯.১০ টাকা এবং ১ জুন থেকে ১১.২০ করা হয়েছে।
রান্নার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সমস্যার শিকার হয় নি¤œ ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যাদের আয় সীমিত। সরকারের কাছে যাদের ঘরের খবর যায় না, কী করে সীমিত আয়ে তাদের সংসারের চাকা গড়ায়, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলে, অসুস্থতার ক্ষেত্রে যাদের জন্য বেসরকারি হাসপাতালের সেবা নেয়া অসম্ভব, তাদের সংসারে মাসে দেড়শ-তিনশ’ টাকা বৃদ্ধি মানে অনেক কিছু। আর শুধু যে রান্নার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিই করা হচ্ছে তা নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যও বাড়ছে। যেমন শিল্প কারখানা, অটোরিকশায় ব্যবহৃত গ্যাস ইত্যাদি। এর সাথে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ঘোষণাও আসছে বলে জানা গেছে। তার অর্থ গৃহস্থালি বিদ্যুতের দাম, যানবাহনের ভাড়া, বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়বে। তার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর যাদের জীবন আসলে কীভাবে চলে তার খোঁজ সরকারের কোনো সংস্থা রাখে না।
এ খবরে নগরবাসী অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার গুরু দায়িত্বে যারা নিয়োজিত এবং যারা জনগুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তারা সবাই নগরবাসী তো বটেই, তবে তাদের আয় বা বেতন অনেক বেশি। তাদের কাছে বাসা-বাড়ির গ্যাসের এ মূল্যবৃদ্ধি সামান্য কিছু টাকার ব্যাপার যা ধর্তব্যের বিষয়ই নয়। তাদের হয়ত এ কথা মনেও পড়ে না যে এ রাজধানীতে এমন লাখ লাখ পরিবার আছে যাদের কাছে চুলা প্রতি দেড়শ’ টাকা মূল্য বৃদ্ধিও বাড়তি বোঝা। একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মৌসুমী কবির বলেন, এমনিতেই বছর শেষে বাড়ি ভাড়া বাড়ে। একদিকে খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়াবে বাড়িওয়ালা। বাণিজ্যিক এবং আবাসিকে গ্যাসের মূল্য এবং মিটার রিডিং জরুরি বলে মনে করেন তিনি। মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ বলেন, বছরের শুরুতে এক হাজার টাকা বাড়িয়েছে বাড়িওয়ালা। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে আবারও বাড়িভাড়া বাড়াবে তারা।
উল্লেখ্য, এখন কোনো বাড়িওয়ালাই আর গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের বিল নিজে বহন করেন না, তারা তা চাপিয়ে দিয়েছেন ভাড়াটিয়ার ঘাড়ে। আর নিরুপায় ভাড়াটিয়া সে বোঝা বহন করতে বাধ্য। নইলে বাসা ভাড়া মেলে না। এ অবস্থায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির চাপ সরাসরি ভাড়াটিয়াদের উপরই গিয়ে পড়েছে। তাদের সবার উপরই এটা সৃষ্টি করেছে বাড়তি চাপ। প্রায় সব বাড়িওয়ালার ফি বছর ভাড়া বৃদ্ধির যন্ত্রণার সাথে এ আরেক উপদ্রব হিসেবে গণ্য হবে। টাকার অফুরান উৎস যাদের তাদের সংখ্যা তো খুব বেশি নয়। বরং টানাটানির মধ্যে মাস পার করেন এমন লোকই তো বেশিরভাগ। সরকার তাদের কাছ থেকে এ বাড়তি টাকা আনন্দের সাথেই আদায় করবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এর আগে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা আর এক চুলার বিল ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৬০০ টাকা। বিইআরসির আইন অনুযায়ী কোনো সংস্থা এক বছরের মধ্যে মাত্র একবার দাম বাড়ানোর আবেদন করতে পারবে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নাগরিক সমাজের নি¤œবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তদের মধ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তারা এ জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি গোদের উপর বিষ ফোঁড়া। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। এতে ট্রান্সপোর্ট খরচ বাড়বে এবং বাজারের ওপর তার প্রভাব পড়বে। ফলে বাসা ভাড়াও বাড়বে। এই উছিলায় বাড়িওয়ালারা পানির দামও বাড়াবে। সামগ্রিকভাবে খরচ বাড়বে। তিনি বলেন, কিছু লোককে সুবিধা দেয়ার জন্য গণমানুষ সাফার করবে, এটা হয় না।
ব্যবসায়ী মহল, বিভিন্ন সংগঠন ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়েও এ বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষিত হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম গ্যাসের এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বড় ধরনের দুর্যোগের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবৈধ। এতে সাধারণ মানুষ ক্রসফায়ারে পড়বেন। গণপরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাবে দুই দফায়। একই হারে বাড়বে নিত্যপণ্যের দাম। শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। তিনি মূল্য বৃদ্ধির এই হারকে ভয়াবহ বলে মন্তব্য করে বলেন, একদিকে গ্যাস দেয়া হচ্ছে কম অন্যদিকে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এটা জনগণের উপর অত্যাচার। তিনি বলেন, বাসাবাড়িতে গ্যাসের জন্য যে দাম নির্ধারণ করা হয় তা ৯২ ইউনিট গ্যাসের বিপরীতে। অথচ দেখা যায় গড়ে ৪২ ইউনিটের বেশি গ্যাস দেয়া হয় না। যেসব এলাকায় গ্যাস সংকট সেখানে ২২ ইউনিটের মত গ্যাস দেয়া হয়। এক দিকে পুরো ইউনিটেরই দাম দিচ্ছে ভোক্তা, অন্যদিকে গ্যাস পাচ্ছে কম। বিপরীতে লাভবান হচ্ছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো।
শিল্পোদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, শিল্পে ব্যবহার করা গ্যাসের (ক্যাপটিভ) দাম ৮.৩৬ থেকে বেড়ে ৯.৬২ টাকা হওয়ায় অনেকগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ অর্থাৎ ক্যাপটিভ পাওয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকের জন্য সুতা কিংবা বস্ত্র উৎপাদন লাভজনক হবে না, বরং লোকসান গুনতে হবে। গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটর দিয়ে স্পিনিং মিলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়ে ৪ টাকা ২০ পয়সা। মূল্য বৃদ্ধির ফলে এখন দাম পড়বে সাড়ে ৯ টাকার বেশি। এতে প্রতি কেজি সুতার দাম ৪০ থেকে ৫০ সেন্ট বেড়ে যাবে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করেছেন ব্যবসায়ীরাও। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডান্ট্রিজ (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতি। তারা বলেছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, পরিবহন ব্যয় বাড়বে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রভাব গিয়ে পড়বে সব খাতে। তারা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পুনর্বিবেচনার আহŸান জানিয়েছেন।
এদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, গ্যাসের দাম যা বেড়েছে তা খুব বেশি নয়। যেহেতু গ্যাসের দাম অনেক কম ছিল তাই দাম বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে সামান্য; তাও বাড়বে দুই ধাপে। এই দাম বৃদ্ধিতে জনগণের কোনো সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যেই তিনি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
বুঝতে অসুবিধা হয় না যে রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষদের দুঃখ-কষ্ট-সমস্যার সাথে সরকারের মন্ত্রী মহোদয়দের যোগসূত্র বলতে গেলে একেবারেই নেই। তারা যাকে সামান্য বৃদ্ধি বলেন, অনেকের কাছে তা যে পর্বত সমান তা উপলব্ধি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিত্ত-বেসাতের নন্দন কাননে বসে বিত্তহীনদের দুর্ভোগের স্বরূপ উপলব্ধি করা যায় না।
এরমধ্যে অবশ্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিইআরসির ঘোষণা আংশিকভাবে হোঁচট খেয়েছে। হাইকোর্ট তার রায়ে প্রথম ধাপে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বহাল রাখলেও দ্বিতীয় ধাপের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে। ভোক্তা অধিকার রক্ষা সংগঠন ক্যাব-এর এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২৮ ফেব্রæয়ারি এ রায় দেয়। লক্ষ্যণীয় যে বিইআরসির আইনে বছরে একবারের বেশি দাম বাড়ানো যাবে না বলা হয়েছে। সে কারণেই এক বছরে দু’বার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হাইকোর্ট অনুমোদন করেনি। ছয় মাস পর কী হবে তা পরের ব্যাপার।
গ্যাসের দাম যেহেতু বেড়েছে অতএব তার অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া পড়বে সর্বক্ষেত্রে। যানবাহনের ভাড়া, বিদ্যুতের মূল্য, জিনিসপত্রের দাম সবই বাড়বে। একশ্রেণির মানুষের কোনো সমস্যাই হবে না, একশ্রেণির মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা আরো বাড়বে। রাজনৈতিক প্রভাব থাক আর না থাক, জনগণের প্রতি সহমর্মী হয়ে কম্যুনিস্ট পার্টি ও বাসদ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৮ ফেব্রæয়ারি আধাবেলা ঢাকায় হরতাল পালন করে। তবে শাহবাগ মোড় ছাড়া আর কোথাও হরতালকারীদের কাউকে দেখা যায়নি, এতে জনগণের কোনো সাড়াও পাওয়া যায়নি। ঢাকার জনজীবনে এ হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি। এ দু’টি দলের জনসম্পৃক্ততা না থাকার কারণে অথবা গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে কারো তেমন কোনো উদ্বেগ নেই বলেই হয়ত ঢাকার জনগণ এ হরতালে সাড়া দেয়নি। আর কেই বা নিজের কাজ, ব্যবসা ফেলে হরতাল করতে যাবে পুলিশের লাঠিপেটা খেতে বা তাদের হাতে গ্রেফতার হতে! তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির মতো আরো অনেক কিছুই ঘটছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ কথা বলছে না, বলতে চাইছে না অথবা কিছু বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারা যা ঘটছে সবই মেনে নিতে চাইছে। এটাই হয়ত এ সময়ের প্রবণতা।
লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।