Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে বিনিয়োগে খরা

প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : অপার সম্ভাবনার পরও চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে খরা চলছে। প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্যাস সঙ্কট। সেইসাথে যোগ হয়েছে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার উপযোগী জমির অভাব। এতে করে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দিনে দিনে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ছে। বাড়ছে না কর্মসংস্থানের সুযোগ, বাড়ছে বেকারত্ব। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরভিত্তিক বাণিজ্যিক রাজধানীর বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট চলছে। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কিছুটা অবসান হলেও গ্যাস সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। এখন চাহিদার অর্ধেকও গ্যাস সরবরাহ মিলছে না। চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ মিলছে ২২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রেখে সারকারখানায় গ্যাস দেয়া হচ্ছে। আবার কখনো সারকারখানা বন্ধ রেখে সচল করা হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গ্যাস সঙ্কট এতটাই তীব্র হয়েছে এখন বাসা-বাড়িতেও গ্যাসের অভাব। দিনের দিনের পর দিন চুলা জ্বলছে না। গ্যাসনির্ভর শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাস দেয়া হচ্ছে রেশনিং করে।
গ্যাসের অভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ আটকে আছে। বেশ কয়েকটি কারখানা মেশিনপত্র বসিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। বিদ্যমান শিল্প কারখানার নতুন ইউনিটও খোলা যাচ্ছে না গ্যাসের অভাবে।
কর্ণফুলী গ্যাস সরবরাহ কোম্পানির হিসাবে গ্যাস সংযোগের জন্য শিল্প কারখানা মালিকদের প্রায় ২০০ আবেদন তাদের দপ্তরে জমা পড়ে আছে। নতুন করে শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এসব আবেদন ঝুলে আছে। কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব কারখানায় গ্যাস সংযোগ রয়েছে সেসব কারখানায় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় নতুন কারখানায় সংযোগ দিলে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে কিভাবে।
জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো না হলে নতুন সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে না। চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিনিয়োগ সচল রাখার স্বার্থে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো দাবি করে আসছে ব্যবসায়ী নেতারা। তবে এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে দেশের দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে বিরাজমান গ্যাস সঙ্কট নিরসনে সরকার কাজ করছে বলে জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে, সেখান থেকে গ্যাস আনার ব্যাপারেও আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। গ্যাস আনা গেলে চট্টগ্রামের গ্যাস সঙ্কটের অবসান হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে গ্যাস সঙ্কটের মতো এখানে বিনিয়োগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমি সঙ্কট। মহানগরী এবং মহানগরীর আশপাশে এখন শিল্পকারখানা গড়ে তোলার উপযোগী জমি মিলছে না। আর জমি পাওয়া গেলেও মূল্য এত বেশি যে তাতে বিনিয়োগ রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ বিনিয়োগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাচ্ছে জমির দামে। বিজিএমইএ’র একজন নেতা বলেন, রাজধানী ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে এখনও প্রতিবিঘা জমি ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এসব জমিতে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার মতো উপযুক্ত পরিবেশও রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে এমন জমির দাম বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। বিনিয়োগের বিশাল অংশ যদি জমিতেই চলে যায় তাহলে এখানে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাবেন কিভাবে।
ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারীরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর সাগরিকা, শোলশহর ও কালুরঘাট শিল্প এলাকায় এখন কোন শিল্পপ্লট খালি নেই। দেশের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল চট্টগ্রাম ইপিজেডেও কোনো খালি জমি নেই। আশির দশকে চালু ওই ইপিজেডে দেশি-বিদেশি দুই শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। একই চিত্র উত্তর পতেঙ্গায় পুরাতন স্টিল মিলের জমিতে গড়ে উঠা কর্ণফুলী ইপিজেডেও। সেখানেও কোন শিল্পপ্লট খালি নেই। ইপিজেড দুটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, ওই দুটি ইপিজেডে বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রায় আসতেন। কিন্তু জমি না থাকায় তাদের সে সুযোগ দেয়া যায়নি। বিষয়টি এখন বিদেশিদের কাছেও জানা হয়ে গেছে।
কর্ণফুলী নদীর ওপারে দেশের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ বেসরকারি ইপিজেড কোরিয়ান ইপিজেডে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার মতো অসংখ্য প্লট খালি থাকলেও ভূমির নামজারিসহ নানা জটিলতায় সেখানে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী চট্টগ্রাম বন্দরে আশপাশে অথবা মহানগরীর উপকণ্ঠে বিনিয়োগ উপযোগী জমি চেয়ে পায়নি। অনেকে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েও জমির অভাবে হতাশ হয়ে ফিরে গেছে।
এই প্রেক্ষপটে চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগ বোর্ডের পরিসংখ্যানেও সে হতাশার চিত্র পাওয়া গেছে। দিনে দিনে শিল্পকারখানা নিন্ধনের হার কমছে। গেল বছর (২০১৫ সালে) ১৩১টি নতুন শিল্পকারখানা নিবন্ধন হয়েছে। তার আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৪২টি। ২০১৩ সালে এখানে ১৫৫টি, ২০১২ সালে ২২৫টি এবং ২০১১ সালে ২৫১টি শিল্পকারখানা নিবন্ধন হয়েছিল। ২০১১ সালের পর থেকে এই হার দ্রুত কমছে। আবার এসব শিল্পকারখানা বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধন করা হলেও তার কতটি উৎপাদনে গেছে তার হিসাব বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে নেই। ফলে নিবন্ধনকৃত এসব শিল্পকারখানার কয়কি বাস্তবে উৎপাদনে গেছে তার হিসাব পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে বিনিয়োগের জমি সঙ্কট নিরসনে সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে ‘মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া অনেক এগিয়েছে। আগামীকাল প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে একযোগে দেশের এ ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজের উদ্বোধন করা হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

************



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে বিনিয়োগে খরা

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ