পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফয়সাল আমীন : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বাধাহীন অবস্থানে সরকার দল আওয়ামীলীগ সমর্থকরা। বিপরীতে রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি-জামায়াতের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ, আতংক, অজানা আশংকাসহ ভবিষ্যত নিরাপত্তার অশ্চিয়তা। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এহেন পরিস্থিতি এখন সিলেটের তৃণমূলে বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে মন ভাল নেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের। বিরাজ করছে চাপা সংশয়, সন্দেহ। সরকার দলের রাজনীতির দৃঢ়তায়, তারা মূলত দিশেহারা। তারপরও নির্বাচনী আমেজে শরিক হওয়ার উত্তেজনা তাদের চোখে মুখে।
প্রথমবারের মতো এবার দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সারাদেশে। অতীতে ব্যক্তির ইমেজ,গোষ্ঠীগত শক্তি, অর্থ, স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তির পাশাপাশি, আত্মীয়তার বন্ধন-ই ছিল স্থানীয় নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অন্যতম নিয়ামক। এমনকি নির্বাচনকে সামনে রেখে বংশগত সম্পর্কের পাশাপাশি দূর-আত্মীয়তার বন্ধন নতুন করে উন্নয়ন ঘটত। কিন্তু এবার রাজনৈতিক ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ায় আমূল একটি পরিবর্তন ঘটেছে সামগ্রিক অবস্থায়। দলীয় পরিচয়ে বিভাজিত হয়ে পড়ছে পরিবার, গোষ্ঠীসহ সব সম্পর্ক। দলীয় অবস্থান পাকাপোক্ত করতে যেয়ে সামাজিক পূর্বেকার শৃংখলায় বিরাট ধাক্কা লাগছে। গ্রাম্য মাতব্বরসহ স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের চিরায়ত ভিলেজ পলিটিক্স গুলিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক আদর্শে। এ অবস্থায় অনেক এগিয়ে থাকছে আওয়ামীলীগ সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ও প্রচেষ্টা। বিপরীতে বিরোধী দল তথা বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ভবিষ্যত নিরাপত্তায় নিয়ে উদ্বিগ্ন। নগর বা উপজেলা কেন্দ্রিক রাজনীতির যে গরম বাতাস ছিল, সেই অবস্থা এখন গাঁও গেরামে ঢেউ তুলেছে। প্রতীক সাথে সাথে মত ও আদর্শের বিজয় পেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চিন্তিত হয়ে যাচ্ছেন কে কোন দলের সমর্থক। দেশের রাজনীতিতে দমন নিপীড়নের ভয়ার্ত অবস্থায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এমনতি-ই কোণঠাসা। সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে নিজকে রক্ষায় নানা ভাবে কৌশলী হয়ে উঠেছিলেন তারা। অনেকে সরকার দলের স্থানীয় নেতাদের সাথে স্বার্থগত সম্পর্ক তৈরী করে নিজেকে নিরাপদ করে তোলার চেষ্টায় ছিলেন সদা ব্যস্ত। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টার দোরগোড়ায় আঘাত করছে দলীয় প্রতীকের ভারিক্কি। এখন দলীয়ভাবে একজন আরেকজনের দিকে আঙ্গুল তুলছেন, কথা বলছেনও সেইভাবে। বিভক্তি মধ্যে দিয়ে পরিচিত হয়ে উঠছেন কে কোন দলের। বাপ-বেটা-স্ত্রী কন্যা-নাতি নাতিনী প্রত্যেকেই দলীয় বিবেচনায় আলোচিত হয়ে উঠছেন। ভোটের পূর্বেই গুনে নেওয়া যাচ্ছে ভোটের আগাম সম্ভাব্য হিসাব। এমনকি আমজনতা বলে গাঁও-গেরামে কেউ থাকার চেষ্টা করে পারছে না। দলীয় পরিচয় সমর্থন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বাধ্য হয়ে জোর দেখেই মৌন কিংবা প্রকাশ্যে সমর্থন জানাচ্ছেন তারা। সরকার দলের প্রতি সমর্থন যতটা জোরে দেখাতে পারছেন, ঠিক ততটা বিরোধী দলের প্রতীকের প্রতি নিজের সমর্থন গোপন করছেন। অপরদিকে, বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাকর্মীরাও ভাব বুঝে কথা বলছেন। যথা সম্ভব নিজেদের রাজনীতিক নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চলাচ্ছেন। কারণ, নির্বাচন পরবর্তী রোষানলের চিন্তায় তারা উদ্বিগ্ন। সরকার দলের চক্ষুশূলে পরিণত হয়ে দমন নিপীড়নে পড়তে চান না তারা। এতোদিন গোপন তালিকায় পড়ে তটস্থ থেকেছেন। সেই তালিকায় পড়ে জেল-জুলুমসহ ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনও করেছেন। কর্ম-ছাত্রজীবন লাটে উঠেছে অনেকের। সেই ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে ছটফট করে কূল-কিনারা হয়নি তাদের। এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে দলীয় প্রতীকের নির্বাচন। নিজের আদর্শিক সম্পর্ক না পারছেন প্রকাশ্যে তুলে ধরে প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে, না পারছেন নিজেকে চাপিয়ে রেখে ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। উভয় সংকটে পড়ে দিশেহারা বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। অনেক গোপনে আঁতাত করছেন সরকার দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর সাথে। তারপরও শেষ রক্ষা হবে, এমন নিশ্চয়তা নেই কারো মনে। সরকার দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিএনপি-জামাতের, সেই সব সমর্থক ও সক্রিয়-নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার কৌশল করছেন। অপরদিকে, বিরোধী দলের প্রার্থীরা সেই সব লোকদের নিজের পক্ষে রাখার আপ্রাণ প্র্রচেষ্টা চেষ্টা চলাচ্ছেন। কিন্তু ভরসা দিতে পারছেন না, সরকার দলের নানামুখী চাপ মোকাবেলার। কারণ, খোদ প্রার্থীরাও নিজেদের অবস্থান নিয়ে শংকিত, উদ্বিগ্ন। সিলেটের একাধিক ইউনিয়নের লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, এ নির্বাচনের একটি ভিন্ন মাত্রা হচ্ছে দলীয় প্রতীক। মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার পাশাপাশি, বিভেদ ও অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামীণ জনপদগুলোতে বিষয়টি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক ভেদাভেদ দিয়ে একে অন্যকে হেয় ও শায়েস্তা করার মানসিকতা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমজনতার জন্য বিষয়টি খুব-ই বিব্রতকর। তবে নতুন প্রজন্ম একটি সময় তাল মিলয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এতে করে জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে চিন্তাধারার সম্মিলন ঘটবে, যা নিঃসন্দেহে কল্যাণকর। কিন্তু এর আগে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে দমিয়ে রাখার টার্গেট মানুষের স্বাভাবিক মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করে তুলেছে। যেকারণে সর্ব মহলের মানুষ চাপা আতংকে ভুগছে। শুধুমাত্র সরকার দলের সমর্থক ছাড়া। তবে স্থানীয় জনসাধারণের একটি অংশ স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চিন্তা করছেন। তারা মনে করছে, সরকার দলীয় সমর্থক নির্বাচিত হলে, উন্নয়ন-অগ্রগতি শুধু নয়, সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দমন নিপীড়ন থেকে অনেকাংশে রেহাই পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।