বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
সরদার সিরাজ : গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন যে, রাখাইনে সেনা অভিযান আজ থেকে শেষ। কিন্তু সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়নি। ফলে মানুষের মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্ক দূর হয়নি বলে বিবিসি বাংলার খবরে প্রকাশ। উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর ’১৬ বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্ত ফাঁড়িতে কে বা কাদের আক্রমণে ৯ পুলিশ নিহত হন। এজন্য মুসলমানদের, যারা রোহিঙ্গা নামে খ্যাত, তাদেরকে দায়ী করে শুরু করা হয় সেনা অভিযান। ৪ মাসের অধিককাল যাবত সে অভিযানকালে রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যা করা হয়েছে। এই নারকীয়তা থেকে নারী-শিশুসহ কেউ-ই রক্ষা পাননি। আর হত্যা করা হয়েছে জবাই করে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, গ্রেনেড মেরে ও গুলি করে। এমনকি অনেককে কেটে টুকরো টুকরো করেও। উপরন্তু নিহতদের অনেককে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার অনেককে গণকবর দেয়া হয়েছে। গণধর্ষণও চলেছে ব্যাপকহারে। ৫-৬ বছরের শিশুদের পর্যন্ত ধর্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্টগুলোও ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে অসংখ্য মুসলমান পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য মতে, তাদের সংখ্যা ৬৫ হাজার। আর বাংলাদেশ সরকারের মতে, ৯২ হাজার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরো বেশি। কারণ, প্রধান অংশ কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু অন্যত্রও রয়েছে আরো অনেক।
যাহোক, পালিয়ে আসা সকলেই চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া, এদেশে আসতে পথিমধ্যে বহুজনের অকাল মৃত্যু ঘটেছে! ভারতেও কয়েক হাজার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গত ১৪ ফেব্রæয়ারি বিবিসি বাংলার খবরে প্রকাশ। উল্লেখ্য, এই লোমহর্ষক কর্মের সচিত্র প্রতিবেদন বিশ্বের সব মিডিয়ায় ও ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যমে প্রতিনিয়তই প্রকাশিত হয়েছে। যা দেখে সভ্যজগত স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ, ওআইসি, আসিয়ান, জাতিসংঘের কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মুসলিম দেশগুলো প্রচÐ নিন্দা জানিয়েছেন এই চরম বর্বোরচিত কর্মের। এমনকি পোপ ফ্রানসিস পর্যন্ত চরম নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “ধর্মীয় কারণেই রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের সংস্কৃতি ও মুসলমান ধর্ম বিশ্বাসের কারণেই তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা বছরের পর বছর ধরেই দেশটিতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। পিতৃভূমি থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারা’’। বৃটেনের হাউস অব কমন্স প্রণীত এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম স¤প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশিত উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী ও ক্ষমতাসীন এনএলডি’র প্রধান অং সান সুচি। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামুদ্দিন বলেছেন, ‘রাখাইনের পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না হলে আইএস-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো সুযোগ নিতে পারে। কারণ, তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘাঁটি গড়তে চাইছে’। জাতিসংঘের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘যে সাক্ষ্য-প্রমাণ তারা পেয়েছেন, তাতে তাদের মনে হয়েছে, রাখাইনে যা ঘটছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ। এর দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারকেই নিতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় থেকে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাÐ চালিয়েছে ও নারীদের ধর্ষণ করেছে। তাদের বাড়ি-ঘরে আগুনও দিয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞে লিপ্ত’।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশাপাশি মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের মানবিক সমস্যা সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেল, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিসেল ব্লিকেন ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মাইকেল উইন্টার গত ১৫-১৭ জানুয়ারি ’১৭ কক্সবাজার সফর করেন। রোহিঙ্গারা তাদের লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা পেলে রাখাইনে ফেরত যাব’। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ বিদেশি ক‚টনীতিকদের জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানের পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৬৯ হাজারসহ এ মুহূর্তে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব নাগরিক মিলিয়ে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্ণিত নারকীয় কর্মে অংশ নিয়েছে আর্মিরা ছাড়াও সে দেশের উগ্র বৌদ্ধভিক্ষু, সাধারণ বৌদ্ধ, পুলিশ, সীমান্ত রক্ষীও। অথচ বৌদ্ধ ধর্ম মতে জীব হত্যা মহাপাপ। তবুও সেই কর্মই করেছে তারা! দরিদ্র, নিরীহ ও নিরস্ত্র এই মুসলমানদের অপরাধ- তারা মুসলিম। যা হোক, এতকিছু পশুত্ব কর্মের পরও মিয়ানমার সরকারের দেশীয় কমিশনের প্রধান গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে! এতবড় নিলর্জ্জ ও ডাহা মিথ্যা কথা সাম্প্রতিক সময়ে দায়িত্বশীল অন্য কেউ বলেছেন বলে জানা নেই।
স্মরণীয় যে, রাখাইনে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের মোট সংখ্যা ১১ লাখ বলে জানা গেছে। তারা সেখানে বসবাস করছেন কয়েকশ’বছর পূর্ব হতেই। তবুও তারা বাংলাভাষী হওয়ায় তাদেরকে বাংলাদেশী বলে আখ্যায়িত করে নির্যাতন শুরু করা হয় গত শতকের আশির দশকে। তখন থেকেই হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে এসে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদেরকে স্বদেশে ফেরৎ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বা ইউএনএইচসিআর বহু চেষ্টা করেছে। তৎপ্রেক্ষিতে কিছু শরণার্থীকে ফেরত নেয়া হয়েছিল গত শতাব্দীর শেষের দিকে। তারপর হঠাৎ করে তা বন্ধ করে দেয় সে দেশের সামরিক সরকার! উপরন্তু তাদের নাগরিকত্বও বাতিল করে দিয়েছে সে দেশের সেনাসমর্থিত সরকার। এমতাবস্থায়, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার গত ২ অক্টোবর ’১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিলÑ এখন হয়তো মুসলিম নির্যাতন বন্ধ হবে। তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে এবং অপরাধীদের বিচার করা হবে। তার লক্ষণও দেখা গিয়েছিল। যেমনÑ স্বাধীনতাত্তোর থেকেই বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠী সশস্ত্র লড়াই করে আসছে নিজ নিজ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। সামরিক জান্তা সে দাবিগুলো পূরণ না করে সেনা অভিযান চালায় লড়াই বন্ধ করার জন্য। কিন্তু ব্যর্থ হয়। বর্তমান সরকার সেই সংখ্যালঘুদের সমস্যা নিরুপণপূর্বক সমাধানের পথ বের করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। কমিশন মিয়ানমার সফর করে বিদ্রোহী গ্রæপগুলোর নেতাদের সাথে মিটিং করেন। এই অবস্থায়, ৯ অক্টোবর ’১৬ বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্ত ফাঁড়িতে কে বা কাদের আক্রমণে ৯ পুলিশ নিহত হন। এজন্য মুসলমানদের দায়ী করে শুরু করা হয় সেনা অভিযান। সে অভিযানকালে সাংবাদিকদের পর্যন্ত যেতে দেয়া হয়নি সেখানে। এমনকি আনান কমিশনকেও যেতে বাধা দিয়েছে বৌদ্ধভিক্ষুরা। সর্বোপরি গণহত্যা, গণধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও তো হয়েছেই। এই কাজটি সংঘটিত হয়েছে মূলত, সেনাদের দ্বারাই। তাই এব্যাপারে কতিপয় পÐিত ব্যক্তির অভিমত হচ্ছেÑ ‘গণতন্ত্র প্রবর্তনের পর গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সূচি গত বছরের শেষের দিকে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সফর করে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও আর্থিক উন্নতি ঘটানোর জন্য বিনিয়োগ ও ব্যবসা বৃদ্ধি এবং অবরোধ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। ভারত এবং চীনা কর্তৃপক্ষও সার্বিক সহায়তা করার প্রতিশ্রæতি দেন। উপরন্তু, সূচির আহŸানে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত জাতিগত ২০টি গোষ্ঠীর নেতারা আনান কমিশনের সাথে বৈঠকে বসেন। তাতে সকলেই জাতীয় ঐক্য গড়ার এবং দেশে গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নতি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রæতি দেন। এই অবস্থায় সূচির ভাবমর্যাদার বৃদ্ধি ঘটে বহির্বিশ্বে। দেশেও জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পায়। দেশও সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয়। ফলে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয় যে, সরকার এই সুযোগে সংবিধান সংশোধন করে তাদের জন্য সংসদের ২৫ শতাংশ আসন ও ৩টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সংরক্ষিত রাখার বিধান বাতিল করতে পারে। উপরন্তু তারা দীর্ঘ ৫ দশক একনাগাড়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের বেশিরভাগ সম্পদ লুণ্ঠন করে মালিক হয়েছে ও বিরোধী রাজনীতিকদের ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে, তার বিচার হতে পারে। তাই তারা পরিকল্পিতভাবে সূচি ও সরকারের ভাবর্মযাদা নষ্ট করে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার লক্ষ্যে রাখাইনে মুসলিম হত্যা শুরু করেছে’। ইতোমধ্যেই আমাদের দেশের কিছু মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, মিয়ানমারে পুনরায় সেনা অভ্যুত্থান হতে চলেছে। এই যুক্তি এবং প্রকাশিত খবর সঠিক কিনা তা বলা কঠিন। তবে এটা নিশ্চিত, ইতোমধ্যেই সূচির ভাবমর্যাদা ক্ষুণœœ হয়েছে সমগ্র বিশ্বেই। মুসলিম দেশগুলোতে বেশি। লাখ লাখ মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে তার নোবেল পুরস্কার বাতিল করার জন্য বারংবার আহŸান জানিয়েছেন। স্মরণীয় যে, ২ অক্টোবর ’১৫ তারিখে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এনএলডি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। কিন্তু ৩০ মার্চ ২০১১ তারিখে রচিত সংবিধান অনুযায়ী এনএলডির প্রধান নেত্রী সূচি রাষ্ট্রপ্রতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। তাই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা হন বাধ্য হয়েই। তবে পর্দার আড়াল থেকে তিনিই রাষ্ট্রের প্রধান কর্ণধার হিসেবে কাজ করছেন। তাই রাখাইনে সংঘটিত অপরাধের দায় তিনি এড়াতে পারবেন না। ফলে তাকেও জবাবদিহি করতেই হবে।
বাংলাদেশ সরকার দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের কক্সকাজার থেকে সরিয়ে নোয়াখালীর ঠ্যাঙ্গারচরে স্থানান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু হিউম্যান রাইট ওয়াচ এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ একটি দরিদ্র ও সমস্যাসঙ্কুল দেশ। এই অবস্থায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা এবং ৫ লাখ বিহারি উদ্বাস্তু হয়ে থাকার বিষয়টি মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবুও বাংলাদেশ সরকার এবং দেশবাসী মানবিক কারণে তাদেরকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের স্থায়ী সমাধান করার দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন উক্ত সংস্থার। তদ্রæপ, বাংলাদেশ থেকে এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভিন্ন কোনো দেশে নিয়ে যেতে চায় জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপের কিছু দেশে এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউএনএইচসিআর এর বাংলাদেশ প্রধান শিনজিকুবো জানিয়েছেন, এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভিন্ন কোনো দেশে পুনর্বাসনের জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি চেয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে এচেষ্টা হচ্ছে বলে সংস্থাটির প্রধান জানিয়েছেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের প্রধান নেতা এই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, এটা স্থায়ী সমাধানের পথ নয়। জাতিসংঘের উচিৎ আমাদের মূল সমস্যার সমাধান তথা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন, নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া এবং সমান অধিকার এবং নিরাপত্তা স্থায়ী করার ব্যবস্থা করা।
যাহোক, বিভিন্ন দেশের সংঘটিত গণহত্যার বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসিতে। বিচারে এ পর্যন্ত অনেক গণহত্যার নায়কের কঠোর শাস্তি হয়েছে। তন্মধ্যে সার্ব ও বুরন্ডির সাবেক নেতারা উল্লেখযোগ্য। তদ্রæপ রোহিঙ্গাদের গণহত্যারও বিচার হওয়া আবশ্যক উক্ত আদালতেই। এই দায়িত্ব জাতিসংঘের। জাতিসংঘ সেটা না করলে এই অভিযোগ উত্থাপন করা উচিৎ ওআইসির। কারণ, এই সংস্থা মুসলিম দেশ ও মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা। সাক্ষীরও অভাব হবে না। খোদ জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে এক নম্বর সাক্ষী করা যেতে পারে। কারণ, তিনি মিয়ানমার সরকার কর্তৃক গঠিত শান্তি কমিশনের প্রধান হয়ে মিয়ানমার সফর করেছেন এবং সচক্ষে সবকিছু দেখেছেন, শুনেছেন ও প্রত্যক্ষ করেছেন। এছাড়া, সারা বিশ্বের সমস্ত মিডিয়ায় সচিত্র প্রতিবেদনও রয়েছে। উপরন্তু জাতিসংঘের একটি বিশেষ টিম মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা শুনেছেন। এমনকি সচক্ষে দেখেছেনও। তাই তাদেরকেও সাক্ষী করা যেতে পারে। বর্ণিতদের সাক্ষী দেয়া মানবিক দায়িত্ব। ফলে তারা সাক্ষী দেবেন তা নিশ্চিত। তাই এখন আবশ্যক আইসিসিতে বিচার চাওয়া। এছাড়া, যতদিন রোহিঙ্গাদের নির্যাতন বন্ধ না হবে, তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া না হবে, বিদেশে আশ্রয়রতদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া ও পুনর্বাসন করা না হবে, ততদিন মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, সামগ্রিক অবরোধ আরোপ করা বিশ্ববাসীর কর্তব্য। আর তা করতে হবে জাতিসংঘের মাধ্যমেই। এক্ষেত্রে ওআইসির বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালন করা অপরিহার্য। সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের সমস্যাগুলো যতদিন সমাধান না হয়, ততদিন পর্যন্ত সেখানে জাতিসংঘের শান্তিবাহিনী মোতায়েন করা আবশ্যক।
রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য মালয়েশিয়া ত্রাণ পাঠিয়েছে। আর কোনো মুসলিম দেশ ত্রাণ পাঠায়নি। তাহলে কি তাদের সামর্থ্য নেই? নিশ্চয় বহু দেশের সামর্থ্য আছে এবং দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। তাই রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য সব মুসলিম দেশের অবিলম্বে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এমনকি অমুসলিম দেশেরও। কারণ, এটা মানবিক দায়িত্ব। সর্বোপরি ধনী মুসলমানদের প্রতি অনুরোধ, অন্তত, এক রাতের ফুর্তির টাকা বাঁচিয়ে তা রাখাইনের মজলুমদের দান করুন। তাহলে তাদের অনেক কল্যাণ হবে। সে সুবাদে আপনাদেরও।
য় লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।