Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ

পথ নির্দেশ

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা এইচ.এম গোলাম কিবরিয়া (রাকিব)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
২. দু’জন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর সম্মুখে বিবাহ সম্পাদন হতে হবে; সাক্ষী ছাড়া বিবাহ শুদ্ধ হবে না। তবে ইমাম মালিক (র.)-এর মাযহাবে বিবাহের অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে জনসাধারণের মধ্যে বিবাহ প্রদর্শনী। তাই সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমেও এ প্রদর্শনী হতে পারে, তাতেও বিবাহ শুদ্ধ হবে।
৩. প্রথমে খুতবা ও পরে ইজাব ও কবুল হওয়া উচিত। ইজাব ও কবুলের সাথে হাম্দ ও না’ত থাকা উচিত, যেমন- মেয়ে পক্ষ হতে নির্ধারিত ব্যক্তি বলবে, আল্হামদুলিল্লাহ্ আমার ---- কে ----- এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলাম। ছেলে বলবে, আলহামদুলিল্লাহ্ আমি কবুল করলাম। বিবাহ কোন মাসে হওয়া ভালো : শাওয়াল মাসে মসজিদে বসে বিবাহ সম্পাদন মুস্তাহাব। কারণ হযরত আয়েশা (রা.) বলেন : রাসূল (সা.)-এর সাথে শাওয়াল মাসে আমার বিবাহ হয় এবং শাওয়াল মাসেই আমরা বাসর শয্যায় মিলিত হই। বিবাহ সম্পর্কে হুযূর (সা.)-এর বাণী : রাসূলে করীম (সা.) নিজে বিবাহ করেছেন। কাজেই এটা স্বাভাবিকভাবে আমরা সুন্নতে মুহম্মদী বলে থাকি। আসলে বিবাহ পূর্ববর্তী নবীগণেরও সুন্নত। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেনÑ
নিশ্চয়ই আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম ও তাদেরকে স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম। এ আয়াত হতে আমরা জানতে পারলাম যে, পূর্ববর্তী সকল নবীই বিবাহ করেছেন, যদিও হযরত ঈসা (আ.) ও হযর ইব্রাহীম (আ.)-এর ব্যতিক্রম। বিবাহ সম্পর্কে হুযূর (সা.) উম্মতদেরকে বিশেষভাবে তাকিদ দিয়ে বলেছেন : বিবাহ আমার সুন্নত। যে ব্যক্তি (শক্তি থাকা সত্তে¡ও) আমার সুন্নত আদায়ে বিরত থাকবে, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়। তিনি আরো বলেন : যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হলো, সে আমার দলভুক্ত নয়, আর বিবাহ হচ্ছে আমার সুন্নত। অতএব যে আমাকে ভালোবাসে তাকে আমার সুন্নত পালন করা উচিত। তাই যার পক্ষে সম্ভব তার বিবাহ হতে ফিরে থাকা কোনক্রমেই ঠিক নয়। রাসূল (সা.) ও বিবাহের উপকারিতা বর্ণনায় যথার্থ বলেছেন, যা এখনও যুব স¤প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করে : [রাসূল (সা.) বলেছেন], তোমাদের মধ্যে যে বিবাহে সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কেননা বিবাহ (পর স্ত্রী দর্শন হতে) দৃষ্টিকে নিচু রাখে এবং যৌন জীবনকে সংযমী করে। বিবাহের হুকুম : বিবাহ করা স্বাভাবিকভাবে সুন্নত হলেও কোন কোন সময় তা ফরয, ওয়াজিব, হারাম, মাকরূহ ও মুবাহ্ও হয়। এখানে শুধু ফরয ও হারামের বিষয়টি তুলে ধরা হলো। বিবাহ ফরয : যখন কারো বিবাহ না করলে হারামে লিপ্ত হওয়ার আশংকা প্রবল হয় এবং সে বিবাহের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পালনেও সক্ষম; যেমন স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও আনুষঙ্গিক খরচাদি এবং স্ত্রী তার দ্বারা কোন প্রকার অত্যাচারিত হবে না-এর নিশ্চয়তা প্রদান করতে সক্ষম, তখন এরূপ ব্যক্তির উপর বিবাহ ফরয। হারাম বিবাহ : যখন কোন পরুষ নিশ্চিত হবে যে, সে বিবাহ করলে তার স্ত্রী ব্যবহারিক জীবনে নির্যাতিতা হবে, তখন তার জন্যে বিবাহ করা হারাম। যেমন : যদি স্বামী স্ত্রীর যাবতীয় চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয় অর্থাৎ তার শারীরিক দুর্বলতা বা অর্থনৈতিক দুর্বলতা ইত্যাদি প্রবল থাকে। কি ধরনের কনেকে বিবাহ করা উচিত : বিবাহ এমন একটি বন্ধন যা স্বাভাবিকভাবে চিরদিন স্বামী-স্ত্রী একত্রে থাকার জন্যেই হয়ে থাকে। তাদের আশা তারা সুখের নীড় গড়ে তুলবেÑ এজন্য বিবাহের পূর্বেই একে অপরকে ভালোভাবে দেখে শুনে নেয়া প্রয়োজন। কারণ ভালোভাবে দেখে শুনে বিবাহ না করলে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্যই ইসলাম তথা রাসূল (সা.) বিবাহের পূর্বে কনেকে ভালোভাবে দেখার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ বিবাহ এমন ছেলেখেলা নয় যে, ভালো লাগলো না বলে বাজারে বিক্রির মতো নতুন একটি নিয়ে আসবো। তাই বৈবাহিক জীবন সুখময় করতে হলে বিবাহের পূর্বেই কুফ‚ তথা বিভিন্ন দিকে লক্ষ্য রাখা অতীব জরুরি। নতুবা পরে ভালোবাসা তো থাকেই না’ বরং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রথমে দা-কুমড়া সম্পর্ক, পরে চিরদিনের জন্যে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো অশুভ কাজও হয়ে যায়। তাই দেখা যাক পাত্রী চয়নে রাসূল (সা.) কি বলেছেন?
একজন মহিলাকে বিয়ে করার সময় চারটি বিষয় লক্ষ্য করা হয় :
১.তাঁর ধন-সম্পত্তি, ২. বংশ মর্যাদা, ৩. রূপ সৌন্দর্য ও ৪. তার দ্বীনদারী। তবে তোমরা দ্বীনদার মেয়েদেরকে বিয়ে করে সুখ-শান্তিতে থাক। Ñ(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) তাই বিয়ে করে সুখ-শান্তিতে থাকার জন্যে স্বাভাবিকভাবে এ গুণগুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়। কিন্তু উল্লেখিত চারটি গুণে গুণান্বিতা কোন মহিলাকে পেলে তো সোনায় সোহাগা। আর যদি দু’-একটি থাকে তখন কি করতে হবে? যেমন, সুন্দরী আছে, বংশ মর্যাদা আছে, কিন্তু দ্বীনদারী নেই বা ধন-সম্পত্তিতে অতুলনীয় কিন্তু বংশ মর্যাদা নেই, অথবা সুন্দরী নয়, তখন কি করবে? এক কথায় গুণগুলোর ধারাবাহিকতা যদি নিম্নরূপ করা হয়, তবে বৈবাহিক জীবনে সুখের আশা করা যাবে : ১. দীন, ২. বংশ মর্যাদা, ৩. সুন্দরী, ৪. ধনবতী। যদি এ গুণে গুণান্বিতা স্ত্রী কারো ভাগ্যে জুটে, সে-ই সৌভাগ্যবান। কারণ রাসূল (সা.) বলেছেন : দুনিয়ার সকল বস্তুই সম্পদস্বরূপ, আর দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হচ্ছে নেককার স্ত্রী। Ñ মুসলিম। তাই বিবাহের পূর্বে এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। কারণ শুধু ধন সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দীন এবং বংশ মর্যাদার প্রতি ভ্রæক্ষেপ না করলে পরবর্তীতে সুখের সংসার না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ দ্বীনদার স্ত্রীগণ তাদের স্বামীর ক্বদর ও সম্মান বুঝবে। তবে তার ব্যতিক্রম অনেক সময় হয়ে যায়, তা অত্যন্ত নগণ্য। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ