পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর উত্তরায় রান্নাঘরে গ্যাসের চুলার আগুনে দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় একই পরিবারের দুই সদস্য মারা গেছেন। পরিবারের বাকি তিন সদস্য রয়েছেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছটফট করতে থাকা পরিবারের সদস্যদের পোড়া চামড়ার ছিন্নভিন্ন অংশ লেগে আছে ঘটনাস্থলের ফ্ল্যাটটির দরজায়। গ্যাসের পাইপ লাইন লিকেজ থাকায় দেশলাই দিয়ে চুলা ধরানোর সময় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মারা গেছে উত্তরার রাজউক স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্র সালিন (১৫) এবং তার ১৪ মাস বয়সি ভাই জায়ান।
এর আগে গতকাল (শুক্রবার) ভোরে বাবা-মাসহ একই পরিবারের ৫ সদস্য অগ্নিদগ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় আধা-ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যান দুই ভাই। নিহতদের বাবা-মা ও অপর ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
মাত্র ৫ দিন আগে উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর বাড়ির ৭ম তলার ভাড়া করা নতুন ফ্ল্যাটে ওঠেন মার্কিন দূতাবাসের প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ (৫০)। নতুন বাসায় সংসার গোছানো চলছিল। গতকাল ফজরের নামাজ আদায় করতে ওঠে ১৪ মাস বয়সী ছেলে জায়ানকে কোলে নিয়ে পায়চারি করছিলেন খাবারের ঘরে। এ সময় সকালের নাস্তা তৈরি করতে রান্নাঘরে যান স্ত্রী সুমাইয়া (৩৫)। পরিবারের অপর দুই সদস্য বড় দুই ছেলে সালিন (১৫) আর জারিফ (৯) নিজেদের কক্ষে বিভোর ঘুমে। মুহূতেই ভয়ংকর বিপদ নেমে আসে শাহনেওয়াজের পাঁচ সদস্যের পরিবারে। সুমাইয়া রান্নাঘরের গ্যাসের চুলায় দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন ধরাতেই বিকট শব্দ। অর্থাৎ গ্যাসের চুলায় ও পাইপ লাইনে বিস্ফোরণ। নিমিষে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের প্রতিটি কক্ষে। দগ্ধ হন তিন সন্তানসহ বাবা-মা। মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে যায় আনন্দে ভরা একটি সংসার। অগ্নিদগ্ধদের চিৎকার ও আগুন দেখে ঘুম ভাংগে প্রতিবেশির। তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল বলেন, অগ্নিদগ্ধদের চারজনেরই শ্বাসনালি পুড়ে যায়। গৃহকর্তা শাহনেওয়াজ ও স্ত্রী সুমাইয়ার শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়েছে। বড় ছেলে সালিনের ৮৮ ভাগ ও ছোট ছেলে জায়ানের শরীরের ৭৪ ভাগ পুড়ে যাযে। মেজ ছেলে স্কুল ছাত্র জারিফের ছয় ভাগ পুড়ে যাওয়ায় তার অবস্থা তুলনামূলক ভালো। এ ধরনের দগ্ধ মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে। শাহনেওয়াজ ও তার স্ত্রীকে বার্ন ইউনিটের হাই ডিপেনডেনসি ইউনিটে (এইচডিইউ) এবং জারিফকে রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বড় ছেলে সালিন। এর মাত্র আধাঘণ্টা পরেই ছোট ছেলে জায়ানকেও মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মেছ ছেলে জারিফ দরজা খুলে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের ডাকতে দিয়ে কিছুটা রক্ষা পান।
শাহনেওয়াজের স্বজন ও পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের ভাষ্য, নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার পর বাড়িওয়ালা দেলোয়ার হোসেনের কাছে গ্যাস লাইনের ছিদ্র থেকে গ্যাস বের হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গ্যাস লাইনের কাজ করানো হলে হয়তো পাঁচটি তাজা প্রাণ এমন সংকটে পড়ত না।
শাহনেওয়াজের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে প্রচ- বিস্ফোরণের শব্দ হয়। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে বা বাড়িটি বোধ হয় ভেঙে পড়ছিল। ঘরের দরজা খুললে দেখা যায়, পাশের ফ্ল্যাটে আগুন ধরেছে। ছটফট করতে করতে ফ্ল্যাট থেকে লোকজন বের হয়ে আসেন। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পাশের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা দিতে না পারায় অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয় তাদের। সেখানেও সুরাহা না হলে শেষে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আরও কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বের হওয়ার সময় অন্য ফ্ল্যাটগুলোর দরজা ধাক্কা দেন শাহনেওয়াজ। ফ্ল্যাটগুলোর দরজায় পোড়া চামড়ার ছিন্নভিন্ন অংশ লেগে আছে। ঘটনাস্থল ফ্ল্যাটটির দুটি কক্ষ, রান্নাঘর ও খাবার ঘর সবই ছিল ল-ভ-। বেশি পুড়েছে ফ্ল্যাটের পেছন দিকে থাকা রান্নাঘরটি। প্লাস্টিকের জিনিস ও দাহ্য বস্তু সবই পুড়ে গেছে। সব কক্ষের দেয়ালে লেগে ছিল পোড়া চামড়া।
বার্ন ইউনিটে শাহনেওয়াজের ফুপাতো বোন আরমিন নিশাত বলেন, হাসপাতালে ছটফট করার সময়ও আমার ভাই বলছিল যে, আপা আমারে আগুন ধাক্কা দিয়েছে। বাড়িওয়ালাকে গ্যাস লিক হওয়ার কথার বলেছিলাম। এত বড় একটি ঘটনা। পাঁচজন পুড়ে গেল! প্রাণ হারালো দু’জন। কিন্তু বাড়িওয়ালা একবারের জন্যও হাসপাতাল কিংবা ঘটনাস্থলে যাননি। গ্যাস জাতীয় গন্ধ ছড়ানোর বিষয়টি বৃহস্পতিবারও বাড়িওয়ালাকে জানানো হয়। কিন্তু তিনি ব্যবস্থা নেননি। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সালেহ বলেন, এখানে প্রায়ই গ্যাস থাকে না। গ্যাস না থাকার বিষয়ে স্থানীয় তিতাস গ্যাস কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। প্রতিবেশী মনিরুজ্জামানের ভাষ্য, সকালে ঘুম ভেঙে পাশের বাড়ি থেকে তারা চিৎকার ও কান্নার শব্দ শোনেন। পরে দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা আতিকুল আলম চৌধুরী বলেন, গ্যাসের চুলা বন্ধ থাকলেও পাইপের কোনো অংশে হয়তো লিক ছিল। দীর্ঘ সময় ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। এ কারণে চুলা ধরাতে গিয়ে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে। উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার কারণ সম্পর্কে বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।