মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইফতেখার আহমেদ টিপু : পাহাড়-টিলা সিলেটের প্রকৃতিকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছে। দেশের যেসব জেলা পর্যটনের স্বর্গভ‚মি হিসেবে পরিচিত সিলেট তার মধ্যে অন্যতম তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই। কিন্তু কিছু লোভী মানুষের জন্য এই মনোরম জনপদ টিলাশূন্য হতে চলেছে। দেশের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও অসাধু প্রভাবশালীরা একের পর এক টিলা কেটে সিলেটের সহজাত সৌন্দর্যকে কেড়ে নিচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন টিলা কেটে টিলাখোররা তৈরি করছে আলিশান বাড়ি ও রিসোর্ট। আবাসিক প্রকল্পে বালুর বিকল্প হিসেবে ভরাটের জন্য ঢালাওভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে টিলার মাটি। এক সময় সিলেটের শাহি ঈদগাহ, টিভি গেট, বালুচর, বিমানবন্দর এলাকা, মেজরটিলা, খাদিমপাড়া, লাক্কাতুরা, শাহপরাণ, বটেশ্বর, পাঠানটুলা ইত্যাদি এলাকায় প্রচুর পাহাড় ও টিলা থাকলেও এসব এলাকা তার আপন বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে।
পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, যে হারে টিলা কাটা হচ্ছে তাতে সিলেট অচিরেই টিলাশূন্য হয়ে পড়বে। টিলা কেটে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাড়ি তৈরির ফলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি ছয় উপজেলায় পাহাড়-টিলা কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু তারপরও টিলা কাটা থেমে নেই। নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও সর্বত্রই টিলা কেটে আলিশান বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ব্যক্তিমালিকানাধীন কিছু টিলা মালিক ট্রাকে ট্রাক টিলার মাটি বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও সিলেটে যেভাবে টিলা কাটা হচ্ছে তা আইনের শাসনের ক্ষেত্রে আমরা কোথায় বাস করছি সে প্রশ্নটিই জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ মূলত সমতল ভ‚মি, সারা দেশে পাহাড় টিলার সংখ্যা সত্যিকার অর্থেই কম। সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় টিলাগুলো দেশের পরিবেশকে বৈচিত্র্যময় করেছে। কিন্তু একশ্রেণির মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাÐ এগুলোর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি হিসেবে বিবেচিত সিলেটের পাহাড় টিলা প্রতিদিনই কমছে পাহাড়খেকোদের অপতৎপরতায়। ফলে সিলেটের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। পাহাড় কাটা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও তা দেখার কেউ নেই। টিলা কেটে প্রতিদিনই বিক্রি করা হচ্ছে মাটি এবং সমান্তরাল হয়ে যাওয়া স্থানে প্লট করে তা আবাসনের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ অবৈধ ব্যবসায় কোটিপতি বনেছে বিপুলসংখ্যক লোক। তারা তাদের অর্জিত অর্থের একাংশ ব্যয় করছে প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের পেছনে। ফলে একের পর এক টিলা কেটে সমান করা হলেও আইন তা প্রতিরোধে কোনো ভ‚মিকাই রাখতে পারছে না। সবুজ বনবনানী, চা বাগান শোভিত সিলেটের পাহাড় টিলাগুলো বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে প্রশাসনের দেখেও না দেখার অবিমৃষ্যকারিতায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি হিসেবে সিলেটের যে পরিচিতি রয়েছে তা ব্যাহত হবে।
পর্যটন আকর্ষণের ক্ষমতা হারাবে এ জনপদ। গত পাঁচ বছরে পরিবেশ অধিদফতর সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে পাহাড় টিলা কাটার অভিযোগে ৯২টি মামলা এবং ৭টি অভিযান পরিচালনা করে ২৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা আদায় করলেও এ তৎপরতাকে আইওয়াশ বলে অভিহিত করলেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ছাড়া পাহাড় টিলা কাটার দায়ে তারা দৃশ্যত নীরব। নদী থেকে পাথর উঠানোর ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে একই ধরনের নীরবতা। সিলেটের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষায় পাহাড় টিলা কাটা এবং মেশিন দিয়ে পাথর উঠানো বন্ধ করতে হবে। এসব ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারীরা দায়বোধের পরিচয় দেবেন এমনটিই কাক্সিক্ষত।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।