মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ড. শেখ সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ : মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির সব ধরনের ওষুধ এবং ১৪টি কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে দেশের উচ্চ আদালত। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রুল যথাযথ ঘোষণা করে তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধ তৈরি বা বিক্রি করছে কিনা এবং কোম্পানিগুলোর পরিস্থিতি তদারকি করে প্রতি তিন মাস পর পর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি চলমান তদারকিতে রাখার কথাও বলেছে আদালত।
মানুষ সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ ব্যবহার করে। কিন্তু সে ওষুধ যদি মানহীন হয় তবে সুস্থতার বিষয়টি অনিশ্চিতই শুধু নয়, জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সংসদীয় কমিটি মানহীন ওষুধ তৈরির জন্য ৩৪টি ওষুধ কোম্পানিকে চিহ্নিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা সত্তে¡ও তারা নানা কৌশলে সে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলছিল। উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তাদের সে অপকৌশলে লাগাম পরানো হয়েছে। দেশের মানুষের জীবন সুরক্ষার পক্ষে আদালতের রায়টি শুধু রিট আবেদনকারীই নয়, ১৬ কোটি মানুষের জন্য ‘সুবিচার’ নিশ্চিত করেছে। আদালতের এ রায় ওষুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই। মানহীন ওষুধ উৎপাদনের জন্য ৩৪টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হলেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি। আমরা আশা করব মানহীন ওষুধ তৈরির সঙ্গে জড়িত সবার ক্ষেত্রেই ওষুধ প্রশাসন কঠোর হওয়ার সক্ষমতা দেখাবে। ওষুধ কোম্পানির বদলে ওষুধ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যে দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকায় বেতন-ভাতা পান তাদের স্বার্থ রক্ষায় যতœবান হবেন এমনটিই কাম্য।
আদালতের পাশাপাশি সংসদীয় কমিটিও এ ব্যাপারে চোখ-কান খোলা রাখবে তা দেশবাসীর প্রত্যাশিত। জীবন রক্ষায় ব্যবহৃত হয় ওষুধ। আশার কথা, বাংলাদেশেই এখন মানসম্মত ওষুধ তৈরি হচ্ছে এবং এ দেশের ওষুধ ইউরোপ আমেরিকায়ও রপ্তানি হচ্ছে। তবে হতাশার দিকও কম নয়। মানহীন ওষুধও এ দেশে অহরহ তৈরি হচ্ছে। প্রতারিত হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। ওষুধের দাম নিয়েও চলছে যা ইচ্ছাতাই। যখন-তখন দাম বাড়ানো উৎপাদকদের মজ্জাগত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। ওষুধ বিপণনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে চলছে যাচ্ছেতাই অবস্থা।
বাংলাদেশে ওষুধের ট্রায়াল নিয়ে বিরাজ করছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ওষুধ মানুষের ব্যবহারের জন্য উš§ুক্ত করার আগে কার্যকারিতা পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে ওষুধ বাজারজাতের আগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়া হয় না। ৯০০টি প্রতিষ্ঠান ২২ হাজার ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে প্রায় ১ হাজার ২০০টি জেনেটিক ওষুধ বাজারজাত করছে। সাতটি উন্নত দেশে চালু রয়েছে এমন প্রমাণ দেখাতে পারলে ওষুধ বাজারজাতের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন খুব সহজেই পাওয়া যায়। কখনো ব্যত্যয় ঘটলে কেবল সে ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাগজপত্র হাজির করা হয়। এ ব্যাপারে সরকারের যে নজরদারি থাকা উচিত তা তার অস্তিত্বে খুঁজে পাওয়া ভার। ফলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নামে কার্যত প্রহসনের আয়োজন হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারেও সংশয় রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের ব্যাপক অগ্রগতি ঘটলেও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে যতটা কড়াকড়ি থাকা উচিত তাতে ঘাটতি রয়েছে। দেশে যেমন মানসম্মত ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে তেমন নকল, ভেজালের পরিমাণও কম নয়। আমি মনে করি, ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো হেরফের বাঞ্ছনীয় নয়। প্রতিটি ওষুধ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার আগে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী যাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
লেখক : এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।