কৌতুকের ঝাঁপি
কী বল উল্টা-পাল্টা শিক্ষক : বল তো সার্ক (ঝঐঅজঈ) কী?ছাত্র : সার্ক (ঝঐঅজঈ) একটা হাঙ্গর?শিক্ষক : কী বল উল্টা-পাল্টা। পারলে না। এবার বল সার্কের জন্মদাতা কোন
মামুন-সিরাজী : ফিরোজ সাহেব আপনি আর কাল থেকে অফিসে আসবেন না। এমডি স্যারের মুখ থেকে কথাটা শুনে যদিও ফিরোজের খুব অবাক হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে হলো না। কারণ সে এ কথাটা শোনার জন্য মনে হয় প্রস্তুতই ছিল। আর এ কথাটা যে সে আজ প্রথম কোনো এমডির মুখ থেকে শুনছে তা না। সে আগেও যে কয়টা কোম্পানিতে জব করত সেই চাকরিগুলোও তার এই এক কারণেই গেছে। কারণটা হলো অফিসের অন্য সব কর্মচারীর মতো সে কথায় কথায় ইংরেজি বলতে পারে না। পারে না বললে ভুল হবে। বলে না। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স করা ছেলে যে ইংরেজি পারে না তা না। আর এই ইংরেজিগুলো খুব কঠিন ইংরেজি নি। কথায় কথায় আমরা এখন যে ইংরেজিগুলো ব্যবহার করি সেইগুলো। যেমন ঐর, ঐবষষড়,ি ঞযধহশং, এড়ড়ফ সড়ৎহরহম, ঐধাব ধ হরপব ফধু ইত্যাদি। ফিরোজের যখন এই কথাগুলো বলার প্রয়োজন পরে তখন সে এগুলোর বাংলার ব্যবহার করে। যেমনÑ যর, যবষষড়-ির জায়গায় এই যে ভাই/আপু। ঃযধহশং-র জায়গায় ধন্যবাদ। মড়ড়ফ সড়ৎহরহম-র জায়গায় শুভ সকাল। যধাব ধ হরপব ফধু-ও জায়গায় আপনার দিনটি শুভ হোক এরকম আর কি.... এই জন্য ফিরোজ অফিসের সবার সমালোচনার পাত্র। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির একজন কর্মচারী হিসেবে ওর এই ভাষাগুলো নাকি খুবই বেমানান। এম ডি সাহেব অনেকবার ফিরোজকে বলেছেন যে,
Ñফিরোজ সাহেব এই ক্ষেত বাংলাগুলো পরিহার করুন। ভুলে যাবেন না এটা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। আমি চাই না আমাদের কোনো কর্মচারী অন্য কোম্পানির কর্মচারীদের সাথে যৌথভাবে কাজ করার সময় হাসির পাত্র হোক। এটা যেমন আপনার ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব ফেলে তেমনি আমাদের কোম্পানির মানও ক্ষুণœ করে। কলিগরাও ফিরোজকে অনেকবার বলেছে যে,
-ফিরোজ ভাই কথাবার্তায় আরেকটু স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করুন। নইলে এই চাকরিটাও থাকবে না। আগে যাই করেছেন, এখন বউ বাচ্চা আছে চাকরি হারালে কতটুকু বিপদে পড়বেন ভেবেছেন একবার? এই কথাগুলো শুনতে শুনতে ফিরোজ এখন বিরক্ত হয়ে গেছে। এখন আর এসব কানে লাগায় না। সে সবার সব আদেশ, অনুরোধ রাখতে পারে, শুধু এই ভাষা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো ছাড়া। কারণ সে তার মাতৃভাষাকে প্রচুর ভালোবাসে। সে বাংলায় কথা বলার ভেতর কোনো ইংরেজি ব্যবহার করতে চায় না। তার মতে, এতে কওে মাতৃভাষাকে অপমান করা হয়। কিন্তু এই মাতৃভাষাকে সম্মান করতে গিয়ে বার বার চাকরি হারাচ্ছে। তবুও তার এতে বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। সে ভাবে এই ভাষার জন্য তো বাহান্নতে ভাষা শহীদরা জীবন বিসর্জন দিয়েছিল আর আমি এই সামান্য চাকরি বিসর্জন দিতে পারব না!! যে কোম্পানিতে বাংলা ভাষার চেয়ে ইংরেজির মূল্য বেশি ওই কোম্পানির চাকরি আমি করব না। ফিরোজ মনে করে কোম্পানির মান যাই হোক, কোম্পানির অবস্থান তো বাংলাদেশে। যখন প্রয়োজন হয়, তখন বিদেশি ভায়ারদেও সাথে তো আমি ইংরেজিতেই কথা বলি। আমরা সবাই তো বাঙালি। তাহলে আমাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় ভিতরে ইংরেজি ঢুকাতে হবে কেন? কিন্তু আমাদের বাস্তব সমাজে এসবের কোনো মূল্য নেই। মূল্য থাকলে তো আর তাকে বারবার চাকরি হারাতে হতো না। যা হোক এমডি স্যারের কথা শুনে ফিরোজ উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। এই হাসি উপহাসের হাসি। ইংরেজির বদলে বাংলা বলার জন্য যে একজন বাঙালি এমডি স্যার তার চাকরি কেড়ে নিল, তার জন্য উপহাস।
২.
ফিরোজ রাস্তা দিয়ে উন্মাদের মতো হাঁটছে। ত্রিশ বছর বয়সের ফিরোজের পা দুটো আজ ষাটোর্ধ্ব মানুষের পায়ের মতো ভারি মনে হচ্ছে। সে চাইছে আজ পথ অনেক দীর্ঘ হয়ে যাক। কারণ বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে কী কওে বলবে যে চাকরিটা চলে গেছে। নিশ্চয় স্ত্রী তাকে অনেক বকবেন। তবে এতে কোন আফসোস নেই তার এই ভেবে যে আমি হেওে গেলেও আমার মায়ের ভাষাকে তো আমি হারতে দেইনি। ফিরোজ যখন এসব ভাবছে তখনই রাস্তার পাশে পার্ক করা একটি ট্রাকের পেছনে ঝঞঙচ লেখা দেখে তার চোখ আটকে গেল। সে আস্তে আস্তে ট্রাকের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর ড্রাইভারের সিটে বসা লোকটাকে উদ্দেশ করে বলল
Ñভাই আপনার মালিককে বলবেন ট্রাকের পিছনের ঝঞঙচ লেখা প্লেটটা পরিবর্তন কওে ওখানে “থামুন” লেখা প্লেট লাগাতে। ড্রাইভার কথাটা শুনে ফিরোজের দিকে একবার ভূত দেখার মতো করে তাকাল। তারপর ফিরোজ যখন চলে আসছিল, তখন ড্রাইভার বির বির করে কেবল বলল
-পাগল কোথাকার। অতঃপর ফিরোজ বাসায় ফিরে বিছানায় গাটা এলিয়ে দিল। ড্রয়িং রুম থেকে টিভির আওয়াজ আসছিল যেখানে হিন্দি সিরিয়াল চলছিল।
চলবে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।