বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হোসেন মাহমুদ : যেসব লজ্জাকর ও অগৌরবের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে, পিলখানা ট্র্যাজেডি তার একটি। রূঢ় ভাষায় বললে এটি আমাদের ইতিহাসে এক দগদগে ঘা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হয় এ ভয়ঙ্কর ঘটনা। এ ছিল এক নৃশংস হত্যাকা-। নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, অমানবিকতার যত হীনদৃষ্টান্ত বিশে^ স্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর কাতারে ফেলা যায় এ ঘটনাকে। এর ফলে সেনাবাহিনী যেমন প্রতিভাবান, সুদক্ষ, চৌকস সেনা অফিসারদের হারায় তেমনি দেশজুড়ে বয়ে যায় কান্না ও শোকের অনিঃশেষ করুণ মাতম। এ বছর পিলখানা ট্র্যাজেডির আট বছর পূর্ণ হলো। এতদিন হয়ে গেল, সে মাতম থামেনি। এ হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচার হয়েছে ২০১৩ সালে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানিও শেষ পর্যায়ে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়ে যায় বাহিনীর নাম ও পোশাক।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধের স্মৃতিবহ তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির সকালটি শুরু হয়েছিল উৎসবের আমেজে। বিডিআর সপ্তাহ চলাকালীন ঐ দিনটি ছিল বিডিআরের ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক দরবার। আর সে দরবারে যোগ দিয়েছিলেন বহুসংখ্যক বিডিআর সদস্যসহ বাহিনীতে কর্মরত প্রায় সকল অফিসার। কিন্তু এ উৎসবের আড়ালে যে ঘনিয়ে উঠেছিল দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ, এসব অফিসারদের তা জানা ছিল না। অনতিবিলম্বে তার নির্মম প্রকাশ ঘটে। তাই দরবার শুরু হওয়ার পরপরই সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উৎসব রূপ নেয় যেন রোজ কিয়ামতে। বিডিআর সদস্যরা সব রীতিনীতি ভেঙে গুঁড়িয়ে তাদের অফিসারদের হত্যা করে। তাদের বর্বরতার শিকার হয়ে নিহত হন মোট ৭৪ জন। তাদের মধ্যে ৫৭ জনই মেজর জেনারেল থেকে ক্যাপ্টেন র্যাংকের সেনা অফিসার। প্রথমেই তারা হত্যা করে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে। তারপর অন্যান্য অফিসারদের। বিডিআর সদস্যদের বর্বরতার শিকার হন অফিসারদের স্ত্রী সন্তানরাও। যেমন মেজর জেনারেল শাকিলের স্ত্রীও তাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। ৩৩ ঘণ্টা পর বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে। সে হত্যাকা- থেকে ৩৩ জন সেনা অফিসার রক্ষা পান।
বিডিআর বিদ্রোহ যেমন ছিল সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত তেমনি ৫৭ জন সেনা অফিসারের মৃত্যুও ছিল অকল্পনীয়। সে সময় এধরনের একটি কথা উঠেছিল যে দীর্ঘদিনের শোষণ, নিপীড়ন, বেতন-ভাতা, পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য, সেনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পরিচালিত অপারেশন ডাল-ভাতের অর্থ আত্মসাৎ ইত্যাদি কারণে তথা সাধারণ বিডিআর সদস্যদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত আক্রোশের পরিণতি হিসেবে এ বিদ্রোহ ঘটে এবং তার ফলেই অফিসাররা হত্যার শিকার হন। কিন্তু পরবর্তীতে তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণে তার সত্যতা মেলেনি।
যাহোক, এব্যাপারে হত্যামামলা দায়ের করা হয়। ৮৫০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়। বিশেষ আদালতে এর বিচার চলে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যামামলার রায় দেয়া হয়। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদ- প্রদান এবং ১৬১ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদ-। ২৬২ জনকে ৩ থেকে ১০ বছর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। এখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পিলখানা ট্র্যাজেডির হত্যার বিচার হলেও বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ নিরূপিত হয়নি। জানা যায়, রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন যে, ‘বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির ‘অপারেশন ডালভাত’ কর্মসূচিতে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিডিআরকে জড়ানো ঠিক হয়নি। এটা বাহিনীর ‘ঐতিহ্য’ নষ্ট করেছে। রায়ে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনার পেছনে অর্থনৈতিক ‘মোটিভ’ ছিল। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ‘মোটিভও’ থাকতে পারে। এই বিদ্রোহের তথ্য আগে জানতে না পারার ঘটনায় ‘গোয়েন্দা দুর্বলতা’ ছিল বলেও মনে করেছেন আদালত। বিচারক বলেন, সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করার মোটিভ নিয়ে এই বিদ্রোহের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের দেশকে ছোট করা, বিদেশি বিনিয়োগ না আসার জন্য কলকাঠি নাড়া হয়েছে। আদালত মনে করে, দেশের ‘অর্থনৈতিক মেরুদ-’ দুর্বল করার জন্য ওই বিদ্রোহ ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। আর সশস্ত্র বাহিনীকে নিরুৎসাহিত করাও এর একটি কারণ হতে পারে।’
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা সারাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছিল প্রচ- উদ্বেগ। সে সময় পিলখানা ও আশপাশের কিছু এলাকা ছাড়া অন্যত্র জনজীবনে এ ঘটনার কোনো বাহ্যিক প্রভাব দেখা যায়নি। তবে পরদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিডিআর অবস্থানগুলোতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কিছু ঘটনা ঘটেছিল। সে জন্য পরে বেশকিছু বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানা যায়। তো এ ঘটনায় নানা স্তরের মানুষ নানা মত প্রকাশ করে। অফিস-আদালতে, চায়ের দোকানে নানা জন নানা মত প্রকাশ করে এ মর্মান্তিক ঘটনার ব্যাপারে স্ব স্ব জ্ঞান-বুদ্ধিজাত মত প্রকাশ করেছে। অনেকেই বলে সেনাবাহিনী থেকে আসা অফিসাররাই বিডিআর চালায়। বিডিআর সদস্যদের তা পছন্দ নয়। তারা নিজেদের মধ্য থেকে অফিসার চায়। কিন্তু কোনো সরকারই সে দাবি মানেনি যা তাদের মধ্যে বড় রকমের ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি করে। তার সাথে আরো অনেক কারণ মিলে এ ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ বলে যে, ডাল-ভাত কর্মসূচির নামে অফিসাররা টাকা লুটে পুটে খেয়েছে। আবার অনেকে বলে যে, ২০০১ সালে কুড়িগ্রামের রৌমারির বড়াইবাড়ি সীমান্ত ফাঁড়িতে বিডিআরের সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ভারতের ১৮ জন বিএসএফ সদস্য নিহত হয়েছিল। অন্যদিকে সিলেট সীমান্তের পদুয়াতেও তারা বিডিআরের হাতে ভীষণভাবে অপদস্থ হয়ে তাদের অবৈধ দখল ছাড়তে বাধ্য হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে তারা বিডিআরকে ধ্বংস করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অনেকেই বলে, বিডিআরের মধ্যে অসন্তোষের কারণেই যদি এটা হবে তাহলে এত সেনা অফিসারকে তারা হত্যা করবে কেন? বিডিআর প্রধান ও আরো দু’চারজনকে হত্যা করলেই তো তাদের প্রতিশোধ নেয়া হতো। আর সেনা অফিসাররা তো সরাসরি তাদের শোষণ করেন না। তারা কাজ করান সুবেদার, নায়েব সুবেদারদের দিয়ে। অফিসারদের দালালি করলেও তারাই করে। কিন্তু বিডিআর সদস্যরা তাদের কাউকেই হত্যা করেনি কেন? কেউ কেউ বলে যে, এ হত্যার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। অনেকদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ সবই ধারণা ও অনুমানকৃত মত-মন্তব্য, বাস্তবে প্রমাণিত নয়। কিন্তু একটি অভিন্ন সত্য জনসমাজের সর্বত্রই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কেউই এ নির্মম হত্যাকা-ের প্রতি ন্যূনতম সমর্থনও জানায়নি, বরং খুনিদের প্রতি সর্বাত্মক ঘৃণা ব্যক্ত করেছে, মর্মাহত হয়েছে সেনা অফিসারদের নৃশংস হত্যায় এবং সমব্যথি হয়েছে তাদের স্বজনদের শোকে। বাংলাদেশের মাটিতে এরকম ঘটনা অকল্পনীয় বলেই মনে হয়েছে সবার কাছে।
অনেকেই মনে করেন, বিডিআরের সেনা অফিসারদের হত্যার প্রকৃত রহস্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনারেল. (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ২০১৪ সালে তার এক লেখায় বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার সময় আদালত এই ঘটনার কয়েকটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।... যেমন তারা বলেছে, এই যে, বিদ্রোহের ঘটনাটি ঘটল, এর পেছনে কারা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে, তাদের ব্যাপারে আদালত কোনো তথ্য পায়নি। এতবড় একটি বিদ্রোহ, সেটিতে কারো ইন্ধন ছিল কিনা, সে সম্পর্কে আমরা এখনো কোনো তথ্য জানি না। এটি আমাদের গোয়েন্দা ব্যর্থতার প্রতিফলন। দ্বিতীয়ত, বিডিআরের এই বিদ্রোহের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী ছিল? সত্যিকার উদ্দেশ্য না বের করতে পারলে আমরা যে বিচারের ক্ষেত্রে সফল হয়েছি, এটি বলা যায় না। ... বিডিআরের ঘটনাকে শুধু ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে দেখা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। আজকে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, তাদের বিচারের জন্য তথ্য অনুসন্ধান করছি। সেটি ৪৩ বছর আগের একটি বিষয়। তাহলে আমরা কেন বিডিআর বিদ্রোহের পেছনের উদ্দেশ্য বের করতে পারব না?’
সেনাবাহিনীর সাবেক অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল আমীন আহম্মদ চৌধুরী বীর বিক্রম ২০১২ সালে পিলখানা ট্র্যাজেডির তৃতীয় বার্ষিকীতে এক নিবন্ধে বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় আমার মনে যেসব প্রশ্ন জেগেছে, প্রথমেই তা পাঠককে জানাতে চাই। বিডিআর বিদ্রোহের মাস তিনেক আগ থেকে গোয়েন্দা ও অন্যান্য সংস্থার পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল। এসব প্রতিবেদনে ডাল-ভাত কর্মসূচি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। পরে অবশ্য দেখা গেছে, কোথাও সে রকম দুর্নীতি হয়নি। ডাল-ভাতের কর্মসূচিতে মাত্র দু’জন কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকে সামান্য অর্থ নেয়া হয়েছিল কল্যাণ তহবিলে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে আমি যখনই টেলিভিশনে খবরটা দেখি, যেসব সাংবাদিক আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাঁদের জানাই গেটে অস্ত্র হাতে একজন দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর পায়ে স্লিপার। বিডিআরের কোনো লোক এই কাজ করবে না। হয়তো বিডিআরের পোশাক পরে বাইরের লোক এ কাজ করছে। পরদিন ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে একটি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। আমার মনে প্রশ্ন, ডিএডির পদমর্যাদার একজন লোককে তিনি কেন দেখা করার অনুমতি দেবেন। যাঁরা এই সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছেন, তাঁরা ঠিক করেননি। ডিএডি তৌহিদ যখন বললেন, তাঁর জওয়ানরা সবাই আত্মসমর্পণ করবে, তখন পিলখানার ভেতর থেকে একজন বলছিল, ‘আমাদের কমান্ডার আত্মসমর্পণ করতে নিষেধ করেছেন।’ কে তাদের কমান্ডার? রহস্য উদ্ঘাটনে এটি বের করারও দরকার ছিল। দ্বিতীয়ত, বিডিআর কেন ডাল-ভাত বিক্রি করবে? কে তাদের এই পরামর্শ দিয়েছে। বিডিআরের কাজ সীমান্ত পাহারা দেয়া। প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার বিষয়টিও দেখতে পারে। আমি মনে করি, এর পেছনে দুরভিসন্ধি ছিল।’
আশ্চর্য যে দেশের এ দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং আরো কেউ কেউ বিডিআর বিদ্রোহকে খুব সহজ বিষয় হিসেবে না দেখলেও বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ. মরিয়ার্টি এটিকে গুরুতর কোনো বিষয় হিসেবে দেখেননি। তিনি এ প্রসঙ্গে স্বদেশে তার ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত বার্তায় জানান যে বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে তারা কোনো বহিঃশক্তির হাতের প্রমাণ পাননি। তাঁর ধারণা, বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল বিডিআর জওয়ানদের বেতন-ভাতা, চাকরির সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বঞ্চনাবোধ ও তা থেকে জমে ওঠা ক্ষোভ।
সে যাহোক, দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপিও মনে করে যে পিলখানা হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ সামরিক কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে বিএনপি নেতারা বলেন, প্রকৃত হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়টি এখনো রহস্যময় রয়ে গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে শে^তপত্র প্রকাশ এবং সে সাথে পিলখানা হত্যাকা-ের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশেরও দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ৭ বছর পর ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের দেড়মাসের মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ নামের এ অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয়। সরকার তার বিবেচনামত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং দ্বিতীয় দিনেই এ বিদ্রোহের অবসান ঘটে। বেশিরভাগ জনই সরকারের পদক্ষেপকে যথোচিত ও বিচক্ষণতা প্রসূত বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক সেনা কর্মকর্তার জীবনহানির ঘটনাও এক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে শোকাহত বহু পরিবার ও কিছু সেনা সদস্যসহ অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ পরিলক্ষিত হওয়ার কথা জানা গিয়েছিল।
এ ঘটনার পর বিডিআরের নতুন নামকরণ হয়েছে বিজিবি। বিডিআরের সবকিছু বদল হয়নি, তবে কিছু হয়তো বদলেছে বিজিবিতে। সেনাবাহিনীর অফিসাররা পূর্বের মতোই বিজিবিতে দায়িত্ব পালন করছেন। আট বছর আগে সৃষ্ট বিডিআরের ইতিহাসের ভয়ঙ্কর এ ক্ষত এতদিনে হয়তো অনেকটাই মিলিয়ে এসেছে। যারা মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবন কারাদ-, বিভিন্ন মেয়াদি কারাদ-, চাকরিচ্যুতিসহ নানা শাস্তির শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক নিরপরাধ বা পরিস্থিতির শিকার কিনা তা একমাত্র সর্বজ্ঞ আল্লাহপাক জানেন। আজ এদিনে আমরা পিলখানা হত্যাকা-ে শহীদ সেনা অফিসারদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। সে সাথে একান্ত প্রার্থনা এই যেন জাতিকে আর কখনো এধরনের ভয়াবহ ও শোকাবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।