Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদ-নদী রক্ষায় বাংলাদেশকে সচেতন হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ কে এম শাহাবুদ্দিন জহর : বেশ কয়েক বছর পার হয়ে গেল। ভারত তিস্তা চুক্তি করল না। চুক্তি করল না তো ভালোই, তিস্তায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বহাল থাকবে। কিন্তু চুক্তি না থাকার অজুহাতে ভারত তিস্তার পানি একতরফা ব্যবহার করছে। ফলে বাংলাদেশের সর্ব উত্তর দিয়ে প্রবেশ করা তিস্তা নিজে শেষ হচ্ছে, পানির প্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে বাদবাকি প্রায় সব নদ নদীর। ফলে কৃষির সেচের জন্য, নৌ চলাচলের জন্য, মৎস্য পালনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি বাংলাদেশে আর নেই। শুধু তিস্তা একা নয়, ফারাক্কার কারণে পদ্মা এবং আরও বিভিন্ন ভারতীয় বাঁধের কারণে বাদবাকি আন্তর্জাতিক নদীগুলোতেও দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। দেশ মরুভ‚মি হয়ে যাচ্ছে। মরুভ‚মিতে যেমন পানীয় জল সংগ্রহের জন্য জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হয়, বাংলাদেশের মানুষকেও ক্রমাগত তাই করতে হচ্ছে। দেশে জলাধারগুলোও আগের মতো নেই। দেশবাসীকে এখন খাবার ও নিত্য ব্যবহার্য পানির জন্য গভীর নলক‚প বিপুল অর্থ ব্যয়ে স্থাপন করতে হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন, কিন্তু বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণ ও লুণ্ঠন করছে অন্য একটি দেশ। বাংলাদেশ স্বাধীন, কিন্তু সে তার জীবনীশক্তি পানির লুণ্ঠন ঠেকাতে পারছে না। বাংলাদেশ স্বাধীন কিন্তু বাংলাদেশ তার নদ-নদীগুলোকে লুণ্ঠনমুক্ত রাখতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দাবি স্থাপনও করতে পারছে না অজ্ঞাত কারণে। পানি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে মোদি-মমতার নাটক দেখে দেখে। বাংলাদেশের মানুষ স্যামুয়েল বাকেটের ওয়েটিং ফর গডো নাটকের দুজন রাস্তার লোকের মতো ‘গডো’র জন্য অপেক্ষা করছে। নাটকের শেষ দৃশ্য পর্যন্ত গডোর দেখা মেলেনি, তারপরেও তারা অপেক্ষা করতেই থাকে। আমাদের গডোও হয়তো কখনো আসবে না, তারপরেও আমাদের অপেক্ষা করেই যেতে হবে। কারণ গডোর ভৃত্য বার্তা দিচ্ছে যে, গডো আসবে।
ভারত বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর পানি লুণ্ঠন করছে। পানি লুণ্ঠনের ষোলকলা পূর্ণ করার জন্যই তারা প্রণয়ন করেছে আস্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। ভারত যদিও দাবি করছে সে তার পূর্ব অঞ্চলের পানিকে পশ্চিমাঞ্চলে নিয়ে গিয়ে সেখানে ফসল ফলাবে। আসলে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো শুধু বাংলাদেশের নদ-নদীর পানিকেই তার পশ্চিমাঞ্চলে পাচার করা। এতে সে যেমন তার দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা সমৃদ্ধ করতে পারবে, তেমনি পারবে বাংলাদেশকে দুর্বল করে রাখতে। ভারতের কোনো রাজ্যই তার এক ফোঁটা পানিও অন্য রাজ্য যেতে দেবে না। দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন রাজ্যে নদীর পানির বণ্টন নিয়ে অনেক অঘটন ঘটেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কখনো এই বিবাদকে আরও বাড়াতে চাইবে না। দেশের পতাকা, নিজস্ব সেনাবাহিনী, নিজস্ব রাজধানী যেমন স্বাধীনতার প্রতীক, তেমনি অন্য রাষ্ট্রের লুণ্ঠন থেকে নিজ দেশের সম্পদ ও জনগণকে রক্ষা করাও স্বাধীনতার দাবি। কিন্তু আমরা যদি নদ-নদীর পানি, বনভ‚মি, জনগণের ভোটাধিকার, সমুদ্র সীমানাসহ নানা সম্পদ বিদেশিদের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে না পারি, তবে আমাদের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে অবিভক্ত ভারতের প্রদেশগুলোতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ছিল, কিন্তু দেশ তখন স্বাধীন ছিল না। কারণ বৃটিশরা এদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিজ দেশে পাচার করত।
বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এর কারণ কিন্তু বাংলাদেশের সোনার খনি বা অন্য খনিজ সম্পদ কিংবা সমুদ্র সম্পদ নয়, কিংবা বাংলাদেশের মাটি রতœগর্ভা বলে নয়। এর কারণ হলো বাংলাদেশ নদ-নদী, খাল-বিল হাওর-বাঁওড়ে ভরপুর। নদীর পানি বাংলাদেশকে উপহার দেয় নানা রকমের ফসল ও মৎস্য সম্পদ এবং সহজ নৌ যাতায়াত ব্যবস্থা। এক্ষণে এই নদ-নদী যদি শুকিয়ে যায় বা পানিশূন্য থাকে তবে দেশের ১৬ কোটি মানুষ কিসের ওপরে জীবন ধারণ করবে?
রাজনীতিক, সংবাদপত্র কর্মী, পরিবেশবাদী এবং দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরা বছরের পর বছর ধরে চিৎকার করে বলছেন যে, নদ-নদীর পানি কমে যাচ্ছে, নদী মরে যাচ্ছে, নদীতে পানি না থাকায় নদী তীরের মানুষেরা বেকার হয়ে পড়েছে প্রভৃতি। কিন্তু কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তা কেউ বলছেন না। সমাধানের জন্য তারা যেসব প্রস্তাব দিচ্ছেন তার অধিকাংশই আবার অবাস্তব। তারা বলেন আলোচনার মাধ্যমে আরও বেশি পানি আনার কথা। তারা কখনো নদ-নদীর পানি রক্ষায় পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন না। এমনকি জাতিসংঘের কাছে সাহায্য প্রার্থনা পর্যন্ত করার দাবিও করেন না। কারণ পাছে গণেশ উল্টে যায় এবং তারা রসাতলে পড়েন।
নদ-নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। এদেশ সোমালিয়ার মতো দুর্ভিক্ষপীড়িত এবং সন্ত্রাসকবলিত হয়ে পড়বে। তাই যে কোনো মূল্যে আমাদের নদ-নদী রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অতীতে কে ভালো করেছে আর কে খারাপ করেছে তা দেখলে চলবে না। ইতিহাসের মর্মার্থ খুঁজে বের করতে হবে। ভারত এক সময়ে আমাদের সাহায্য করেছে সত্য। কিন্তু সেটা সে করেছে আমাদেরকে ভালোবেসে নয়, তার শত্রæকে বিভক্ত ও দুর্বল করার জন্য। তা না হলে তারা আরাকানের রোহিঙ্গা নির্যাতনে প্রতিবাদ না করে বরং মিয়ানমারকে সমর্থন জানাবে কেন? রাষ্ট্রের স্বার্থে পুরনো দিনের শত্রæকেও বন্ধু হিসেবে বুকে জড়িয়ে ধরা যায়। ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমেরিকা ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছিল। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধসহ বহু যুদ্ধ ঘটেছিল। ফ্রান্সের সন্ন্যাসিনী নামে খ্যাত মেয়ে জোয়ান অব আর্ককে ইংরেজরা পুড়িয়ে মেরেছিল। তারপরেও ফ্রান্স ও ব্রিটেন দুটি বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে হাতে হাত ধরে যুদ্ধ করেছিল। ব্রিটেন ও আমেরিকা আলাদা রাষ্ট্র হয়েও একক সিদ্ধান্তকেই পছন্দ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষে এসে আমেরিকা বিধ্বস্ত জাপানের ওপরে দু-দুটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। তারপরেও জাপান ও আমেরিকা এখন একে অন্যের অকৃত্রিম বন্ধু। সুতরাং দেশ ও দেশের সম্পদ রক্ষার স্বার্থে আমাদেরও পুরনো বন্ধুদের খুঁজে বের করা এবং নতুন বন্ধুর সন্ধান চালিয়ে যেতে হবে।
য় লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->