Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ

পথ নির্দেশ

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা এইচ.এম গোলাম কিবরিয়া (রাকিব)
বিবাহ বাংলা শব্দ, আরবী ভাষায় বলে (নিকাহ্)। বিবাহ হচ্ছে, ইসলামী নীতি অনুযায়ী যাদের সাথে বিবাহ বৈধ এমন একজন পুরুষ ও মহিলার মধ্যে নির্ধারিত শব্দের আদান-প্রদানের মাধ্যমে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে চুক্তি সম্পাদিত হয়, যার ফলে দু’জনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কায়েম হয়, যৌন সম্পর্ক বৈধ হয়, একজন আরেকজনের উপর সুনির্দিষ্ট অধিকার লাভ করে এবং একজনের জন্য অপর জনের উপর কিছু দায়-দায়িত্ব বর্তায়। অন্যভাবে বলা যেতে পারে যে, বিবাহ এমন চুক্তি যার মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে এমন সম্পর্ক গড়ে উঠে ও এমনি অনেক কাজ বৈধ হয় যা ইতিপূর্বে আদৌ বৈধ ছিল না ; বরং হারাম ছিল। কিন্তু এ বন্ধনের পর তাদের মধ্যে সেসব কাজ হালাল তো বটেই ; বরং এতে আরো সওয়াবের কথা ঘোষিত হয়েছে।
বিবাহ ইসলামী সভ্যতার একটি বিশেষ অংশ এ প্রথা হযরত আদম (আ.) হতেই চলে আসছে। জাহিলী যুগেও বিবাহ প্রথা চালু ছিল ও বিবাহ সম্পর্কে উন্নত ধারণা পোষণ করা হতো, যদিও রীতি-নীতির মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল। যেমন : বিবাহের জন্যে কনের মতামতের কোন প্রয়োজন হতো না, তার অভিভাবক খেয়াল-খুশীমত যেখানে ইচ্ছা বিবাহ দিত। তাছাড়া তালাকের ব্যাপারেও স্বামীর মতামতই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতো। সেখানে স্ত্রীদের কোন ভূমিকা ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা স্ত্রীরও মালিক হয়ে নানাবিধ অন্যায় অত্যাচার করতো এবং তাদের স্বাধীনতা ক্ষণœœ করতো। এক কথায় সেকালে মহিলাগণ পুরুষদের শুধু ভোগের পণ্যই নয় ; বরং তারা গৃহপালিত পশুর ন্যায় ব্যবহৃত হতো। সমাজে তাদের মূল্যায়ন হতো না, বরং কন্যাসন্তান কুলক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতো।
ইসলামের আগমন : হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নবুওয়ত প্রাপ্তির সাথে সাথেই সমাজে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হলো, সমাজে মেয়েদের এ শোচনীয় অবস্থার নিরসন ঘটলো, জাহিলী যুগের ইচ্ছামত বিবাহ ও তালাক প্রদানের নীতি সম্পূর্ণ বদলে গেল। মেয়েদের ইযযত বৃদ্ধি পেল। এতদিন যে মেয়েরা নির্যাতিত হতো, ইসলাম সেখানে ঘোষণা করল : মেয়েরাও তোমাদেরই মতো মানুষ, আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টিকারী।
আল্লাহ্ বলেনÑ আল্লাহ্র নির্দেশাবলীর মধ্যে একটি হলো তিনি তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা স্ত্রীদের কাছে শান্তিতে অবস্থান করতে পারো এবং তিনি তোমাদের (দাম্পত্য জীবনের) মধ্যে ভালোবাসা ও মমতা সৃষ্টি করেছেন।
(সূরা-রূম ঃ ২১)
তাই দেখা যায়, বিবাহের পরে স্বামী স্ত্রীকে ও স্ত্রী স্বামীকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসে, যার কারণে একে অপরকে ভালোবাসার দিক দিয়ে সবার উপরে প্রাধান্য দেয় এবং এরই কারণে সংসারে সুখ-শান্তি কায়েম হয়।
বিবাহ বা বিয়েই আসলে সংসার তথা পরিবারের গোড়া পত্তনের প্রথম বুনিয়াদ। বিয়ে দিয়েই রচিত হয় পরিবার। বিয়ের মাধ্যমেই মানবসমাজ নানাবিধ অপকর্ম হতে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। বিয়েই মানুষের পবিত্রতা হাসিলের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত পন্থা। বিয়ে করার ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলা কুরআন পাকে ঘোষণা করেছেনÑ মেয়েদের মধ্যে যাদেরকে তোমাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও, দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত।
বিবাহের উদ্দেশ্য : বিয়ে শুধু ভোগ-বিলাস ও যৌন তৃপ্তি অন্বেষণই মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয় ; বরং এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজকে পাপাচার ও ব্যভিচার হতে মুক্ত রাখা ও সন্তান উৎপাদন করা। এ ব্যাপারে আমরা রাসূল (সা.)-এর যুগের একটি ঘটনা স্মরণ করতে পারি।
মু’কাল ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেন : জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর দরবারে এসে আরয করেন : আমি রূপসী, বংশ মর্যাদাশীলা এক মহিলাকে ভালোবেসেছি, অথচ সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিবাহ করবো? হুযুর (সা.) বললেন : না। অতঃপর দ্বিতীয় বার আসলে তখনও নিষেধ করলেন। তৃতীয়বার আসলে তখন বললেন : তোমরা সন্তান জন্মদায়িনী, প্রেম-প্রীতির অধিকারিণী রমণীদেরকে বিবাহ কর। কারণ আমি (কিয়ামতের দিন) অন্যান্য উম্মতদের উপর তোমাদের সংখ্যাধিক্যের গৌরব করবো।
এ হাদীসে এ কথাই প্রমাণিত হলো যে, বিবাহের উদ্দেশ্য সন্তান উৎপাদন। আর শুধু ভোগ-বিলাসের জন্য বা নির্ধারিত সময়ের জন্য বিবাহ ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে বৈধ থাকলেও তা পরবর্তী যুগে চিরতরে হারাম করা হয়েছে।
বিবাহের নিয়ম-কানুন : বিবাহ সম্পাদনায় কতগুলো শর্ত আছে, যেগুলো পূরণ না করলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। সে শর্তগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলো :
১.বিবাহে কনের অভিভাবকের অনুমতি (নাবালেগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)। অভিভাবক না থাকলে শাসনকর্তার অনুমতিক্রমে বিবাহ সম্পাদন করতে হবে। (চলবে)



 

Show all comments
  • মোঃওমর ফারুক ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:৪০ এএম says : 0
    ইসলাম শিক্ষার সকল দিকেএগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের কি করা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ