Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩০ বছর বাদে ঘুম ভাঙল আধ মিমি’র টার্ডিগ্রেডের

প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক  : বেশ কয়েক বছর আগে সন্ধান পাওয়া গেলে হয়তো সুকুমার রায়ের ‘খিচুড়ি’তে এদের স্থান হতো। হাফ মিলিমিটারেরও ছোট প্রাণীটি। গঠন শুঁয়োপোকার মতো হলেও মুখের সঙ্গে জলহস্তির মিল রয়েছে। ১৯৮৩ সালে আন্টার্কটিকা যাওয়ার পথে ছোট্ট এই প্রাণী টার্ডিগ্রেডকে খুঁজে পেয়েছিলেন জাপানি গবেষকরা। তাদের বরফের বাক্সে ভরে নিয়ে এসেছিলেন জাপানে। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ল্যাবরেটরিতে প্রায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকার পর ২০১৪ সালে গবেষকদের শুশ্রƒষায় সেই ছোট্ট প্রাণীগুলির মধ্যে দু’টি ফের জেগে উঠেছে। শুধু তাই নয়, তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা ডিম ফুটে ছানা টার্ডিগ্রেডও জন্মলাভ করেছে। আর তার সঙ্গেই উন্মোচিত হয়েছে অনেক রহস্য। সম্প্রতি ‘ক্রায়োবায়োলজি’ জার্নালে সেই গবেষণার কথাই লেখা হয়েছে। সুন্ত দু’টি টার্ডিগ্রেডকে ‘স্লিপিং বিউটি ১ ও ২’ নাম দিয়েছিলেন গবেষকরা।
তবে, ‘ওয়াটার বেয়ার’ (পানির ভালুক) হিসেবেই এর পরিচিতি বেশি। ছোট্ট এই প্রাণীটির বিশেষত্ব, বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে। হিমালয়ের শীর্ষ শৃঙ্গ হোক বা আন্টার্কটিকার বরফ ঢাকা এলাকা, গভীর সমুদ্রতল বা ধুলোমাখা রাস্তা সর্বত্রই এদের অবাধ বিচরণ। ক্ষুদ্র এই প্রাণীটিকে ধ্বংস করাও সহজ নয়। না খাইয়ে রেখে, হাতে দলে, পুড়িয়ে, রেডিয়েশনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে  কোনও ভাবেই টার্ডিগ্রেডকে মারতে সক্ষম হননি বৈজ্ঞানিকরা। গবেষকরা বলছেন, ইচ্ছেমতো নিজেদের ‘ক্রিপটোবায়োসিস’ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে টার্ডিগ্রেড, আর সেটাই তাদের দীর্ঘআয়ুর মূল রহস্য। এদের ছোট্ট শরীরের চারপাশে সব সময়ই পানির একটা আস্তরণ প্রয়োজন হয়। খুব শুকনো আবহাওয়ায় এদের শরীর ৯৭ শতাংশ আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে, আর তখন এদের দেহের আকার ৪০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এই ‘ক্রিপটোবায়োটিক’ অবস্থায় প্রাণীটি যে কোনও পরিবেশেই বেঁচে থাকতে পারে। তাদের কোষ গরম, ঠা-া, তেজষ্ক্রিয়তা সবকিছুরই প্রতিরোধক হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় তারা প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে যথাযথ আর্দ্রতা পেলে টার্ডিগ্রেড ফের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। জাপানি গবেষকদের নিয়ে আসা টার্ডিগ্রেডদের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল। সব মিলিয়ে টার্ডিগ্রেডের আয়ু প্রায় ৩১ বছর। তবে জাপানি গবেষকদের নিয়ে আসা ‘স্লিপিং বিউটি ২’ পূর্বাবস্থায় ফেরার পরও দু’সপ্তাহের বেশি বাঁচেনি। তবে ‘স্লিপিং বিউটি ১’কে বেশ অনেক দিন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তার ১৪টি ডিম ফুটে শিশু টার্ডিগ্রেডও জন্মেছে। তাদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে টার্ডিগ্রেডের ডিএনএ ও কোষ বিভাজন রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। তবে, থেবড়া মুখের, আট পায়ের এই ছোট্ট প্রাণী নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের কাছে খুবই আদর পাচ্ছে। নিউ ইয়র্কের ‘আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচেরাল হিস্ট্রি’ তো ইতিমধ্যে টার্ডিগ্রেডের একটা ১০ ফুটের প্রতিকৃতিও বানিয়ে ফেলেছে। এক কথায় হাঁসজারুর মতোই এই হিপোপোকা এক্কেবারে হিট ! সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৩০ বছর বাদে ঘুম ভাঙল আধ মিমি’র টার্ডিগ্রেডের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ