Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিশোর অপরাধ দমনে পিতা-মাতার দায়িত্ব

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ ওসমান গনি : দেশে ক্রমাগত অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলছে। বড়দের পাশাপাশি এখন সমাজের কিশোর বয়সের ছেলেরাও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ জগতে। তাদের ধৈর্যশক্তি কম থাকার কারণে যেকোন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাধিয়ে বসে মারাত্মক ধরনের ঘটনা। এমনকি তারা একে অপরকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। ভিডিও গেমে গ্রæপ বানিয়ে মারামারি করছে। হারজিত নিয়ে উত্তেজিত হচ্ছে। টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়ালগুলো অপরাধের কৌশল দেখাচ্ছে- এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের কিশোররা বখে যাচ্ছে। তারাও তৈরি করছে গ্যাং বা গ্রæপ। মতের মিল না হলে খুন করে ফেলছে সহপাঠীকেই। যেটা আমাদের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। পারিবারিক সচেতনতা, ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকেও পড়াশোনা দরকার। না হলে সামনে যে প্রজন্মটা আসছে তাতে পারিবারিক বন্ধন বলে কিছুই থাকবে না। এখনই ভয়াবহভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে পারিবারিক বন্ধন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের প্রজন্মে শিশু বা কিশোররা খেলাধুলা করতে মাঠে গিয়ে মারামারি করত। সেখানেও যে খুন হতো না তা নয়। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোররা খেলার মাঠে যায় না। ঘরের মধ্যে বসে বা দোকানে গিয়ে ভিডিও গেম খেলে। কম্পিউটার বা নোটবুক নিয়ে সারাদিন ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে। ফলে তাদের মধ্যে সহনশীলতা একেবারেই কমে যাচ্ছে। অল্প বয়সেই তারা হিংস্র হয়ে উঠছে। কোনো ধরনের বিরোধিতাই তারা সহ্য করতে পারে না। এই শিশু-কিশোররাই গ্রæপ তৈরি করে আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। কেউ তাদের কাজে বিরোধিতা করলে তাকে তারা খুন করতেও দ্বিধাবোধ করছে না।
আমাদের দেশের কিশোররা সাধারণত তিনটি কারণে বখে যাচ্ছে। এক. পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। দুই. আকাশ সংস্কৃতি এবং তিন. মিডিয়ায় দেখানো নৃশংসতা। যেটা বাংলা সিনেমায় দেখানো হয়। হিন্দি সিরিয়ালেও এসব দৃশ্য দেখা হচ্ছে। চাওয়া পাওয়া থেকে কিশোরদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। চাওয়া-পাওয়ার মিল না হলে তারা যা ইচ্ছে তাই করছে। তাতে করে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা তৈরি হচ্ছে।
দেশে উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির ফাঁক-ফোকর রয়েছে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে অপরাধের ধরনও তত বদলাচ্ছে। আগে ছিল পরিকল্পিত, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও হবে। তবে তথ্য প্রযুক্তির কারণে তাদের নৈতিক স্খলন হচ্ছে। তারা প্রযুক্তি দেখে সেটার মধ্যে ঢুকে পড়ছে। আর উত্তরায় যে ঘটনা ঘটেছে তাতে দেখা যায়, এরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। মাদকাসক্ত। ফলে এদের মধ্যে নিষ্ঠুরতা বেশি। তারা যা ইচ্ছে, তাই করছে।
বর্তমানে কিশোর অপরাধের ধরন বদলে গেছে। এর মূল কারণ হিসেবে মনে হয়েছে, ভিডিও গেম, ইন্টারনেট এবং টিভি সিরিয়াল। আগের মতো এখন শিশুরা খেলার মাঠে যায় না। ঘরের মধ্যেই তারা ইন্টারনেটে বিশ্ব দেখছে। অপরাধের কৌশল দেখছে। এক ধরনের হিরোইজম তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকেই তারা অপরাধের দিকে যাচ্ছে। এর জন্য আরবান সংস্কৃতি বহুলাংশে দায়ী। এর জন্য এখনই প্রতিকারের ব্যবস্থা করা দরকার।’
কিশোরদের মধ্যে একটা অনুসরণ করার প্রবণতা থাকে। এই বয়সে তাদের মনে একটা অ্যাডভেঞ্চার কাজ করে। তারা যে কাজ করে আনন্দ পায় তা দ্রæত অনুসরণ করে। সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের জায়গাটা দুর্বল হয়ে গেলে তা কিশোরদের খুব দ্রæত অপরাধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই কিশোর বয়সে অপরাধ করলেও আইনে তাদের শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। তাদেরকে সংশোধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। অভিভাবকদের এখন সচেতন হতে হবে।
গত ৬ জানুয়ারি ঢাকার উত্তরায় কিশোর গ্রæপের হাতে প্রতিপক্ষ গ্রæপের স্কুল শিক্ষার্থী আদনান কবির খুনের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে কিশোরদের বিভিন্ন গ্রæপ বা গ্যাং কেন্দ্রিক অপরাধের ভয়ঙ্কর চিত্র। বিভিন্ন নামে এরা এই গ্রæপগুলো বানিয়েছে।
অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সন্ধ্যার পর কিশোররা কেন বাড়ির বাইরে থাকে-সেটির খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদের। অভিভাবকরা প্রয়োজন ছাড়া টাকা-পয়সা তাদের কিশোর সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে আরো বিপদগামী করছে। এক্ষেত্রে পারিবারিক বন্ধনটা আরো সুদৃঢ় করতে হবে। দেশের সকল অভিভাবকদেরকে তাদের সন্তানের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। তাদের চলাফেরায় সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি অভিভাবক যদি এখন থেকে তাদের ছেলেদের ব্যাপারে খবরদারি না করেন তাহলে হয়ত এক সময় এমন অবস্থা তৈরি হবে তখন হাজার চেষ্টা করেও অবাধ্য সন্তানদেরকে ভালোর পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তাই সকল অভিভাবককে সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। সন্তানের সাথে অভিভাবকদেকে বন্ধু’র মতো আচার-আচরণ করতে হবে। যদি সন্তানের সাথে পিতার বন্ধুসুলভ আচরণ করা যায় তাহলে এ সন্তান কিছুটা হলেও বিপথ থেকে দূরে থাকবে বলে আশা করা যায়।
ষ লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন