Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব

প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ২:৩৫ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

এহসান বিন মুজাহির : ভাষা মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ এক নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা অগণিত নিয়ামতরাজির মধ্যে ভাষা হলো অন্যতম একটি। ভাষা সম্পর্কে কুরআন কারিমে আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘দয়াময় আল্লাহ, শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। সৃজন করেছেন মানুষ। শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা’ (সূরা রহমান: ১-৪)।
কুরআনে অন্যত্র এইরশাদ হয়েছে, ‘তার আরও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণেও বৈচিত্র্য। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে’ (সূরা রুম: ২২)।
ভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার। আমরা বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলি, মনের ভাব ভাষায় ফুটিয়ে তুলি। মায়ের কাছ থেকেই প্রথম এই ভাষার সবক শিখি। তাই জগতে পদার্পণ করার পর থেকে মাতৃভাষার সঙ্গে আমাদের সখ্য গড়ে উঠে। আমাদের সকল চিন্তা-চেতনা, সকল আবেগ, প্রেম-ভালোবাসা, ক্রোধ-হিংসা-দ্বেষ, আগ্রহ-অনাগ্রহ এই ভাষায় সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মায়ের বুলি দ্বারাই আমরা আমাদের সুখ-দুঃখ, মায়া-মমতা ইত্যাদি মনের ভাব স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করি।
পৃথিবীতে আড়াই হাজারেরও বেশি ভাষা রয়েছে। তন্মধ্যে বাংলা সপ্তম। এ ভাষায় প্রায় পঁচিশ কোটি মানুষ কথা বলে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা অতি প্রাচীন ভাষা। আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষাও বাংলা। আমরা এ ভাষা নিয়ে গর্বিত-পরিতৃপ্ত। কোন জাতিকে সফল হতে হলে তার মাতৃভাষাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। যতদিন পর্যন্ত কোন জাতির মাতৃভাষা সাহিত্য তার স্বতন্ত্রের স্বাক্ষর হয়ে উঠতে না পারে, ততদিন পর্যন্ত সে জাতি পূর্ণ স্বাধীন হতে পারে না। মাতৃভাষার চেতনা যে কোনো জাতিকে উন্নতির সিঁড়িতে পৌঁছাতে পারে। আমাদের মাতৃভাষা যেহেতু বাংলা; তাই এ ব্যাপারে কারো উদাসীন থাকা বা অবহেলা প্রদর্শন করা কোনোভাবেই উচিত নয়। ইসলাম মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করেছে। ইসলামের প্রচার-প্রসার, ওয়াজ-নসিহত, কথা-বক্তৃতা লিখনীর ক্ষেত্রেও মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রত্যেক নবীই ছিলেন মাতৃভাষার পন্ডিত। তাদের ওপর অবতীর্ণ কিতাবগুলোও ছিল স্বজাতীয় ভাষায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে-যুগে অসংখ্য নবী-রাসূলকে আসমানী কিতাবসহ স্বজাতির ভাষায় পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। যেমন হযরত দাউদকে আ. তার নিজ ভাষা গ্রিকে জবুর কিতাব নাজিল করেছেন। হযরত মূসাকে আ. তাওরাত হিব্রæ ভাষায়, হযরত ঈসাকে আ. তাওরাত সুরিয়ানি ভাষায়। শেষনবী হযরত মুহাম্মদের সা. ওপর পবিত্র কোরআনে কারিম নাজিল করেছেন আরবের ভাষা আরবিতে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রত্যেক নবীকে আ. তাদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি তাদের সম্প্রদায়ের কাছে, যাতে তারা জাতিকে সুস্পষ্ট ভাষায় বুঝাতে সক্ষম হয়’ (সূরা মারইয়াম: ৯৭)।
ইসলাম প্রচার-প্রসার, দ্বীন ও জাতির খেদমতের অন্যতম একটি মাধ্যম হলো মাতৃভাষা। দাওয়াতে দ্বীনের অন্যতম কৌশলও হলো বোধগম্য ভাষায় দাওয়াত উপস্থাপন করা। একজন মানুষের বড় গুণ হলো, তার মাতৃভাষায় যথার্থ পারদর্শিতা অর্জন করা। শুধু বছরে একবার শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত ও দোয়ার পরিবর্তে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন এবং মাতৃভাষা দিবস এলেই ভাষাদিবসের আলোচনাসভা, বইমেলা ও আনুষ্ঠানিকতায় মহান মাতৃভাষাকে সীমাবদ্ধ করে রাখা ঠিক নয়। বরং প্রতিক্ষণ, সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা নৈতিক দায়িত্ব।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মাতৃভাষায় অনেক গুরুত্ব রয়েছে। কুরআন-হাদীস তথা ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। সে হিসেবে প্রত্যেক বাঙালি মুসলমান, বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের কর্তব্য হলো, মাতৃভাষা চর্চায় মনোযোগী হওয়া।
- লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল, দারুল আজহার ইনস্টিটিউট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবজার



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন