পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দিন দিন তৃণমূল আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব-বিভেদ-কলহ বাড়ছে। মনোনয়ন ঘিরে ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব-কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ের এই চিত্র সামনে আরও ভয়াবহ রূপ পেতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন। যদিও এই নির্বাচনের মধ্যদিয়েই স্থবির হয়ে পড়া তৃণমূলের রাজনীতি চাঙ্গা করার পরিকল্পনা ছিল ক্ষমতাসীন সরকারি দলটির। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশজুড়ে নির্বাচনী উৎসবও শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আওয়ামী লীগ-তৃণমূলের রাজনীতি চাঙ্গা করতে পারেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে বিভেদ-বিরোধ, দ্বন্দ্ব ও কলহ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি নানা অভিযোগ ও ক্ষোভ বেড়েছে দলের তৃণমূলের। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহল ও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলের এমন তথ্য পাওয়া যায়।
শুধু তাই নয়, কেন্দ্র থেকে যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, হচ্ছে; অনেক জায়গায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ সেই প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যানও করছে। এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আওয়ামী লীগে চরম অসন্তোষ কাজ করছে। এ কারণে এবারের ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সম্ভাবনাও বেশি রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
এদিকে গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টায় সীতাকুন্ডে দিনব্যাপী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মধ্য দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় ৬ জন গুলিবিদ্ধসহ ১২ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। এ দলে নেতাকর্মী ও নিবেদিত সৈনিক বেশি। এখানে সবার চাওয়া রক্ষা করা সম্ভব হয় না। ফলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়। আবার ঠিকও হয়ে যায়।
এদিকে, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের দু’টি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানসহ অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছেন। জানা যায়, গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আশাশুনি উপজেলার মহিষকুড় এলাকায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ধারালো দা ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করা হয়। তবে পুলিশের দাবি, সংঘর্ষ কিলঘুষির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কারও বাড়িঘরে কোনো হামলা বা ভাঙচুর করা হয়নি।
শ্রীউলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সরদার জানান, তৃণমূল পর্যায় থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই করার সময় তিনি ৬৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৫৫ জনের ভোট পেয়ে একক প্রার্থী ঘোষিত হন। সে অনুযায়ী তার নাম উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জেলাপর্যায়ে পাঠান। তবে জেলা থেকে তার নাম এক নম্বরে এবং বর্তমান চেয়ারম্যান শাকিলের নাম দুই নম্বরে লিখে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তবে কেন্দ্র তাদের মধ্য থেকে আবু হেনা শাকিলকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলে এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
নূর মোহাম্মদ আরও জানান, শনিবার সকালে দলের কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে তিনি তিন-চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকার মাড়িয়ালায় যান। সেখান থেকে ফেরার সময় মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু হেনা শাকিল ও তার ছেলে সাদ তার ওপর হামলা করেন। তারা নূর মোহাম্মদকে ধারালো দা দিয়ে কোপাতে শুরু করলে সমর্থকরা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এ সময় সমর্থকদের ওপরও হামলা করা হয় বলে দাবি করেন নূর মোহাম্মদ।
দলের মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু হেনা শাকিল বলেন, নূর মোহাম্মদ মাড়িয়ালা গ্রামে এসে বলেন যে, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিপক্ষে লড়বেন। তিনি নৌকায় ভোট না দেয়ার জন্য নানা রকম উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেন। তিনি দাবি করেন, নূর মোহাম্মদ সরদারের লোকজনই তার ওপর প্রথমে হামলা চালায়। এতে তার পক্ষের ১৮ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে দলটির একজন সভাপতিম-লীর সদস্য বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এতে তৃণমূলের ভেতরে একটি বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। নির্বাচনের আগে তৃণমূলের ভেতরের ক্ষোভ দূর করতে হবে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহলের একাধিক নেতা মনে করেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ও তৃণমূলের রাজনীতিতে বিভেদের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভেতরে বিরাজমান স্থবিরতা কাটিয়ে তোলার যে পরিকল্পনা ছিল তার চেয়ে বেশি কলহ সৃষ্টি হয়েছে।
দলের তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল যাকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করে, ভোট দিয়ে সমর্থন জানিয়েছে কেন্দ্র থেকে বাছাইয়ে সেই প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে কেন্দ্র থেকে যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তৃণমূল আওয়ামী লীগ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আওয়ামী লীগে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন- প্রার্থী বাছাই করার ক্ষমতা তৃণমূলের কাছে দেয়া আসলে লোক দেখানো। প্রকৃতপক্ষে সব কিছু হয়েছে কেন্দ্র থেকে। তারা জানান, এবারও অধিকাংশ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ যাকে সমর্থন জানিয়েছে কেন্দ্র তাকে চূড়ান্ত না করে সুযোগ খুঁজে তাদের নিজের লোককেই সমর্থন দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী জেলার দায়িত্বশীল একজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে নাম পাঠান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক আবদুল মান্নানের। তিনি সর্বাধিক ভোটও পেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রে এসে তার নাম বাদ পড়ে যায়। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সমর্থন পান বর্তমান চেয়ারম্যান মনির আহমেদ। অথচ তাকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ চাননি।
মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগ আমাকে এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে আমাকে বাদ দিয়ে মনির আহমেদকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করে। তিনি বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতা তৃণমূলকে দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতেই। এটা দুঃখজনক।
কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী ছাড়া অন্য যে কাউকে প্রার্থী করার প্রস্তাব করেন স্থানীয় নেতারা। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এনামুল হককেই মনোনয়ন দেয়া হয়। এ ক্ষোভে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নে তৃণমূলের প্রস্তাব ছিল তারেক বিন উসমান শরীফকে প্রার্থী করার। দেয়া হয়েছে তারেকের বাবার হত্যা মামলার আসামি সেলিম চৌধুরীকে। সে কারণে মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারেক।
পটুয়াখালীর বাউফলে ১১টি ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। পটুয়াখালী জেলার দায়িত্বশীল কয়েক নেতা বলেন, ১১ টি ইউনিয়নে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, সবাই জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের লোক বলে পরিচিত। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জিয়াউল হকসহ স্থানীয় একটি পক্ষ ১১টি ইউনিয়নেরই আলাদা প্রার্থী তালিকা পাঠায় কেন্দ্রে। কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ফিরোজের লোকদেরই মনোনয়ন দেয়।
এদিকে, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি। অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান পদে টাকার বিনিময়ে মনোনয়নের জন্য নাম পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন নিয়মের বাইরে গিয়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে মনোনয়নের জন্য নাম পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়।
সিদ্ধান্ত বাতিল ও প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোনয়নের দাবিতে গত মঙ্গলবার দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনও করেছে। এই উপজেলার ১২ ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় আগামী ৩১ মার্চ নির্বাচন হবে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরের মেডিকেল মোড়ে মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এতে ওই ইউনিয়নের নেতাকর্মী ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাও উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে কয়েকশ নারী ও পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আওয়ামী লীগের উপজেলা কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
১৯ বছর ধরে টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে আতিয়ার রহমান আতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ষড়যন্ত্র করে হারিয়ে দেয়া হয়। আর এবার আমাকে বাদ দিয়ে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী এবং যুদ্ধাপরাধীর ছেলে সেলিম হোসেনকে মনোনয়ন দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যা হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে।’
মানববন্ধনে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মেহেদী আপন বলেন, ‘জনমত জরিপ ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অমান্য করে শুধু টাকার বিনিময়ে আতিয়ার রহমানকে বঞ্চিত করে সেলিমকে মনোনয়ন দিতে ঢাকায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
মানববন্ধনে অংশ নেয়া পূর্ব বাড়াইপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলী মাস্টারের ছেলে রুস্তম আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেলিমের বাবা স্থানীয় কয়েকজনসহ আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে আসার পর বাবার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
একইদিন আলাদা মানববন্ধন ও সমাবেশে উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল গফুর ও সাধারণ সম্পাদক সাহেবুর রহমান অভিযোগ করেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে দলের একটি কুচক্রী মহল আওয়ামী লীগে সদ্য যোগদানকারী হাশেম আলী নামের একজনকে মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
সূত্র জানায়, মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব-কোন্দল দেখা দেয়ায় দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে সজল মুখার্জী এবং দক্ষিণ শ্রীপুরে গোবিন্দ মন্ডল তৃণমূল আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রে এসে তৃণমূলের সমর্থন পাওয়া সজল মুখার্জী ও গোবিন্দ মন্ডল মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। সজল মুখার্জী বলেন, তৃণমূলের সমর্থন পাওয়া অনেক নেতাকে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। অথচ প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তৃণমূলের বাছাইকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তৃণমূল বাছাই করে পাঠালেও কেন্দ্রীয় নেতারা অজানা কারণে প্রার্থী পরিবর্তন করে ফেলেছেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে এএম রফিকুল্লাহ (আ’লীগ) মনোনয়ন পেলেও সেখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হাশেম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলার চাকলা ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ফারুক হোসেন দলের (আ‘লীগ) মনোনয়ন পেলেও সরোয়ার হোসেন বিদ্রোহী) প্রার্র্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
একই চিত্র উপজেলার মাসুমদিয়া ইউনিয়নে। এখানে মিরোজ হোসেন (আ‘লীগ) দলের মনোনয়ন পেলেও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে নেতা শহিদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। হাটুরিয়া নাকালিয়ার চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান (আ‘লীগ)। তবে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আবদুর রহিম। রূপপুরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উজ্জ্বল হোসেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু মোল্লা এখানে বিদ্রোহী) প্রার্থী। উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আমজাদ হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও এখানেও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন আবু দাউদ। এছাড়া জাতসাখিনী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে রেজাউল হক বাবু আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেয়েছেন। কিন্তু দলের আরেক নেতা মিজানুর রহমান রানা হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী।
অপরদিকে, ইউপি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) শ্রমিক লীগের সভাপতি সামচুল আলম বকুল ও তাদের আরেক ছোট ভাই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাইদুর রহমান বাবুলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। গত রবিবার স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে তাদের প্রতিহতেরও ঘোষণা দেন।
স্থানীয় নেতারা জানান, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজের ছোট ভাই সাইদুর রহমান বাবুলসহ তিনজন দলীয় মনোনয়ন চান। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান চৌধুরী সুলতান মাহমুদ। এরপর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বাবুল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত রাখায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে তিনজনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর মাদবরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন খান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলু মুন্সী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতি হাওলাদার, উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মিন্টু হাওলাদার প্রমুখ।
ইউপি নির্বাচনে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় গত বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে ছাত্রলীগ। চরদুয়ানী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রহমান জুয়েলকে মনোনয়ন না দেয়ায় এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। হরতাল সমর্থনে পাথরঘাটা পৌর শহরে মিছিল ও সমাবেশ ছাড়াও হরতাল সমর্থকরা পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।