পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাক দৃষ্টিতে কবরের দিকে তাকিয়ে আছে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত এক শিশু। পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছে তার দাদী। কিন্তু কাঁদছে না সে। দাদির কান্নার দিকেও যেন নেই ভ্রুক্ষেপ। সমস্ত মনোযোগ কবরের দিকে। অবুঝ এ শিশুটির নাম ফারজিন রহমান সামি। দু’বছর বয়সেই হারান মা’কে। বাবাই তাকে লালন পালন করছিলেন। নিজের তিন বছর বয়স পূর্ণ হতে না হতেই পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে চিরতরে চলে গেলেন সেই বাবা মেজর মো. মিজানুর রহমান। পিতার স্মৃতি স্মরণে নেই সামির। অথচ সেই বাবার জন্য দোয়া করতে দাদীর সাথে গতকাল কবর জিয়ারত করতে এসেছিলো নিষ্পাপ সামি। পিলখানা ট্রাজেডির ৭ বছর পরও শহীদ পরিবারের সদস্যদের মুখে শোকের ছায়া। শোকাচ্ছন্ন এই দিনটি যেন তাদের কাছে চির বেদনার।
পিলখানার নারকীয় হত্যাকা-ে স্বজন হারানোর কষ্ট বয়ে চলা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা গতকাল ফুল দিতে এসেছিলেন বনানী সামরিক কবরস্থানে। শহীদ ওইসব সেনা কর্মকর্তার কবরে ফুল দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের প্রিয়জনরা। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা এসব শহীদ পরিবারের কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ পিতা, কেউ বা ভাইকে। ফুল দিতে আসা স্বজনদের কেউ কেউ ছিলেন একেবারেই নির্বাক। কথা বলতে গেলেও তার মুখ দিয়ে বেরোয়নি একটিও শব্দও।
পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহত মেজর মোঃ মিজানুর রহমানের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন তার বৃদ্ধ মা। পাশে থাকা শিশুটি নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রেলিংয়ের ওপারে থাকা কবরের দিকে। পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা শিশুটি কাঁদছে না। দাদীর কান্নার দিকেও যেন তার খেয়াল নেই। তার সমস্ত মনোযোগ কবরের দিকে। বাবা কি, তা বোঝার আগেই ফারজিন রহমান সামির বাবা মিজানুর রহমান চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। তারও আট মাস আগে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন মা। শোক আর স্মৃতিকাতর মিজানুর রহমানের মা কুহিনূর বেগমের কান্না থামছিলই না। কান্নার ফাঁকে ফাঁকে অস্ফুটে শুধু বলছিলেন ‘বলে গেল আসবে, আর আসল না’। কান্নার তীব্রতায় তার নুয়ে যাওয়া শরীর কেঁপে উঠছিল ক্ষণে ক্ষণে। পিলখানা বিদ্রোহে নিহত অন্যান্য সেনাসদস্যের পরিবারও শোকে, শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন না-ফেরার দেশে চলে যাওয়া প্রিয়জনদের। এ সময় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কেউ মোনাজাতের সময় কাঁদছিলেন, কেউবা দাঁড়িয়ে ছিলেন শোকে পাথর হয়ে।
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন শহীদ মেজর মমিনুল ইসলাম সরকারের বাবা ও বোন। মেয়েদের নিয়ে ছেলের কবর জিয়ারত করতে এসেছেন বাবা মফিজুল ইসলাম সরকার। ছেলের মেধা, বুদ্ধি ও চাকরির সফলতা তাকে গর্বিত করেছিল। অক্সফোর্ড ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলায় সেনাবাহিনীতে তিনি ডিকশনারি মমিনুল নামে পরিচিত ছিলেন বলে জানান এই বাবা। বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ধারণা বিচারে তাদের ফাঁসি হবে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিচার আমার কাছে মূল বিষয় না। আমার প্রশ্ন হলো, এটা কার উসকানিতে, কে বলল এই হত্যাকা- ঘটাতে? আমি তা জানতে চাই। ছেলে হত্যার বিচার পাবো, এটা আমার আশা।
শহীদ মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের মা রাজিয়া জামান ও বড়বোন হোসনে আরা পারভীন। গতকাল কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মা-বোনের কান্নায় সেখানের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় বোন পারভিন বলেন, ‘আমার ভাইটা মিশনে ছিল। মিশন থেকে ফিরে বিডিআরের খাগড়াছড়িতে পোস্টিং পায়। ঘটনার আগের দিন তাকে মেইল করে বিডিআরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার সঙ্গে কথা হয়। এরপর ঘটনার দিন মা ফোন করে জানায় পিলখানায় ঝামেলা হয়েছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে ভাইয়ের মোবাইলে ফোন বন্ধ পাই। ২৭ ফেব্রুয়ারি গণকবর থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। তিনি বলেন, ‘কবে বিচার পাবো তা জানি না। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা দরকার।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর-এর (বর্তমানে বিজিবি-বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) বিপথগামী সদস্যরা পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই দু’দিনে তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।