বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মুহাম্মদ রেজাউর রহমান : গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ অবসরপ্রাপ্ত সচিব(?) কে এম নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে মিশ্র। অথচ লক্ষ্য ছিল এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা- যা হবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য। তা না হওয়ায় বিএনপি ছাড়া নাগরিক সমাজের কাছেও নতুন নির্বাচন কমিশন শতভাগ গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার কথা জানা যায়। চাকরি জীবনে যুগ্ম-সচিব থাকাকালীন বিএনপি সরকারের দ্বিতীয় আমলে ২০০১ সালে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে ২০০৯ সালে তিনি সচিব পদমর্যাদাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছিলেন। ৭ ফেব্রæয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি অতীত ভুলে যেতে চাই- নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চাই।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া প্রেসিডেন্ট অন্য যে চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তারা হচ্ছেনÑ সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও প্রতিষ্ঠিত লেখক মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রকল্পের পরিচালক সাবেক সেনা কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী এবং রাজশাহীর অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম। মনোনীত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের নাম ছিল বিএনপির তালিকায় আর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানমের নাম ছিল আওয়ামী লীগের তালিকায়। এই প্রথমবারের মতো বিএনপির প্রস্তাবিত পাঁচটি নাম থেকে অন্তত একটি নাম গ্রহণ করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পাঁচটি নাম থেকে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানমকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে এই সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলো।
বিএনপি, জাসদ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টির তুলনায় তরীকত ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি অনেক ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল। অথচ তাদের প্রস্তাবিত তালিকায় ছিল নব গঠিত নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজনেরই নাম। তরীকত ফেডারেশন প্রস্তাবিত পাঁচজনের তালিকার তিনজন ও গণতন্ত্রী পার্টির পাঁচজনের তালিকা থেকে দুজনের ঠাঁই হয়েছে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটভুক্ত অন্যান্য দলের তালিকায়ও একই নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও ছোট ২/৩টি দলের প্রস্তাব প্রাধান্য পাওয়া এবং যে রকম দ্রæততার সাথে কমিশন গঠন চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এমন কি অনুসন্ধান কমিটির অন্যতম সদস্য পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাদের প্রত্যাশা হচ্ছে নব গঠিত নির্বাচন কমিশনকে তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গত ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ছয় সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিলেন। অসুন্ধান কমিটির অন্য সদস্যেরা ছিলেনÑ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরিন আখতার।
গঠনের পরে অনুসন্ধান কমিটি ছয়টি বৈঠকে মিলিত হয়। দুই দফায় অনুসন্ধান কমিটি ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সাথে পরামর্শ সভায় মিলিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে পাওয়া ১২৫ জনের নাম থেকে অনুসন্ধান কমিটি ১০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে। তালিকা চ‚ড়ান্ত করা ও প্রেসিডেন্টের কাছে তা হস্তান্তর করার পর যে দ্রুততার সাথে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়Ñ তাতেও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। পত্রিকান্তরের খবরে প্রকাশ ৬ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হওয়া অনুসন্ধান কমিটির সভায় ১০ জনের তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের কাছে তালিকা জমা দেয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে কমিশন গঠনের কথা জানানোর পরে রাত সাড়ে ১০টায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ২০১২ সালে তৎকালীন সার্চ কমিটি তাদের দ্বারা প্রণীত তালিকা জমা দেয়ার চব্বিশ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে বিদায়ী কাজী রকীবউদ্দিন কমিশনের নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের এই পুরো প্রক্রিয়া লোক-দেখানো ছিল কিনা সে প্রশ্ন তোলার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেভাবে দ্রুততার সাথে সবকিছু করা হলো, সেটিও স্বাভাবিক ছিল না।’ আসলে, রাজনীতিতে লোকদেখানো নীতির এ চর্চাটা বন্ধ করতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলীয় সরকারি জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করেই কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটি তাদের দ্বারা প্রস্তুত চূড়ান্ত তালিকায় ১০ জনের নাম বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে প্রকাশ করে যায়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রেসিডেন্টের কাছে তালিকা জমা দেয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। তাহলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কীভাবে সদ্য নিযুক্ত কমিশনারদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অবহিত হলেন! অনুসন্ধান কমিটি যে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে ছিলেন তাদের মধ্যে নাগরিক সমাজের তিনজন যোগ্য প্রার্থীর নাম ছিল। এই প্রথম একজন নারী কমিশনারের সাথে নাগরিক সমাজেরও অন্তত একজন প্রতিনিধিকে কমিশনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নিলে তাতে নির্বাচন কমিশন অধিকতর প্রতিনিধিত্বমূলক হতো। এ সম্পর্কে অনুসন্ধান কমিটির অন্যতম সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নাগরিক সমাজের কাউকে না রাখায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
কমিশন গঠন করার একদিন পরে বিএনপি তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলে যে, কোনো অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ সচিব ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এ ঘটনা অভূতপূর্ব। এখানে উল্লেখ্য, নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সরকারের যুগ্ম সচিব থাকাকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে যান। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে আপিল করে ২০০৯ সালে তিনি যেসব পদোন্নতির জন্য যোগ্য ছিলেন সেসব অর্থাৎ অতিরিক্ত এবং সচিব পদমর্যাদা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ নিজের পক্ষে রায় নিয়ে পুনরায় সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেও প্রত্যক্ষভাবে অতিরিক্ত সচিব বা সচিব হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার নেই। তাই বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে অনভিজ্ঞ ও বিতর্কিত বলে উল্লেখ করা হয়। নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ছাত্রজীবনও অবসর জীবনে আওয়ামী লীগের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার কথা নিজেও স্বীকার করেছেন।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর পর তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি বলেছেন, আমি অতীত ভুলে যেতে চাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চাই। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কী করবে, তা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। কোনো দলের ওপরই আমার কোনো মান অভিমান বা ক্ষোভ নেই। তার বক্তব্য খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। কার্যক্ষেত্রে তিনি কতটুকু সফল হবেন, সেটা নির্ভর করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওপরই। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব যেভাবে স্বচ্ছ নির্বাচনের কথা বলেন নির্বাচনের সময়ে তা তাদের মনে নাও থাকতে পারে। কারণ ধারাবাহিক উন্নয়নের স্বার্থে তারা আরো দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছার কথা বলে আসছেন। ২০২৯ সালের নির্বাচনে তারা বিরোধী দলে পরিণত হলে তাদের খুব বেশি আপত্তি নেই- তাদের বক্তব্যে এ কথাই সকলের মনে হয়। তাই নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্ভয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার নিশ্চয়তা এর আগে খুব বেশি থাকার কথা নয়। বিদায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে যাওয়ার ফলে কে এম নুরুল হুদা কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে পর্বত প্রমাণ। কাজী রকীবউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বিদায়ী কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল দৃষ্টান্ত অপসারিত করে নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীদের শত শত আপত্তির প্রতি চোখ-কান বন্ধ রাখার পরিণতিতে কমিশনার সকলকে নিয়ে উচ্চ আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছে দেশের ইতিহাসে তা এরকম একমাত্র ঘটনা।
তাই অনুসন্ধান কমিটির প্রতি ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের আহŸান ছিল এই যে, তারা যেন সুস্পষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে কমিশন প্রধান ও অন্য কমিশনারদের নামের সুপারিশ করেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এ সম্পর্কে বলেছেন, বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে অনুসন্ধান কমিটির যে মতবিনিময় হয়েছিল তাতে তাদের সুপারিশ ছিল নির্বাচন কমিশন গঠনের মতো জাতীয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণকে আস্থায় নিয়ে কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিশন প্রধান ও অন্য কমিশনারদের নেয়া হলো তা প্রকাশ করা এবং স্বচ্ছতার চর্চার দ্বারা গোপনীয়তার ব্যবস্থা পরিহার করা। এসব পরামর্শের কোনোটাকেই আমল দেয়া হয়নি। বিএনপির পক্ষে মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘সকল মহলেরই দাবি ছিল অনুসন্ধান কমিটির চূড়ান্ত বাছাই করা ১০টি নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে এবং তাদের জীবনবৃত্তান্ত ও কর্ম অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হবে। এগুলো অনুসরণ করা হলে প্রক্রিয়াটি কিছুটা স্বচ্ছতা পেত। কিন্তু তা করা হয়নি।’ তিনি আরো বলেন যে, ‘শেষ মুহূর্তে রুদ্ধশ্বাস দ্রুততার সাথে কমিশন গঠন করার ঘোষণা অনেক সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, কেবল দুটি বিষয় যথা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্যসব বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য। তাই সঙ্গত কারণেই ধরে নেয়া যেতে পারে যে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে।’
এ কথা ঠিক যে, প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক দলসমূহ, নাগরিক সমাজ ও কূটনৈতিক মহলে তা প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পরে অন্তত বিএনপি এ সম্বন্ধে পরোপুরি সন্দিহান হয়ে পড়েছে। কিন্তু কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন বর্জনের কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। নব গঠিত নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর। এই সময়ের মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে বা কারো মৃত্যু না হলে নির্বাচন কমিশনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। যদি নির্বাচন কমিশনের গৃহীত ব্যবস্থা উচ্ছৃঙ্খল দলীয় কর্মী-সমর্থকদের দ্বারা বানচাল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে কারচুপি হবে। ২০২৯ সাল পর্যন্ত একটানা ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছার কথা ঘোষণা শুধু ঘোষণা না থেকে তখন বাস্তবে রূপ নেবে। অন্তত আগামী সাধারণ নির্বাচনে যে কোনো কৌশলে জয়ী হওয়া যে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সে সম্বন্ধে সুধী সমাজের কোনো সন্দেহ নেই। জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবের ১১ ফেব্রæয়ারি সংখ্যার উপ-সম্পাদকীয় ‘নির্বাচন কমিশন : আওয়ামী লীগের আস্থা, বিএনপির সন্দেহ সংশয়’ শীর্ষক নিবন্ধে মুনশী আবদুল মান্নান লিখেছেন, “আওয়ামী লীগের লক্ষ্য আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন। শুধু নির্বাচনই লক্ষ্য নয়, নির্বাচনের জিতে আরো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করা। এ জন্য তাদের পছন্দ মতো একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা ছিল খুবই দরকার। সম্ভবত সে উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়েছে।”
দায়িত্ব নেয়ার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য কিছু পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরি হয়ে রয়েছে। জানা যায় যে, আগামী ৬ মার্চ অর্থাৎ শপথ নেয়ার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে তিনটিতে চেয়ারম্যানসহ সব পদে এবং ১৫টি উপজেলার কোনোটিতে চেয়ারম্যান পদে, কোনোটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। মামলা, প্রার্থীর মৃত্যুসহ বিবিধ কারণে এসব উপজেলায় নির্বাচন হয়নি। বিএনপি এসব উপজেলায় যেসব পদে নির্বাচন হচ্ছে তাতে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে সংসদীয় আসনে যে উপনির্বাচন হবে তাতে তারা অংশগ্রহণ করবে না।
একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কে এম নুরুল হুদা কমিশন অবশ্যই জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নেবেন। আজ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশনই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। সাংবিধানিক পদে ক্ষমতায় থাকার মোহ তাদেরকে পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপনেও বিরত রেখেছে। কাজেই উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ দুশ্চিন্তা নিয়ে দিন কাটাবেন অনুসন্ধানের সুড়ঙ্গ শেষে খুঁজে পাওয়া নব নিযুক্ত নির্বাচন কমিশন তাদের পাঁচটি মেরুদন্ড সোজা রেখে মেয়াদ উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হবেন কিনা!
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।