Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১। তালুকদার মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ ছাফওয়ান, খেজুরবাগ, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : পরকালের পাথেয় বলতে কি বোঝায়?
জবাব : দয়াল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন, এই দুনিয়াই হচ্ছে পরকালের অনন্ত জীবনের কৃষিক্ষেত্র। এই হাদিসটি বিরাট অর্থবহ। ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবন খারাপকাজ রং-তামাসা, আমোদ-প্রমোদ বা ভোগবিলাসে অতিবাহিত না করে আল্লাহর বন্দেগী এবং তাঁর নির্দেশিত কাজ করে যেতে হবে নিরলসভাবে। পার্থিব জীবনের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে সকল প্রকার কাজের ঘটে চীর অবসান। হাশরের দিন প্রত্যেককেই তার আমলনামার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। যার আমলনামা সন্তোষজনক হবে, আল্লাহপাক তার প্রতি সদয় হবেন, আর যার আমলনামায় অবাঞ্চিত অর্থাৎ পাপকাজে ভারাক্রান্ত হবে, তাকে ভোগ করতে হবে দোজখের দুর্বিষহ যাতনা, সেদিন আল্লাহতায়ালাকে প্রভাবিক করার বা ফাঁকি দেয়ার সাধ্য কারো হবে না। সেদিন প্রত্যেকের হাতে আমলনামা দিয়ে বলা হবে, তোমারা আমলনামা পাঠ কর; আজ তোমার হিসাব গ্রহণকারীরূপে তুমি নিজেই যথেষ্ট। (সূরা-বনী ইসরাঈল, আয়াত-১৪, পারা-১৫) উল্লেখ্য যে, বেহেস্তের ভাষা হবে আরবি এবং এই ভাষায়ই হাশরের দিন প্রত্যেকের পাপ-পুণ্যের হিসাব উপস্থাপিত করা হবে। যে যে ভাষাভাষীই হোক না কেন, আল্লাহর অপার ক্ষমতা বলে সে অনায়াসেই আরবিতে লিপিবদ্ধ আমলনামা পড়তে ও বুঝতে পারবে। আরবি জানি না বা বুঝি না বলে সে দিন কারো পক্ষে কোনো ওজর-আপত্তি চলবে না। অতএব পার্থিব জীবনটাকে হেলায় খেলায়, আমোদ-প্রমোদে বা উল্লাসে না কাটিয়ে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে মনোনিবেশ করাই বুদ্ধিদীপ্ত ছেলেমেয়েদের একান্ত বাঞ্চনীয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে ধনসম্পদ বেশি হলে অপব্যয়ের প্রবণতা দেখা দেয়। তাতে পরকালেই শুধু নয়, ইহকালেও ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হওয়া অপ্রত্যাশিত নয়। সকলের সতর্কতার জন্য বলা হয়েছে- “অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই; আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অত্যধিক অকৃতজ্ঞ। (সূরা-বনী ইসরাইল, আয়াত-২৭, পারা-১৫)  পক্ষান্তরে যদি কেউ অপব্যয় না করে অতিরিক্তি ধনসম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখে, আল্লাহপাকের নির্দেশিত পথে ব্যয় বা ব্যবহার করতে কার্পন্য করে তবে তাও তাকে জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, “জাহান্নামে সে ব্যক্তিকে আহ্বান করা হবে যে ব্যক্তি সত্যকে প্রত্যাখান করে মুখ ফিরিয়ে নিবে; আর ধনসম্পদ (ধর্মীয় বিধান অনুযাযী ব্যয়-না করে) পুঞ্জীভূত করবে। (সূরা মা”আরেজ, আয়াত-১৭, ১৮, পারা ২৯) সুদ, ঘুষ, জুলুম-জালিয়াতি, মিথ্যাচার, প্রতারণা-বঞ্চনা, চুরি-ডাকাতি, লুটতরাজ, মদ ও মাদক দ্রব্যাদির ব্যবসা, অতি মুনাফা জুয়াও ফাঁকিবাজির ব্যবসা, অপসংস্কৃতিমূলক ব্যবসা, ব্যভিচারমূলক কাজ ইত্যাদি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এসব বা এর কোনটির মাধ্যমে অজিত জীবিকা ভোগের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে নবী করিম (দঃ) দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, “হারাম (পথে অর্জিত) জীবিকা ভোগ করে শরীরে যে রক্ত-মাংস, অস্থি- মজ্জা গঠিত হয়, তা নিয়ে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি বলেছেন, কেউ যদি দশ দেরহাম দিয়ে একটি জামা কিনে, আর তারমধ্যে এক দেরহাম যদি হারাম থাকে, তবে ঐ জামা পড়ে যতদিন সে নামাজ পড়বে ততদিন তার নামাজ ও দোয়া কবুল হবে না। তিনি আরো বলেছেন যে আল্লাহপাক কোন অপবিত্র জিনিস গ্রহণ করেন না। সেই যদি হারাম পথে অর্জিত ধনসস্পদ দান-খয়রাত করে, তবে তাতে সে কোন সওয়াব অর্থাৎ সুফল লাভ করতে পারবে না। সকল প্রকার এবাদত বন্দেগীর মধ্যে “সালাত” অর্থাৎ নামাজই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। হাশরের দিন সর্বপ্রথমে নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। নামাজ হচ্ছে ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নামাজ না পড়া বা পরিত্যাগ করা ঈমান ও মুসলমানিত্ব হানিরই নামান্তর। প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন, নামাজ ইসলাম ধর্মের স্তম্ভ সরূপ, যে উত্তম রূপে নামাজ আদায় করে, সে দ্বীনকে কায়েম রাখে, আর যে তা পরিত্যাগ করে সে দ্বীনকে বরবাদ করে দেয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর’ যাকাত দাও এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য কর, যেন তোমরা তাঁর (আল্লাহর) অনুগ্রহ ভাজন হতে পার। (সূরা-নূর : আয়াত-৫৬, পারা-১৮)   পরম করুনাময় আল্লাহ এরশাদ করেন, “সেজদা দাও এবং আমার নিকটবর্তী হও’’ (সূরা আলাক্ক, আয়াত-১৯, পারা-৩০) মহানবী (দঃ) এরশাদ করেন, নামাজ বেহেস্তের চাবি, যখন কেউ একাগ্রচিত্তে নামাজে দাঁড়ায়, তখন তাঁর জন্য বেহেস্তের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নামাজের সময় আল্লাহতায়ালা এবং নামাজির মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,- ঐসব নামাজিকে চরম দুর্দশাগ্রস্ত হতে হবে, যারা লোক দেখানো নামাজ পড়ে। (সূরা-মাউন, আয়াত-৪, পারা-৩০)। শেষ কথা : দুনিয়াদারী নিয়ে বেশি মেতে না থেকে যতটা সম্ভব পরকালের পাথেয় সংগ্রহের চেষ্টা করা প্রত্যেকেরই উচিৎ সর্বদা হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, লোভ-লালসা, হীনমন্যতা, তথা পাপ-পঙ্কিলতার ঊর্ধ্বে থেকে গরিব-দুখি নিঃসম্বল পরহেজগার মানুষের সেবা করার জন্য আমাদের এগিয়ে আসা উচিত। পবিত্র কোরআনে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে ‘‘যারা পার্থিব জীবনকেই (অর্থাৎ ধন-দৌলত, নাম কাম, আমোদ-প্রমোদ ইত্যাদি)কে বেশি গুরুত্ব দেয় নিশ্চয়ই (পরকালে) তাদের স্থায়ী অবস্থানস্থল হবে ভয়াবহ জাহান্নাম। (সূরা নাযিআত : আয়াত-৩৮, ৩৯ পারা-৩০)। মানুষ মাত্রই মরণশীল। আজরাইলের নির্মম হস্তের পরশ হতে কেউই নিষ্কৃতি পাবে না। মৃত্যুর পর সমাধিস্থ হওয়ার সময় অর্থ-সম্পদ, নাম কাম, বাড়িঘর, সন্তান-সন্ততি কেউ সাথে যাবে না, সাথে যাবে কেবলমাত্র আমলনামা। অতএব অনন্তবাসে যা সাথে যাবে না, যা কোনো কাজে লাগবে না এবং চরম দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তার জন্য কখনো মোহাবিষ্ট হওয়া কি উচিৎ? সকল প্রকার অপকাজ অপব্যয় বন্ধ করে সুন্দর স্বাভাবিক জীবনযাপন করে পবিত্র দ্বীন ইসলামের খেদমত করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, মৃত্যু ওঁৎপেতে আছে সন্দেহ নেই; কখন যে আমাদের ত্রই জীবনের যবনিকাপাত ঘটবে তা আল্লাহই জানেন। পরম করুনাময় আমাদের সহায় হোন ত্রবং প্রকৃত মুসলমান তথা খাঁটি বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন।
উত্তর দিচ্ছেন : গাজী মুহাম¥দ জাহাঙ্গীর আলম জাবির



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ