মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
রায়হান রাশেদ : আমাদের হৃদয়ের ভাষা মুখের ভাষা প্রকাশের ভাষা হলো বাংলা। বাংলা আমার মায়ের ভাষা। আমার দেশ ও মাটির ভাষা। বাংলায় কথা বলে আমরা মনে তৃপ্তি পাই। সুখ বিলাসের বারিধারায় সিক্ত হই। আত্মতৃপ্তি ও গর্বে মনটা দোলে উঠে। এই ভাষার সাথে আমাদের সম্পর্ক নাড়ির। খুব নিবিড়।
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ বাংলা ভাষা। পৃথিবীর ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যে ভাষা রক্ষায় মানুষের রক্ত কালো পিচঢালা কংক্রিটের পথকে রক্তিম করে ইতিহাসের পাতা রক্তাক্ত করে বিশ্ব দরবারকে থমকে দিয়েছে সে আমার গর্বিত বাংলা ভাষা। পৃথিবীর অধ্যায়ে একমাত্র বাঙালি জাতি মায়ের ভাষার জন্য তাজা খুন ঢেলে দিয়েছে। বুলেটের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে বুক। দানব বুলেটকে দেখিয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুল। মরণকে মেনে নিয়েছে হাসিমুখে। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে শ্লোগান তুলেছে মায়ের ভাষা রক্ষার। দৃঢ় শপথে বলিয়ান হয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে রাজপথে নেমেছে জীবন মরণ বাজি রেখে।
তখন ১৯৪৭ সাল। ২৭ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তনের করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে উর্দুকে পাকিস্তানের সাধারণ ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকার ছাত্র সমাজে জ্বলে উঠে আগুন। ১৯৪৭ সালে ৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল জনসভা। এতে বক্তব্য রাখেন আবুল কাসেম, মুনীর চৌধুরী ও প্রমুখ ছাত্র নেতা। সভায় তখন প্রবল উত্তেজনা। সবার চোখে-মুখে মাতৃভাষা রক্ষার অদম্য স্পৃহা। ছাত্রদের এ উত্তেজনা প্রকম্পিত করেছিল সেদিনের ঢাকার আকাশ বাতাস। সাহসী দুর্বার দামাল ছেলেরা রাষ্ট্রভাষা রক্ষার দাবি নিয়ে নেমে পড়ে রাজপথে। আন্দোলন চলতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ছাত্র জনতা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগান মুখে মিছিলে মেতে উঠে ঢাকার পথে। উত্তেজিত জনতার উপর পুলিশ বাহিনী চালায় গুলি। শহীদ হন সালাম রফিক জব্বর বরকত মশিউরসহ নাম না জানা অনেকে। তারা বিশ্ব বুকে বাংলাদেশকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছেন। তাদের প্রতি স্বশ্রদ্ধ সালাম।
কিন্তু বড় আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো- আজো আমরা কি মর্যাদা দিতে পারছি বাংলা ভাষার? ভাষার শুদ্ধ চর্চা কি হচ্ছে আমাদের মাঝে? আমরা কতটুকু চেষ্টা করছি বাংলা বানানের শুদ্ধতা নিয়ে? কতটুকু গুরুত্বের সাথে সন্তানদের শিক্ষা দিচ্ছি বাংলা ভাষা?
দেখা যায়, আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কলেজ ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পরও প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে বা শুদ্ধ বানানে লেখায় পারদর্শী হতে পারে না। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তিতে বানানের ভুল থাকে দেদার। শুধু কি তাই? না। আমাদের দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির নাম কিংবা তাদের পণ্যের প্রচার-প্রসারের জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রেও ভাষার মান বজায় রাখে না।
আমাদের বানান শিখতে যাওয়া সদ্য সন্তানেরা দ্বিধায় পড়ে যায় শুদ্ধ বানান নির্বাচন নিয়ে। একেক স্থানে একেক বানান দেখে তারা বিভ্রান্ত হয়। অনেক সময় অভিভাবকদের প্রশ্ন করেও সঠিক উত্তর পায় না।
আমরা চাই- রক্তে অর্জিত ভাষার এ মাসে শুদ্ধ ভাষা চর্চা হোক। অভিযান পরিচালনা হোক বানানের শুদ্ধতা রক্ষা ও চর্চার। নিষিদ্ধ করা হোক ভুল বানান ও ভিন্ন ভাষার ব্যবহার। প্রয়োজনে সরকারিভাবে নিযুক্ত করা হোক পর্যবেক্ষক বা প্রতিনিধি দল। বন্ধ করা হোক অশুদ্ধ বানানের সব আয়োজন।
ষ লেখক : শিক্ষার্থী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।