মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইফতেখার আহমেদ টিপু : বুড়িগঙ্গা নদী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। ৪০০ বছর আগে এই নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল ঢাকা শহর। ব্রহ্মপুত্র আর শীতলক্ষ্যার পানি এক ¯্রােতে মিশে বুড়িগঙ্গা নদীর সৃষ্টি হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটা ধলেশ্বরীর শাখাবিশেষ। কথিত আছে, গঙ্গা নদীর একটি ধারা প্রাচীনকালে ধলেশ্বরী হয়ে সোজা দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিশেছিল। পরে গঙ্গার সেই ধারাটির গতিপথ পরিবর্তন হলে গঙ্গার সাথে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে প্রাচীন গঙ্গা এই পথে প্রবাহিত হতো বলেই এমন নামকরণ। মূলত ধলেশ্বরী থেকে বুড়িগঙ্গার উৎপত্তি। কলাতিয়া এর উৎপত্তিস্থল। বর্তমানে উৎসমুখটি ভরাট হওয়ায় পুরনো কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না।
বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ করেছিলেন বাংলার সুবাদার মুকাররম খাঁ। তার শাসনামলে শহরের যে সকল অংশ নদীর তীরে অবস্থিত ছিল, সেখানে প্রতি রাতে আলোক সজ্জা করা হতো। এ ছাড়া নদীর বুকে অংসখ্য নৌকাতে জ্বলত ফানুস বাতি। তখন বুড়িগঙ্গার তীরে অপরূপ সৌন্দের্যের সৃষ্টি হতো। ১৮০০ সালে টেইলর বুড়িগঙ্গা নদী দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেনÑ বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে তখন দূর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো। তবে বুড়িগঙ্গার আগের ঐতিহ্য এখন আর নেই। কালের বিবর্তনে দখল হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গার নদীতীর।
বুড়িগঙ্গা এখন শুধু দেশেরই নয় দুনিয়ার অন্যতম দূষণাক্রান্ত নদী। এ নদীর পানি তার স্বাভাবিক রঙও হারিয়ে ফেলেছে দূষণের কারণে। বুড়িগঙ্গার দূষণ দেশের অন্যসব নদীর জন্যও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বুড়িগঙ্গার দূষণ অন্তত ছয়টি নদীর পানি দূষণে ভূমিকা রাখছে বলে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, আতঙ্কের।
এতে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীর বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অন্য ছয় নদীতে। বর্ষাকালে এই দূষিত পানি বিভিন্ন নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। সদরঘাটের অতি পরিচিত দূষণ এখন আর বুড়িগঙ্গাতে সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়ছে চাঁদপুর অঞ্চলের পদ্মা এবং মেঘনার মোহনাতেও। বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি দেশের বৃহৎ নদী পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, গোমতী, ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যায়ও দূষণ ছড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়াবহ এই দূষণ রোধ করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে এসব নদীর পানিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে। নদীপথে ঢাকা থেকে বরিশাল অঞ্চলে প্রতিদিন ৭ শতাধিক নিবন্ধিত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করছে। এসব যানে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মানুষ যাতায়াত করে। তাদের ত্যাগ করা কমপক্ষে তিন হাজার ঘনমিটার বর্জ্য প্রতিদিন বুড়িগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীতে সরাসরি ফেলা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গার পানি ইতোমধ্যে এতটাই বিষাক্ত হয়েছে যেÑ মাছ, পোকামাকড়সহ কোনো প্রাণীই এ পানিতে বেঁচে থাকতে পারছে না। প্রচ- দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে নাকে-মুখে রুমাল চেপে সদরঘাট ছাড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। শুধু মানব বর্জ্যই নয়, শিল্পকারখানার বর্জ্য, রাজধানীর ময়লা-আবর্জনা এবং নৌযানের সব ধরনের আবর্জনা নির্বিচারে বুড়িগঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা যেভাবে জলজ প্রাণীর জীবন ধারণের অযোগ্য হয়ে পড়েছে তা উদ্বেগজনক। এ নদীর পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয় নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। যে কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্যও তা হুমকি সৃষ্টি করছে।
নদীগর্ভে দোকানপাটসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে তখন তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিয়েই এ কাজে গতি ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ।
বুড়িগঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ঘিরে দখলের মহোৎসব চললে তা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। ফলে দখলমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দখলবাজদের বিরুদ্ধেও আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। বুড়িগঙ্গার এই বেহালদশা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বুড়িগঙ্গা উদ্ধার করে হাতিরঝিলের আদলে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ সঠিক সময়ে বাস্তবায়নের ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্টদের।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বর্জ্য অপসারণ এবং খনন কাজ করা হবে। মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গার অস্তিত্ব হুমকির মুখে এবং শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য প্রতিদিন বুড়িগঙ্গার পানিকে দূষিত করছে, যা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম তিন মাসের দখলমুক্ত করার কাজে যখন ট্রাক ও অর্থের অভাবের কথা জানা যাচ্ছে তখন দখলমুক্ত করাসহ গোটা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হওয়া অযৌক্তিক নয়।
আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বসহকারেই বিবেচনায় নেবে। সর্বোপরি বলতে চাই, কয়েক বছর ধরে ঢাকার আশপাশের নদ-নদী ও জলাশয়গুলো উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শুরুতে বেশ তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেলেও অজ্ঞাত কারণে কিছু দিন পরে তা থেমে যায়।
আবার এমনও ঘটেছে, উচ্ছেদ অভিযানের পরপরই আবার বেদখল হয়ে গেছে। এসব দিক আমলে নিয়েই সম্প্রতি শুরু হওয়া এই দখলমুক্ত অভিযান সফল করতে হবে। অভিযানটি যেন লোকদেখানো না হয়। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মহড়াও দেশবাসী আর দেখতে চায় না। বুড়িগঙ্গা নদী নির্দিষ্ট সময়ে দখলমুক্ত করতে যথাযথ উদ্যোগ জারি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
বুড়িগঙ্গার পানি দেশের অন্য সব নদীর পানি দূষণে ভূমিকা রাখায় সংশ্লিষ্ট নদীতীরের অধিবাসীরাও দূষণে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে নদীদূষণ রোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। নদীতে শিল্প বর্জ্য ও মানব বর্জ্য ফেলা বন্ধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।