মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইসমাইল হোসেন মুফিজী : মানুষ সামাজিক জীব। তাই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে থাকতে চায়। সমাজবদ্ধ জীবন মানেই কিছু রীতি-নীতি, প্রথা-রেওয়াজ ও সংস্কৃতির কড়া অনুসরণ। যেমন পোশাক পরা সমাজে রীতি হিসেবে কায়েম হয়ে গেছে। তাই আমরা উলঙ্গ মানুষকে সুস্থ মনে করি না। আদিম যুগের মানুষ পোশাক পরতে জানত না বলে তারা অসভ্য জাতি হিসেবে সমাজ বিজ্ঞানে পরিচিত ছিল। পোশাক পরে বলে মানুষ আজ সভ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আধুনিক মানুষগুলো দিন দিন খুব দ্রুত অন্ধকার যুগের দিকে আবারও ধাবিত হচ্ছে। প্রগতিবাদের নামে তারা আবারও যেন সেই নগ্নতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর জ্বলন্ত প্রমাণ সিনেমার সাম্প্রতিক বিলবোর্ডগুলো। যে কোনো মননশীল ব্যক্তির পক্ষে তা দেখে ঘেন্নায় থু থু আসতে বাধ্য। এসব চিত্রের মাত্রাতিরিক্ত ছড়াছড়ি দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষা, চরিত্র, মেধা নয় চামড়া ও মাংসপি-ই যেন সব কিছু।
দেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক আইন রয়েছে। ঐসব আইনের বইয়ে এখন হয়তো বই পোকাদের আজব বসবাস। অনন্য প্রগতিশীল (!) দেশ ব্রিটেনের মহিলা এমপি-মন্ত্রীদের দেখা যায় সর্ট স্কার্ট পরে মিডিয়ায় পোজ দেন। অথচ তাদেরও রয়েছে সিনেমার বিলবোর্ডে সতর্ক দৃষ্টি। গত ১২ অক্টোবর ২০১১ ‘দৈনিক আমাদের সময়’ পত্রিকার ৩ পৃষ্ঠায় ‘ব্রিটেনে অশ্লীল বিলবোর্ড নিষিদ্ধ’ শিরোনামে মাহফুজ কামাল একটি রিপোর্টে লিখেছেন, “ব্রিটেনে নিষিদ্ধ হচ্ছে অশ্লীল বিলবোর্ড। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য ব্রিটেনের রাস্তার পাশে ও মোড়ে দেখা যায় বাহারি বিলবোর্ড। আর ডিজিটাল বিলবোর্ডের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা অনেক। কিন্তু অনেক বিলবোর্ডেই অশ্লীল ভঙ্গি ও নগ্ন হয়ে পোজ দিয়ে থাকে মডেলরা। পণ্যকে ভোক্তার প্রতি আকর্ষণীয় করতে এ কৌশল বেছে নেয় বিজ্ঞাপন দাতারা। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্রিটেনের ‘মাদারস্ ইউনিয়ন’। তাদের প্রতিবাদের মুখেই ব্রিটেনের অ্যাডভারটাইজিং স্ট্যার্ন্ডাড অথরিটি (এএসএ) পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন আইন। মাদারস্ ইউনিয়নের অভিযোগ- অশ্লীল বিলবোর্ডের কারণে ব্রিটিশ শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে।” এটা একদিকে যেমন নারীর জন্য অসম্মানের তেমনি জাতীয় নৈতিকতা ধ্বংসের নিয়ামক শক্তি। এদিকে ভারতে উন্মূক্ত স্থানে সিনেমার অশ্লীল পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তান ফেসবুকে অশ্লীল চিত্র আপলোড করা নিষিদ্ধ করেছে।
শুধু সিনেমার বিলবোর্ড নয় আজকাল সাধারণ পণ্যের বিজ্ঞাপনেও দেখা যাচ্ছে অশ্লীল চিত্রের ব্যবহার। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখির অভাব নেই। কিন্তু এসবের প্রতি কারো যেনো নজর পড়ে না। শহর কিংবা গ্রামে আমরা দেখতে পাই বিলবোর্ড ঝুলে আছে যত্র তত্র। বিলবোর্ডে সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় হলো নারীর বিভিন্ন অঙ্গের সৌন্দর্য প্রদর্শন। কিছু কিছু জুয়েলারি, পার্লার ও ফ্যাশন হাউজগুলো শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও পাশে নারীর বক্ষের ঊর্ধ্বাংশ, পিট-পেট ও অশালীন অঙ্গ-ভঙ্গি প্রদর্শন করে বিলবোর্ড ঝুলিয়েছে। এটা খুবই দৃষ্টিকটু। এসব ছবি দেখে দেখে মানুষ দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে। যার জন্য একটা অস্বাভাবিক ও অশোভন কাজ করতে বিবেক বাধে না। এসবের ফলে, নারী ও শিশুদের প্রতি নির্মম যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন নেমে আসে। সমাজে কলুষতা ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটে। প্রসাধন সামগ্রীর বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে উপস্থাপিত বিষয়বস্তু দেখে মনে হয় পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য নারীর গায়ের রং ফর্সা থাকাটা বাঞ্ছনীয় এবং গায়ের রং ফর্সা নয় এমন মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়, যা নারীর মর্যাদাকে ক্ষুণœœ করছে।
মহান রাব্বুল আলামিন নারীদের প্রতি কত সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছেন সূরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে। তিনি বলেন, “তোমরা প্রাচীন অজ্ঞতার যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” অর্থাৎ- নিজের উজ্জ্বল অলংকারাদি, জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক ও অঙ্গ-সৌষ্ঠব দ্বারা নিজেকে অনন্য হৃদয়গ্রাহী করে বের হয়ো না।
“ঈমান, দ্বীন, ধর্ম এসবের দোহাই দিয়ে নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার কূট কৌশল বানের জলের মতো ভেসে গেছে। নারীকে বোরকা দিয়ে ঢেকে রাখার দিন আর কখনও ফিরে আসবে না। নারী এখন মুক্ত স্বাধীন।” এই হলো ভোগবাদী একজন লেখকের কথা। বস্তুত এই সমস্ত নারীবাজদের উদ্দেশ্য কী? তা সহজেই অনুমেয়। অর্থাৎ- তিনি যেন বলতে চাচ্ছেন, নারী এখন উন্মুক্ত, নারী এখন স্বাধীন। অথচ, আল কোরআনে এদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, “যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্যে আছে দুনিয়া ও আখেরাতে পীড়াদায়ক শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা যা জান না।” (সূরা নূর : ১৯)।
অবস্থার পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। শুধু ধর্ষক ও উত্ত্যক্তকারীদের শাস্তি দিলেই চলবে না বরং প্রচার মাধ্যমকে আইনের আওতায় এনে তাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। অনৈতিকতার মরণ ছোবল থেকে বাঁচাতে হবে দেশ ও জাতিকে। কোনো কোনো মুসলিম কান্ট্রিতে শুধু সিনেমা হলের সামনে বিলবোর্ড টানানো হয়। কিন্তু তাতেও কোনো অশ্লীল চিত্র প্রকাশ করা হয় না। আমরাও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্যে এমন একটি আইন চাই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ষ লেখক : প্রভাষক, মাথিয়া ই. ইউ. ফাযিল মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।