পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : দেশের সবচাইতে বড় বাজেটের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে চলেছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে। জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন (আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল) কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তারা বিনিয়োগ করছে ৪১ হাজার কোটি টাকা। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ি-ধলঘাটা, সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গা, কুতুবজোম, হোয়ানক ও কালারমারছরা মিলে কক্সবাজারের মহেশখালী হতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম উন্নত একটি শহর।
সাগরের ভাঙন রোধে টেকসই বেড়িবাঁধ, পরিকল্পিত হাউজিং, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভাট নির্মিত হবে। এ সবই হচ্ছে একটি কারণে আর তা হলো এখানে হচ্ছে ৪১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও পিডিবির তত্ত¡াবধানে হোয়ানক-কালামারছরায় প্রায় ২ (দুই) হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে
আরো ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। স্থাপিত হচ্ছে ৭টি অর্থনৈতিক জোন। এ সুবাদে কক্সবাজারের, রামু,্ উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া ও কুতুবদিয়াসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে ভারী ও মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। বর্তমানের পর্যটনের পাশপাশি এই প্রকল্পের সুবাদে বদলে যাবে দেশের দ্বীপাঞ্চল মহেশখালী-কুতুবদিয়ার শিক্ষা-চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অর্থনীতির অবস্থা। সৃষ্টি হবে বিশ^ পর্যটনের অবারিত সম্ভাবনা।
মাতারবাড়িÑধলঘাটা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানাগেছে ওই এলাকার মানুষের অবস্থান পরিবর্তনের কথা। সরকার মহেশখালীর ওই এলাকায় এত বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করায় এলাকার মানুষ বেজায় খুশী। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে ধন্যবাদ ও তাদের জন্য মনভরে দোয়াও করছেন এলাকাবাসী।
এলাকার অধিবাসী অনেকেই জানান, এই সুবাদে এখানে হবে টেকসই বেড়ীবাঁধ। টেকসই বেড়ীবাঁধ না থাকায় ৯১সাল ছাড়াও বারবার জলোচ্ছাসে এলাকার যা ক্ষতি হয়েছে তা থেকে তারা রক্ষা পাবে। সাগরের সাথে আর যুদ্ধ করে বাঁচতে হবে না তাদের। অনেকে বলেন, এখানে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এতে কর্মসংস্থান হবে হাজার হাজার মানুষের। অনেকে বলেন, মাতারবাড়ি থেকে একজন রুগী চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার-চট্টগ্রাম নিতে যা কষ্ট আর সময় লাগে তা আর থাকবে না।
২০১৪ সালের ১২ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলেছে। এটি উৎপাদনে গেলে দেশের প্রায় ১১ শতাংশ জনগোষ্ঠী নতুন করে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানাগেছে, জাপানের মারুবিনি করপোরেশন ও সুমিতম করপোরেশন মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে দরপত্র জমা দিয়েছিল। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় জাপানী নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনায় জাপান এ প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হয়ে আবার মূল কাজে তারা ফিরে এসেছে বলে জানাগেছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জাপানীদের মূল কাজে ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, মহেশখালীতে তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ীর ৪১ হাজার কোটি টাকার সবচাইতে বড় প্রকল্প।
এজন্য ১ হাজার ৪১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে তিন ধাপে কাজ চলছে, ভূমি অধীগ্রহণ ও ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী এক মাস পরে এর তৃতীয় ধাপ অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে। তিনি অরো বলেন, এছাড়াও মহেশখালীতে হবে ৭টি অর্থনৈতিক জোন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, শুধু মহেশখালী দ্বীপে ৭টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। দ্বীপের ঘটিভাঙা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটা নিয়ে ১৫ হাজার ৮৭২ একর জেগে উঠা চরের জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে এই অর্থনৈতিক জোন। মহেশখালী ছাড়াও টেকনাফের সাবরাং ও নাফ নদীর বুকের জালিয়ারদিয়ায় ১ হাজার ৩০০ একর জমি নিয়ে আরো দুটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও পিডিবির তত্ত¡াবধানে মহেশখালীর হোয়ানক-কালারমারছরা ইউনিয়নে আরো ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। সূত্রমতে এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ (দুই) হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের জন্য মহেশখালী মাতারবাড়ি-ধলঘাটা ও হোয়ানক-কালারমারছরা ইউনিয়ন এলাকার সাড়ে ছয় হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় মহেশখালী মাতারবাড়িসহ গোটা উপক‚লীয় এলাকায় এখন জমির মূল্য বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
ওই এলাকা পরির্দশণকালে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ লক্ষে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাÐ পরিচালনা করছে। বিশেষ করে মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাট ও সোনাদিয়াকে কেন্দ্র করে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মহেশখালীর রাস্তা-ঘাট, বেড়ীবাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সার্বিক উন্নয়নের পাশপাশি মহেশালী একটি মেগা সিটিতে পরিনত হবে। উন্মোচিত হবে পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
মহেশখালীর অধিবাসী কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জমিয়াতুল মোদারের্ছীন নেতা প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা জাফর উল্লাহ নূরী এ প্রসঙ্গে বলেন, এটা মহেশখালীসহ গোটা কক্সবাজারবাসীর জন্য খুশীর খবর। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তবে এজন্য পরিবেশ রক্ষা ও অধিবাসীদের সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে নজর রাখারও দাবি জানান তিনি।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে মহেশখালীর মাতাবাড়ি-ধলঘাট, হোয়ানক ও কালারমারছরা হবে বিশ্বের অন্যতম উন্নত একটি শহর।
এই প্রকল্প প্রসঙ্গে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘অর্থমূল্যের দিক থেকে দেশে এটাই সর্ববৃহৎ প্রকল্প যা আমরা অনুমোদন দিতে পেরেছি। এই প্রকল্প আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, এর ফলে প্রকল্পে ব্যবহৃত কয়লা ও ধোঁয়া দেখা যাবে না। তাই পরিবেশের উপর কোন বিরুপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নাই’।
প্রকল্পটি সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে এখানে আরও পাওয়ার প্ল্যান্ট করা হবে। এলএনজি টার্মিনাল হবে। মহেশখালীকে একটি পূর্ণাঙ্গ টাউনশিপ করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর, এনভায়রনমেন্টাল ইমপেক্ট অ্যাসেসমেন্ট সার্টিফিকেট দেয়ায় এর পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নেই। তাই এই ক্রকল্পকে ঘিরে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা অবান্তর। এই প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে আগে নানা ধরণের আশঙ্কা থাকলেও এখন তা কেটে যাচ্ছে।
তবে ক্ষতি পূরণের টাকা বিতরণে গড়িমসি ও অনিয়মের কারণে ভোগান্তি হয়েছে অনেকের। সাবেক জেলা প্রশাসক রূহুল আমিনের সময় ২৫ কোটি টাকার অনিয়মের খবর রয়েছে। এনিয়ে ওই সময় জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ভোগান্তি এখনো কমছে না বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।