পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় মগবাজার-মালিবাগ কম্বাইন্ড ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পে আবারও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি- একনেকে ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে নতুন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। একই সাথে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। ২০১১ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৩ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও এর আগে ২ দফা সময় বাড়ানো হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৮৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি জানান। এ সময় তিনি বলেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের আয়তন বেড়েছে। প্রকল্পটি সম্প্রসারিত হয়েছে, এর নতুন নতুন অঙ্গ সংযোজিত হয়েছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন ইউটিলিটি থাকার কারণে পিলার তৈরি করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। যে কারণে এর ব্যয় ও সময় বেড়েছে। এখন যে ফ্লাইওভার করা হচ্ছে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মাথায় রেখে করা হচ্ছে।
জানা যায়, বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘মগবাজার-মৌচাক কম্বাইন্ড ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এ সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে সংশোধিত ডিপিপিতে প্রথম দফায় সময় বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে আরেক দফা সময় বাড়িয়ে করা হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু সময় মতো কাজ শেষ হওয়া তো দূরের কথা, কবে শেষ হবে তা বলতে পারছে না কেউ। বর্তমানে প্রকল্পটি যেন পথহারা হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্মাণ কাজের শুরুতে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সউদী ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট হতে আর্থিক সহায়তায় ৫৭২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ও সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বিনিয়োগ করে।
তবে প্রকল্প গ্রহণের প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সদ্য সমাপ্ত ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৮২ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৫০ শতাংশ।
কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতার নিরিখে পাইল সংখ্যা, লেনথ ও ক্যাপ এর সাইজ বৃদ্ধি, ফাউন্ডেশন এর কাস্টম ডিজাইন করা, ভূমিকম্প সহনীয় করার জন্য ফ্লাইওভারে পট বেয়ারিং এবং সক ট্রান্সমিশন ইউনিট (এসটিইউ) সংযোজন, র্যাম এর প্রান্ত সীমা তেজগাঁও পান্থপথ লিংক রোড এফডিসি গেইট এর পরিবর্তে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত ফ্লাইওভারের র্যাম সম্প্রসারণ, পরামর্শক সেবার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্প সাহায্য বৃদ্ধি, বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটির ব্যয় ১ হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার বেশ কিছু সুপারিশ প্রতিপালন করা হলে একনেক অনুমোদনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার মগবাজার-মৌচাক-সাতরাস্তা রোড এলাকায় যানজট হ্রাস পাবে, ভ্রমণ সময় কমবে, যা সার্বিকভাবে ঢাকা মহানগরীর বাসযোগ্য পরিবেশকে উন্নত করবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
সূত্র জানায়, ‘মগবাজার-মৌচাক কম্বাইন্ড ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প’ ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি হচ্ছে ৩ লেন বিশিষ্ট। ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ৮টি পথ থাকবে। এতে ফ্লাইওভার থেকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করা যাবে। প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে এলজিআরডি প্যাকেজ-৪ (সাতরাস্তা থেকে মগবাজার হয়ে রমনা পর্যন্ত ২ দশমিক ১ কিলোমিটার ও প্যাকেজ-৬ (ইস্কাটন থেকে মগবাজার হয়ে মৌচাক ২ দশমিক ২ কিলোমিটার)। আর দেশীয় কোম্পানি তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেড তৃতীয় প্যাকেজটি (প্যাকেজ-৫ মালিবাগ চৌধুরীপাড়া হতে রাজারবাগ এবং শান্তিনগর) বাস্তবায়ন করছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া ফার্ম এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল এবং এর তিন স্থানীয় সহযোগী সংস্থা- এসিই কনসালটেন্সেস লিমিটেড, এসএআরএম এসোসিয়েটস লিমিটেড এবং ক্রান্টি এসোসিয়েস লিমিটেড প্রকল্পে পরামর্শক ফার্ম হিসেবে কাজ করছে।
তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামেলি হাসপাতাল পর্যন্ত চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফ্লাইওভারের বাকি দুটি অংশ আগামী অক্টোবরের মধ্যেই চালু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, কাজ শুরুর আগে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যাপক ভিত্তিতে আলোচনা না করায় অনেক ত্রুটি থেকে যাওয়াতেই এখন এই সংশোধনী আনতে হচ্ছে।
গতকারের একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঢাকা মহানগরীতে ফ্লাইওভার ব্রিজ নির্মাণ (মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত) ফ্লাইওভার নির্মাণ, বাস্তবায়নে ব্যয় এক হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা; বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, রংপুর জোন, বাস্তবায়নে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৩৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা; বাংলাদেশের নদীবক্ষের বালিতে মূল্যবান খনিজের উপস্থিতি নির্ণয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; এলইডি লাইট (সিকেডি) অ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট ইন ইটিএল, ব্যয় হবে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা; সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণের জন্য সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত), ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা; নীলফামারী-জলঢাকা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা; ইস্টাবলিস্টমেন্ট অব শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড ৫০০ বেডেড মেডিকেল কলেজ হসপিটাল অ্যাট সিরাজগঞ্জ, বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; মান্দা শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন, ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা টাকা; ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সহায়তা (দ্বিতীয় পর্যায়), ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ১০ টাকা এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প, ব্যয় হবে এক হাজার ১৯৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।