পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে গত চার বছরে দেশে ও বিদেশে মিলে প্রায় এক কোটি ৩৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা অতীতে কখনো হয়নি। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে সিরাজুল ইসলাম মোল্লার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। দেশের উন্নয়নের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ। বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভাগ্য নিজেই তৈরি করে নেবেন। নিজের সন্তানদের বিষয়ে তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ তারা নিজেরাই ঠিক করবে। এ দায়িত্ব তাদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জয়’ একটি শব্দ, ‘বাংলা’ আরেকটি শব্দ। দুটো মিলেই কিন্তু ‘জয় বাংলা’। জয় বাংলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। জয় বাংলা এবং জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়েই আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটাই ছিল আমাদের কাছে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী স্লোগান। কাজেই এই শব্দটাকে ভাগ করার উপায় নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। তাদের একটি কথা বলেছিÑতোমাদের কোনো সম্পদ দিতে পারব না। তোমাদের একটি বড় সম্পদ যত পার শিক্ষা গ্রহণ কর। ওটাই তোমাদের জীবন-জীবিকা তৈরি করে দেবে। আর তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ তারা নিজেরাই ঠিক করবে। এ দায়িত্ব তাদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি। কাজেই জয় ভবিষ্যতে কী করবে, এটা সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করে। সে (জয়) কিন্তু আমাদের সহযোগিতা করছে। আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করছি সেখানে ডিজিটাল শব্দটি থেকে শুরু করে যতটুকু অর্জন তার পরামর্শমতেই হচ্ছে। সে (জয়) জনগণের সেবা ও সাহায্য করছে। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় বা নিতে আসেনি। সে যতটুকু পারছে দিচ্ছে। জয় বাংলা স্লোগানের প্রেরণাই তাকে উদ্দীপ্ত করছে দেশের সেবা করতে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এ যাবৎ আবিষ্কৃত ২৬টি ফিল্ডে গ্যাসের মজুদ ২৭ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৪৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হয়েছে। ফলে উত্তোলনযোগ্য অবশিষ্ট নীল গ্যাস মজুদের পরিমাণ মাত্র ১৩ দশমিক ৬৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
নজিবুল বশর মাইজভা-ারির এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীতে লোকবল নিয়োগের নীতিমালা মেনে ‘জামায়াত-শিবিরের লোক পুলিশ বাহিনীতে ঢোকার ব্যাপারে’ পুলিশ কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে। এখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না। কিন্তু এটা দেখা উচিত যারা এই ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে লিপ্ত তারা যেন একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীতে আসতে না পারে। এটা দেখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। আমি আশা করি, এটা তারা (পুলিশ) দেখবে।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্যকে বলতে চাই, নিজ নিজ এলাকায় যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত ছিল তারা (সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িতরা) পুলিশ বাহিনীতে ঢুকে থাকে, সে খবর আমি মনে করি গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দিলে নিশ্চয়ই তারা (গোয়েন্দা সংস্থা) সে বিষয়টা যাচাই করে দেখবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশে জনসংখ্যা গ্রহণের একটা নীতিমালা আছে। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩-১৪ নির্বাচন ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবং তারপর ২০১৫ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তারা যে একের পর এক মানুষ হত্যা করা, বাসে-গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, সিএনজি, প্রাইভেটকার এমনকি রিকশা-অটোরিকশা তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।
তিনি বলেন, সেইসাথে পুলিশও কিন্তু রেহাই পায়নি। পুলিশকেও কিন্তু তারা মেরেছে, পুড়িয়েছে। আগুন দিয়ে তাদেরকে (পুলিশ) মারার চেষ্টা করেছে। অনেকেই জ্বালিয়ে দিয়েছে, হত্যা করেছে। পুলিশকেও তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই পুলিশ বাহিনী যখন লোক নিয়োগ করবে, আমি মনে করি, তাদের (পুলিশ কর্মকর্তা) এই কথাগুলো স্মরণে থাকা উচিত যে, এই জামায়াত-বিএনপি তাদের (পুলিশ) ওপর কী অত্যাচার করেছে। প্রায় ১৮-১৯ জনের মতো পুলিশকে হত্যা করেছে। সেই জামায়াত-শিবিরের লোক এই পুলিশ বাহিনীতে ঢোকার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, এটাই আমি আশা করি।
আবুল কালাম আজাদের এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা মহানগরের নিরাপত্তা জোরদারে নতুন সৃষ্ট ১৩ হাজার ৮৮৮টি পদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জন্য ৭ হাজার ১৩৯টি পদ সৃজন করা হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে নতুন ৫০ হাজার পদ সৃজনের বিষয়ে গত ১১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিটের জন্যে ১৩ হাজার ৮৮৮টি পদ সৃজন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে বাকি পদ সৃজন করা হবে। এ সকল পদের বিপরীতে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরুর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার, ভারত, চীন এবং বাংলাদেশের মধ্য একটা ইকনোমিক করিডোর অর্থাৎ অর্থনীতি সম্প্রসার, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া কুনমিংয়ে আমরা এখান থেকে প্লেনে অনবরত যাওয়া-আসা করি। সড়কপথে যোগাযোগ করার আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ঢাকা হয়ে কক্সবাজার গোধূলি পর্যন্ত রেললাইন করছি। রেললাইনের সম্প্রসারণটা মিয়ানমার, ভারত হয়ে কুনমিং পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় কি না সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চল একটু অসুবিধা আছে, তারপরও আমাদের সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সড়ক, রেল, আকাশপথ প্রতিক্ষেত্রেই যেন যোগাযোগটা হয় সেজন্যই কিন্তু আমরা বিসিআইইসি করা এবং বাস্তবায়ন করে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নিয়েছি।
অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তিনি হঠাৎ বললেন পুরুষের অধিকারের জন্য কিছু করা হবে কি না! উনার ঘরে, উনি যে উনার বউকে এত ভয় পান সেটা তো আমরা জানি না! ভাগ্য ভালো উনি ভয়ে পুলিশের পাহারার কথা বলেন নাই। পৃথিবীকে কেউ আসলে বদলাতে পারে? জীবন বদলাতে পারে। ঘরে আপনি চ্যানেল বদলাতে পারেন না, ঘরে তো একটা সমঝোতা করে নিতে পারেন। কে কখন কতটুকু দেখবে, যদিও আপনি ঘরের পতœীর সঙ্গে বসে একটা সমঝোতা করে নেন তাহলে কিন্তু আর চ্যানেল বদলানো নিয়ে কোন সমস্যা হয় না। শান্তিপূর্ণভাবেই আপনি করতে পারেন। এখানে সমঝোতাটাই একটা বড় বিষয়।
চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ৯টি দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। আরও অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সময়ের অভাবে যেতে পারিনি।
মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশে নিয়ে যাবেন না, তুলবেন না এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে। সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট’-এ গিয়েছিলাম। ওই হাসপাতালে সর্বস্তরের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং স্বনামধন্য চিকিৎসকদের সমন্বয়ে উন্নততর চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিশেষায়িত এ হাসপাতালে সর্বস্তরের জনগণ যাতে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা পায়, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে আমি সেদিন ঘোষণা করেছিলাম, আমি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশে নিয়ে যাবেন না, তুলবেন না এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।