পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবাধে কৃষি জমির টপ সয়েল (জমির উপরি ভাগের উর্বরা অংশ) কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। তাছাড়া বসতভিটা ও পুকুর ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মাটি। ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির দালাল ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে উজাড় করছে। ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন ও ফসল বৈচিত্র্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার রায়পুর, বটতলী, বারশত, বরুমছড়া, জুঁইদন্ডী, হাইলধর ও চাতরী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বরা অংশ কেটে ট্রাক-ট্রলি করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর এসব মাটি যাচ্ছে বটতলী গ্রামের পরীরবিলে স্থাপিত দুই ইটভাটায়। তাছাড়া বসতভিটা ও পুকুর ভরাট কাজেও এঁটেল মাটির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটি কাটার গভীরতার পরিমাণ ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে কোথাও কোথাও অর্থনৈতিক ও অনৈতিক আগ্রাসনে পার্শ্ববর্তী মালিকের জমিও নষ্ট হচ্ছে।
কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় যে কোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশেই যে কোনো ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসলটি প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। এই অংশটি একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। এমনকি ওই জমিতে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কোনো ফসল বেড়ে উঠবে না। এতে জমিটি পরিত্যক্তই হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, এবারের শুকনো মৌসুমের শুরুতে আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন টপ সয়েল বিক্রি রোধে বটতলী পরীর বিলের দুই ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মাসখানেক পর গত ২৮ জানুয়ারি ফের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে মাটি কাটার সরঞ্জাম জব্দসহ অর্ধ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় করেন। তারপরেও কিছুতেই থামছে না মাটি ব্যবসায়ী দুর্বৃত্তদের অপতৎপরতা। ইটভাটা ও বসতভিটায় টপ সয়েলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের (জমির মালিক) বিভিন্ন কৌশলে প্রলুব্ধ করে সামান্য অর্থের বিনিময়ে তা উজাড় করছে। ফলে কৃষকরা ধরে রাখতে পারছেন না তাদের জমির স্বাভাবিক ফলন।
জানা যায়, কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন জৈব উপাদানের ব্যাপক ঘাটতি হচ্ছে। অন্যদিকে চলাচলে নিষেধ থাকলেও মাটি ভর্তি ভারি ট্রাক, ড্রাম, ট্রাক ও ট্রলি চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইটভাটার তত্ত্ববধায়ক জানান, মাটি ব্যবসায়ীরা তাদের ইটভাটার মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাটা মালিকরা কেউ টপ সয়েল কাটায় সরাসরি জড়িত নয়।
মালঘর বাজার এলাকায় মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আবদুল হামিদ (৩৬) বলেন, দিনমজুর হিসেবে কাজ করে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পায়। মাটি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাজে নিয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. একরাম উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণ কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষি সম্পদের সর্বনাশ করছে। এ ব্যাপারে মাঠ পরিদর্শন করে শিগগির কৃষকদের বুঝানোর চেষ্টা করা হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গৌতম বাড়ৈ ইনকিলাবকে জানান, মাটি কাটার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দুই দফা অভিযান চালানো হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।