Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরে কয়েক হাজার টন সার নষ্ট হচ্ছে

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পাবনা জেলা সংবাদদাতা : উত্তরাঞ্চলের বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী নৌবন্দর এলাকায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশ থেকে আমদানী করা হাজার হাজার টন রাসায়নিক সার আকাশের নিচে স্তূপ হয়ে আছে। বুনন মওসুমে প্রতিবছর স্তূপের পাহাড় গড়ে উঠে। মাসের পর মাস আকাশের নিচে পড়ে থাকায় এই সারের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষমতা হ্রাস পায়। দেশি বিদেশি সার প্রতি বস্তায় ২ থেকে ৩ কেজি ওজনে কম পাওয়া যাচ্ছে। এই সার কিনে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে বলে ডিলাররা অভিযোগ করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, বিসিআইসি আমদানীকারকদের মাধ্যমে চীন, মিশর, সউদি আরব, তিউনিশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি ও টিএসপি সার আমদানি করে। পরে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে ওই সার বাফার গুদামে পৌঁছে দেয়া হয়। সমুদ্র পথে বড় জাহাজে সার আমদানি করা হয়। পরে সার বহনকারী কার্গো জাহাজে সার আনলোড করে বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী বন্দরে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে সড়ক পথে সার মজুদের জন্য উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে পাঠানো হয়। বাফার গুদামগুলোতে জায়গা না থাকায় বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর উত্তর-দক্ষিণ পাড়ে এবং নগরবাড়ীতে যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সারের বস্তা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকিয়ে শক্ত ও জমাট বেঁধে সার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বন্দরের ট্রান্সপোর্ট এজেন্ট ও বিসিআইসি’র বাঘাবাড়ি বাফার গুদাম সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের পাবনাÑসিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী, বগুড়া, শান্তাহার, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নাটোর, রংপুর, লালমনিহাটের মহেন্দ্রনগর, দিনাজপুর, পার্বতীপুর চরকাট, ঠাকুরগাঁ, বিরামপুর ও গাইবান্ধায় বাফার গুদাম রয়েছে। গত বছরের সারে বাফার গুদামগুলো ভরা রয়েছে। ফলে বন্দরে যে পরিমাণ সার আসছে, তা বন্দর এলাকাতেই পড়ে থাকছে। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা সারের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে, ঝাঁঝালো গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।
প্রায় ছয় আগে বুনন মওসুমকে সামনে রেখে হাজার হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার নদী কুলবর্তী ভেজা ও স্যাঁৎসেঁতে মাটিতে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টি ও কুয়াশাতে ভিজে রোদে পুড়ে এই সারের মাটির উর্বরতা বাড়ানোর শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। বাঘাবাড়ী বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলছে। বাঘাবাড়ীর বড়াল নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার টন সারের বড় বড় স্তুপ পড়ে আছে। বাতাসে এখন শুধু সারের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। আশপাশের এলাকায় এই গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। সারের ঝাঁঝালো গন্ধে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে। চোখ জালা পোড়া করছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম নৌবন্দর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার টন রাসায়নিক সার বোঝাই ১০টি কার্গো জাহাজ বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী নৌবন্দরে এসে নোঙর করেছে। অনেক জাহাজ আনলোডের অপেক্ষায় রয়েছে। নিয়মানুযায়ী জাহাজ বন্দরে পৌঁছার পর আনলোড করে সার ট্রাকযোগে বাফার গুদামগুলোতে পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু গুদামগুলোতে জায়গা না থাকায় এই সার মাসের পর মাস বন্দরেই পড়ে থাকছে।
বাঘাবাড়ী বন্দরে নোঙর করা এমভি জব্বার কার্গো জাহাজের চালক আলী নূর সাংবাদিকদের জানান, ‘চট্রগ্রম বন্দর থেকে আট হাজার বস্তা সার নিয়ে এসে ছয়দিন ধরে বাঘাবাড়ী বন্দরে নোঙর করে আছি’। সার পরিবহন ঠিকাদাররা বলছেন, ‘খুব শিগগিরই জাহাজ থেকে সার আনলোড করা হবে’। অথচ বাফার গুদামে পাঠাতে না পারার কারণে দিনের পর দিন এভাবে বসে থাকতে হচ্ছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের বিসিআইসি’র ডিলারদের যথাসময়ে সার উত্তোলনে অনীহা রয়েছে বলে সংশিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
কয়েকজন সারের ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেক দিন ধরে সারের বস্তা বাইরে পড়ে থাকায় জমাট, শক্ত সার কৃষকরা নিতে চান না। কৃষকরা দেশি সারের প্রতি বেশি আগ্রহী। অথচ দেশি সার না দিয়ে চীন থেকে আমদানি করা সার দেয়া হচ্ছে। তবে ডিলাররা বলছেন, বাফার গুদামের সার জমাট বাধা এবং বস্তার ওজন কম থাকার কারণে তারা সার উত্তোলন করতে পারছেন না। এছাড়া প্রতি বস্তায় সার ২ থেকে ৩ কেজি করে ওজনে কম পাওয়া যায়। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা সারের বস্তার ওজনে বেশি কম। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখার দাবি জানানো হয়েছে।
নগরবাড়ী বন্দরের লোড-আনলোড লেবার সরদার ইসহাক আলী শেখ জানান, ‘নগরবাড়ীতে বাফারগুদাম না থাকার কারণে জাহাজ থেকে সার আনলোড করে যমুনা নদীর তীরে খোলা আকাশের নিচে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, মাসের পর মাস সারগুলো খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। এর তীব্র ঝাঁঝে চলাফেরা দুস্কর হয়ে পড়েছে। সংশিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী বন্দরসহ এ অঞ্চলের ১৪ টি বাফার গুদামে প্রায় এক লাখ টন রাসায়নিক সার মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে চায়না থেকে আমদানিকৃত সার রয়েছে। এই সারের গুণগতমান বাংলাদেশের কাফকো ও যমুনা সারের চেয়ে অনেক নিন্মমানের বলে দাবি করা হয়েছে। এই নিন্মমানের সার সরবরাহের ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর আমদানিকারক, বাফার গুদাম ইনচার্জরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাঘাবাড়ী বাফার গুদাম ইনচার্জ সুদের বাবু এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশে উৎপাদিত কাফকো ও যমুনার ইউরিয়া সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চায়না থেকে আমদানি করা জমাট বাঁধা ইউরিয়া সারের চাহিদা কম। কারণ এই সারের গুনগত মান নিয়ে কৃষকেরা শংকিত। তিনি আরও বলেন, শংকিত হওয়ার কিছু নেই আর্দ্রতার কারণে ইউরিয়া সার জমাট বেঁধে গেছে। রাসায়নিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছিল। ল্যাব পরীক্ষায় জানানো হয়েছে সারের গুণগত মান ঠিক আছে বলে তিনি দাবি করেছেন। অপর এক সূত্র জানায়, বুনন মওসুমের আগে বিপুল পরিমান সার আমাদানী করা হয়। এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে, জমাট সার আবার গুড়ো করে বস্তা রি-প্যাক করে কৃষকের পৌঁছে দেয়। উৎপাদন ক্ষমতা কম সার কৃষক জমিদে প্রয়োগ করে আশাতিত ফলন পান না। কোন কোন জমিতে ফলন বিপর্যয় ঘটে । অভিজ্ঞ মহল বলছেন, দেশে উৎপাদিত ইউরিয়া সার চাহিদা মাফিক থাকলে আমদানী করার কোন প্রয়োজন নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরে কয়েক হাজার টন সার নষ্ট হচ্ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ